Advertisment

স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে মিজোরামের সৈনিক স্কুলের মহিলা ব্রিগেড

দেশের মধ্যে ২৬ তম ও উত্তর-পূর্বের চতুর্থ সৈনিক স্কুল মিজোরামের চিংচিপ। সৈনিক স্কুলে ছাত্রীদের পঠনপাঠনের জন্য পাইলট স্কুল হিসেবে বাছাই করা হয়েছে ওই সৈনিক স্কুলকে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
sainik school, সৈনিক স্কুল

সৈনিক স্কুলের সেই ৬ খুদে ছাত্রী। ছবি: তোরা আগরওয়ালা, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

এঁদের কেউ চান বড় হয়ে এয়ার চিফ মার্শাল হতে। আবার কেউ চান দেশকে রক্ষা করতে। কেউ আবার মানুষের পাশে দাঁড়াতে চান। আর এই ব্রত নিয়েই খাকি পোশাক পরে রোজ একটু একটু করে পাঠ নিচ্ছে ওরা। আর চার-পাঁচটা স্কুল পড়ুয়ার মতো ওরা একেবারেই নয়। বাবা-মায়ের থেকে তো দূরে থাকতেই হয়। তাছাড়া শৃঙ্খলার বেড়াজালে বন্দি ওরা। দলে ওরা মোটে ৬ জন। তাও ১৫৪ জন ছাত্রের সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে ওরা ক্লাস করছে হইহই করে। ওরা মিজোরামের চিংচিপ সৈনিক স্কুলের ৬ কিশোরী।

Advertisment

দেশের মধ্যে ২৬ তম ও উত্তর-পূর্বের চতুর্থ সৈনিক স্কুল মিজোরামের চিংচিপ। সৈনিক স্কুলে ছাত্রীদের পঠনপাঠনের জন্য পাইলট স্কুল হিসেবে বাছাই করা হয়েছে ওই সৈনিক স্কুলকে। আর সেই স্কুলেই ঢুঁ মেরে ৬ জন খুদে ছাত্রীর সঙ্গে আলাপচারিতা সারল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

আরও পড়ুন, এক খুদে বিজ্ঞানীর কাহিনী, যা পড়লে চমকে যাবেন

বাবা সেনাবাহিনীতে কাজ করেন, হাবিলদার পদে। তার বয়স যখন ৬, তখন থেকেই সে বাবার টুপি পরে, লাঠি হাতে নিয়ে আইজলে তার পড়শি এলাকায় হেঁটে বেড়াত। বাবার মতোই সে হতে চেয়েছিল। সেনা অফিসার হতে চেয়েছিল। কিন্তু তাকে বলা হত, এ কাজটা ছেলেদের জন্য। গত বছরের নভেম্বরের কথা, হোয়াটস অ্যাপে একটা মেসেজ মারফৎ তার মা জানতে পারলেন যে, এবার থেকে সৈনিক স্কুলে মেয়েদেরও পড়াশোনা করানো যাবে। তারপর থেকেই স্বপ্নপূরণের দৌড়ে শামিল হল জোনানপুই। পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে শেষমেশ সৈনিক স্কুলের ক্লাসে বসল জোনানপুই।

শুধু জোনানপুই নয়, জুরিসা চাকমা, মালসামথারি খিয়াংটে, আলিসিয়া লালমুয়ানপুই, লালহিংহুলুই ল্যালিয়ানজুয়ালা ও এলিজাবেথ মালসোয়ামতুলুঙ্গিও ছাত্রদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সৈনিক স্কুলে পড়াশোনা করছে। এই ৬ ছাত্রীই দেশের সৈনিক স্কুলের প্রথম সামরিক শিক্ষার্থী।

মহারাষ্ট্রের সাতারায় ১৯৬১ সালে প্রথম সৈনিক স্কুল তৈরি করে সরকার। তবে সেখানে ছেলেদেরই শুধুমাত্র পঠনপাঠন করানো হত। চলতি বছরের এপ্রিলে লখনউয়ের স্কুলের নবম শ্রেণিতে ১৭জন ছাত্রীকে ভর্তি করানো হয়। সম্প্রতি, হরিয়ানায় অল ইন্ডিয়া সৈনিক স্কুল প্রিন্সিপালস কনফারেন্স হয়। যেখানে প্রতিরক্ষা দফতরের প্রতিমন্ত্রী সুভাষ ভামরে বলেছেন যে, সৈনিক স্কুলে মেয়েদের পঠনপাঠনের সিদ্ধান্ত ঐতিহাসিক।

sainik school, সৈনিক স্কুল

ছাত্রদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়েই ক্লাস করছে ছাত্রীরা। ছবি: তোরা আগরওয়ালা, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

আরও পড়ুন, ইন্দোনেশিয়ার বিপর্যস্ত বিমানের পাইলট ভারতীয়

এদিকে, সৈনিক স্কুলে ভর্তির জন্য বিজ্ঞাপন দিয়েছিল স্কুল কর্তৃপক্ষ। মাইকে করে ঘোষণাও করা হয়েছিল। যার সুবাদে ৩১ জন ছাত্রীর আবেদন পেয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। এরপর প্রবেশিকা পরীক্ষাও হয়। তারপরই ওই ৬ জন ছাত্রীকে বাছাই করা হয়েছে। এদের পড়াশোনার জন্য রয়েছেন ৭ জন শিক্ষক। স্কুলে নিরাপত্তার দিকটিকেও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। স্কুলে ছাত্রী নিবাসের সামনে শীঘ্রই সিসিটিভি বসানো হবে বলে জানানো হয়েছে।

বাবা-মাকে ছেড়ে ওদের কষ্টও হয়েছিল প্রথম প্রথম। কেউ কেউ তো, প্রথমে রাতে ঘুমোতেই পারত না। হস্টেল কালচারের সঙ্গে অনেকেই এরা প্রথমে মানিয়ে উঠতে পারেনি। কিন্তু যখন ওদের পরিজনরা ওদের সঙ্গে দেখা করতে আসে, তখন সব কষ্ট যেন নিমেষে দূর হয়ে যায়। সন্তানদের ছেড়ে থাকতে কষ্ট হয় বাবা-মায়েদেরও। কিন্তু ওই যে স্বপ্নপূরণ করতে হবে, সে মন্ত্রেই ওই ৬ জন ছাত্রী এখন দীক্ষিত। ১৫৪ জন ছাত্রের সঙ্গে মাঝেমধ্যে খুনসুটি করে মজা করে জীবনযুদ্ধে জিততে ওই ৬ জন খুদে ছাত্রীও মরিয়া।

Read full story in English

Education national news
Advertisment