তাঁর লিখিত বই 'দ্য স্যাটানিক ভার্সেস' নিষিদ্ধ করেছিল রাজীব গান্ধীর নেতৃত্বাধান কেন্দ্রীয় সরকার। প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিলেন লেখক সলমন রুশদি। নিজস্ব ভঙ্গিমায় লিখিত ভাবে উগরে দিয়েছিলেন প্রতিবাদ। রুশদি লিখেছিলেন, 'এটা কোনও মুক্ত সমাজের আচরণ হতে পারে না।' চিঠিতে রাজীবকে রুশদি লিখেছিলেন বাক স্বাধীনতা কোনও গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি। কিন্তু, সেই বাক স্বাধীনতা রক্ষায় রাজীব গান্ধীর নেতৃত্বাধীন সরকার নজর দেয়নি, জোর দেয়নি। তাই প্রতিবাদী রুশদি চিঠিতে লেখেন, 'ভারতীয় গণতন্ত্র একটি হাসির ভাণ্ডার হয়ে উঠেছে।'
রাজীব গান্ধীর সরকার যখন তাঁর বই নিষিদ্ধ করেছে, তার আগেই অবশ্য ইরানের তৎকালীন সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা রুশদিকে হত্যার ফতোয়া জারি করেছিলেন। সেই বিতর্কিত লেখক সলমন রুশদিই শুক্রবার পশ্চিম নিউইয়র্কের একটি মঞ্চে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। সেই সময় মঞ্চে ছুটে আসা এক ব্যক্তি তাঁর ঘাড়ে এবং পেটে ছুরি মারে। ৭৫ বছর বয়সি ঔপন্যাসিককে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অস্ত্রোপচার করা হয়। অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল হলেও হামলায় তাঁর একটি চোখ হারানোর আশঙ্কা রয়েছে।
আরও পড়ুন- অক্টোবর থেকে বিহারজুড়ে পদযাত্রায় প্রশান্ত কিশোর, ২৪-এ নতুন দল
প্রকাশিত হওয়ার পর ১৯৮৮ সাল থেকেই রুশদির 'দ্য স্যাটানিক ভার্সেস' বিশ্বের সবচেয়ে বিতর্কিত বইগুলোর একটি। বিশ্বজুড়ে মুসলিম সমাজ এই বই নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছে। অভিযোগ করেছে, এই বই তাদের ধর্মবিশ্বাসকে উপহাস করেছে। আর, তারপরই রাজীব গান্ধীর নেতৃত্বাধীন ভারত সরকার এই বইয়ের আমদানি এবং বিক্রি নিষিদ্ধ করেছিল। ভারত সরকারের সেই সিদ্ধান্তের কথা জানার পরই প্রতিবাদ জানিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীকে চিঠি লিখেছিলেন সলমন রুশদি। ১৯৮৮ সালের ১৯ অক্টোবর, দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস তাদের জাতীয় সংস্করণের ২৭ পাতায় রুশদির চিঠির সংস্করণ প্রকাশ করেছিল। তার শিরোনাম ছিল, 'ভারত তার নিজের ভালোর জন্য একটি বই নিষিদ্ধ করেছে।'
রাজীব গান্ধীর সরকার কিন্তু, এমনি বইটি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়নি। 'দ্য স্যাটানিক ভার্সেস'-এর বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন সৈয়দ সাহাবুদ্দিন, খুরশিদ আলম খানদের মত সাংসদরা। তার পরই কেন্দ্রীয় সরকার পদক্ষেপ করেছিল। আর, তাতেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন রুশদি। সাহাবুদ্দিন, খুরশিদ আলমদের মত সাংসদদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি চিঠিতে লিখেছিলেন, 'সরকারের পরিসংখ্যান দেওয়া উচিত ছিল যে কোন অত্যন্ত উদ্বেগজনক ব্যক্তিরা, যাদেরকে আমি চরমপন্থী, এমনকী মৌলবাদী বলতেও দ্বিধা করি না, তারা আমাকে এবং আমার উপন্যাসকে আক্রমণ করেছে এই বলে যে তাদের আসলে এটি পড়ার কোনও প্রয়োজন নেই।'
Read full story in English