মুম্বইয়ের প্রমোদতরীতে যাত্রী সেজে হানা দিয়ে বিরাট মাদকচক্রের পর্দাফাঁস করেছেন তিনি। বলিউড বাদশাহ শাহরুখ খানের ছেলে আরিয়ানকে জেলে পোরার নেপথ্যে তিনি। সেই দুঁদে এনসিবি আধিকারিকই কি না এবার সাদা পোশাকের পুলিশের নজরদারিতে! এনসিবি আঞ্চলিক অধিকর্তা সমীর ওয়াংখেড়ের এমনই অভিযোগ। তিনি সোমবার দেখা করেন মহারাষ্ট্রের ডেপুটি ডিজি মুথা অশোক জৈনের সঙ্গে। তারপর তাঁকে নিয়ে দেখা করেন ডিজিপির সঙ্গে। তাঁদের নিজের অভিযোগের কথা জানান ওয়াংখেড়ে।
প্রমোদতরী কর্ডেলিয়া মাদক কাণ্ডের তদন্ত করছেন ওয়াংখেড়ে। সেই ঘটনাতেই এখন হাজতে শাহরুখের খানের ছেলে আরিয়ান। যদিও এই অভিযানকে ভুয়ো বলে দাবি করেছেন মহারাষ্ট্রের মন্ত্রী নবাব মালিক। এনসিবি সূত্রে খবর, চলতি বছর এর আগেও ওয়াংখেড়ের উপর নজর রাখা হচ্ছিল। নারকোটিক্স আধিকারিকের গতিবিধির উপর নজর রাখছিল বেশ কিছু অজ্ঞাত পরিচয় মানুষ।
সূত্রের খবর, সিসিটিভি ফুটেজ-সহ একাধিক তথ্যপ্রমাণ রয়েছে ওয়াংখেড়ের উপর নজরদারির। সেগুলি ডিজির হাতে তুলে দিয়েছেন ওয়াংখেড়ে। গত সপ্তাহে ওয়াংখেড়ে এবং মন্ত্রী নবাব মালিকের মধ্যে বাকযুদ্ধ হয় এই মাদক কাণ্ডের তদন্ত নিয়ে। মালিকের দাবি, ওয়াংখেড়ে বিজেপির হয়ে কাজ করছেন। সেই দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন ওয়াংখেড়ে।
চলতি বছরই ওয়াংখেড়ে মালিকের জামাইকে মাদক কাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করেন। ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে জেলে রয়েছেন তিনি। এদিকে, মন্ত্রী মনবাব মালিকের দাবি, প্রমোদতরী কাণ্ডে ধৃত ঋষভ সচদেবকে দিল্লির ফোন পেয়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ছেড়ে দেয় নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো। বিজেপি নেতা মোহিত কাম্ভোজের শ্যালক ঋষভকে দিল্লি থেকে ফোন আসতেই ছেড়ে দেন এনসিবি আধিকারিকরা, এমনটাই অভিযোগ মালিকের। মহারাষ্ট্রের গেরুয়া শিবিরের নেতাদেরও ফোন যায় বলে অভিযোগ করেছেন মালিক।
উল্লেখ্য, কাম্ভোজ মুম্বইয়ের প্রাক্তন যুবা মোর্চা সভাপতি। মালিকের দাবি, প্রমোদতরী থেকে ১১ জনকে আটক করে এনসিবি। কিন্তু তিনজনেক ছেড়ে দেয়। ঋষভ, প্রতীক গাবা এবং আমির ফার্নিচারওয়ালাকে ছেড়ে দেওয়া হয়ে বলে সরব হয়েছেন মন্ত্রী। মিডিয়াকে তিনি বলেছেন, “এনসিবি অধিকর্তা সমীর ওয়াংখেড়ে ৮-১০ জনকে আটক করার বিষয়ে ভিত্তিহীন কথা বলেছেন। প্রথমে প্রমোদতরী থেকে ১১ জনকে আটক করা হল। মুম্বই পুলিশের কাছেও সেই খবর ছিল। কিন্তু সকাল হতেই সেই সংখ্যা কমে হয়ে গেল ৮। তার মানে তিনজন কোথায় গেল।”
আরও পড়ুন ‘খুন করেও মন্ত্রীর ছেলে ঠান্ডা ঘরে, গাঁজা খেয়ে আরিয়ান জেলে?’ ক্ষুব্ধ স্বরা ভাস্কর, পাশে সোনুও
মন্ত্রীর নিজের দাবির স্বপক্ষে একটি ভিডিও দেখিয়েছেন যাতে তিনজনকে আটক এবং ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে দেখা যাচ্ছে। মালিক আরও বলেছেন, “ঋষভ সচদেবকে দুঘণ্টা পর ছেড়ে দেয় এনসিবি। আর সে নিজের বাবা ও কাকার সঙ্গে চলে যায়। তিনজনকেই একসঙ্গে ছাড়া হয়েছে। গাবা এবং ফার্নিচারওয়ালার নাম আদালতের শুনানিতেও উঠেছে। কিন্তু আরিয়ান খানকে এই তিনজনের আমন্ত্রণেই সেখানে গিয়েছিলেন।”
মন্ত্রী আরও প্রশ্ন করেছেন যে, “প্রমোদতরীতে যখন এনসিবি হানা দেয় তখন তাতে ১৩০০ যাত্রী ছিলেন। কিন্তু মাত্র ১১ জনকে আটক করা হল। আর তাঁদের এনসিবি অফিসে এনে জেরা করা হল। এনসিবিকে এটা পরিষ্কার করতে হবে, কার নির্দেশের ওই বাকি তিনজনকে ছেড়ে দেওয়া হল। আমাদের কাছে তথ্য আছে, মহারাষ্ট্র এবং দিল্লির বিজেপি নেতাদের নির্দেশে ওঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।” ওয়াংখেড়ের জবাবদিহি চেয়েছেন মন্ত্রী।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন