গৌরী লঙ্কেশ হত্যাকাণ্ডের তদন্তে যে হিন্দুত্ববাদী দক্ষিণপন্থী সংস্থার নাম বারবার উঠে আসছে, সেই সনাতন সংস্থা তাদের মুখপাত্রে চমকপ্রদ এক নোটিস জারি করেছে। সোমবারে প্রকাশিত সনাতন প্রভাতে লেখা হয়েছে, যাঁদের ভুয়ো অভিযোগে গ্রেফতারের আশঙ্কা রয়েছে, তাঁরা মন্ত্রোচ্চারণ ও পূজাপাঠ বাড়িয়ে দিন। যেভাবে ভালোমানুষ হিন্দুদের গ্রেফতার করা হচ্ছে, তাতে এ ছাড়া উপায় দেখছেন না তাঁরা। প্রসঙ্গত রবিবারই শিবসেনার পূর্বতন কর্পোরেটর শ্রীকান্ত পাঙ্গারকরকে নালাসোপারা বিস্ফোরক ও অস্ত্র মামলায় জালনা থেকে গ্রেফতার করে মহারাষ্ট্রের অ্যান্টি টেররজিম স্কোয়াড।
সনাতন সংস্থার মুখপত্র সনাতন প্রভাতে সোমবার প্রকাশিত নোটিসটির শিরোনাম ছিল, ‘গ্রেফতারির ভিত্তিহীন ভয় কাটাতে মন্ত্রপাঠ ও প্রার্থনা করুন’। নোটিসে বলা হয়েছে, ‘নির্দোষ হিন্দুদের ধারাবাহিক গ্রেফতারির মুখে দাঁড়িয়ে, নিশ্চিতভাবেই কিছু হিন্দুত্ববাদী, ধর্মপ্রেমী এবং সাধকরে ভয় পাবেন যে তাঁদের বিনাকারণে গ্রেফতার করা হতে পারে। যাঁদের মনে তেমন ভীতি হচ্ছে, তাঁরা মন্ত্রপাঠ ও প্রার্থনা বাড়িয়ে দিন।’’ ওই নোটিসে সাধকদের ‘কুলমন্ত্র’ অথবা ‘ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মন্ত্র’ অথবা দুই-ই জপ করতে বলা হয়েছে। নোটিসে একই সঙ্গে দাবি করা হয়েছে, (হিন্দুত্বের কর্মীদের গ্রেফতারির মত) এ ধরনের অন্যায় কাজ চলতে থাকলেও শেষ পর্যন্ত সত্যের জয় হবেই।
এদিকে ধৃত শ্রীকান্ত পাঙ্গারকরের সঙ্গে সনাতন সংস্থার যোগাযোগ রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। শ্রীকান্তকে নিয়ে এই ঘটনায় চারজনকে গ্রেফতার করা হল। এর আগে এটিএসের তরফ থেকে তিন হিন্দুত্ববাদী কর্মীকে গত ১০ অগাস্ট গ্রেফতার করা হয়।ধৃতদের নাম বৈভব রাউত, শরদ কালাসকার এবং সুধন্য গোন্ধলেকর। নালাসোপারা ও পুনে থেকে ওই দিনই বাজেয়াপ্ত করা হয় ২০টি দেশি বোমা, পিস্তল, গুলি এবং বিস্ফোরক।
ধৃত সুধন্য গোন্ধালেকর সনাতন প্রভাতের আগ্রহী পাঠক ছিল। সে নিজে শুধু সনাতন প্রভাতের গ্রাহক ছিল তাই-ই নয়, অন্যদের গ্রাহক হওয়ার জন্য আবেদন-নিবেদনও করত। মহারাষ্ট্র এটিএসের অভিযোগ, রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় আক্রমণ হানার পরিকল্পনা ছিল তার। গৌরী লঙ্কেশ হত্যাকাণ্ডের তদন্তকারী কর্নাটক পুলিশের কাছ থেকে সূত্র পেয়ে ওই তিনজনকে গ্রেফতার করে মহারাষ্ট্র এটিএস।
আরও পড়ুন, গৌরী লঙ্কেশ হত্যাতদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য: বুদ্ধিজীবীদের খুন করতে ২২ জনকে অস্ত্র প্রশিক্ষণ
শরদ কালাসকরকে জেরা করে কুসংস্কার বিরোধী আন্দোলনের কর্মী নরেন্দ্র দাভালকর খুনের ঘটনায় ঔরঙ্গাবাদের শচীন প্রকাশরাও আন্দুরের যুক্ত থাকার কথা জানতে পারা গেছে। এ খবর পেয়েই এটিএস শচীন আন্দুরেকে জেরা করে এবং তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্য সিবিআইকে জানায়। দাভোলকর হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। এরপর গত শনিবার আন্দুরেকে পুনে থেকে গ্রেফতার করা হয়।
শচীন প্রকাশরাও আন্দুরে আপাতত সিবিআই হেফাজতে। গোয়েন্দা সংস্থার অভিযোগ, পুণের ভি আর শিণ্ডে সেতুর ওপর ২০১৩ সালের ২০ অগাস্ট নরেন্দ্র দাভোলকরকে যারা গুলি চালিয়ে খুন করেছিল, আন্দুরে তাদের অন্যতম। সিবিআইয়ের সন্দেহ, সনাতন সংস্থার সাধু বীরেন্দ্রসিং তাওয়াড়ের সঙ্গে যোগযোগ ছিল এই শচীন আন্দুরের। নরেন্দ্র দাভোলকার হত্যা ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকার অভিযোগে, ২০১৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার করা হয় বীরেন্দ্রসিং তাওয়াড়েকে।