Advertisment

করোনা সংক্রমণ রক্তনালীকে ক্ষতিগ্রস্ত করে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়: গবেষণা

আগে থেকে হৃদরোগ থাকলে বেশি সমস্যা হয়।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

করোনা সংক্রমণ হৃদপিন্ডের রক্তনালীকে ক্ষতিগ্রস্ত করে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয়

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা মোটামুটি ঠিক থাকলে আর পাঁচজনের যতটুকু ভয়, হৃদরোগীদের ভয়ও প্রায় ততটুকুই । তবে রোগ একবার হলে বিপদ আছে। কারণ যে মাত্রার সংক্রমণ একজন কমবয়সি ও সুস্থ সবল মানুষ অবলীলায় সামলে নিতে পারেন, সেই একই সংক্রমণ জটিল হৃদরোগীদের ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

Advertisment

আমেরিকান কলেজ অফ কার্ডিয়োলজির রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, সাধারণ কোভিড রোগীদের মধ্যে যেখানে মৃত্যুহার ২.৩ শতাংশ, হৃদরোগ আছে এমন কোভিড রোগীর ক্ষেত্রে তা পৌঁছে যায় ১০.৫ শতাংশে।আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার ১১টি দেশের ১৬৯টি হাসপাতালে ভর্তি ৮৯১০ জন রোগীর উপর সমীক্ষা চালিয়ে বস্টনের ব্রিগহাম ও ওমেনস হাসপাতালের চিকিৎসকেরা দেখেছেন, এঁদের মধ্যে যে ৫১৫ জন মারা গেছেন, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় আছেন বয়স্ক ও হৃদরোগীরা।৬৫-র চেয়ে বেশি বয়সি মানুষের মধ্যে মৃত্যুহার ১০ শতাংশ, বয়স বেশি নয় কিন্তু করোনারি আর্টারি ডিজিজ আছে এমন রোগীদের মধ্যে মৃত্যুহার ১০.২ শতাংশ, হার্ট ফেলিয়োরের রোগীদের ১৫.৩ শতাংশ, অ্যারিদমিয়ার রোগীদের মধ্যে ১১.৫ শতাংশ।

আরও বিশদ খবর পাওয়া যায় 'জার্নাল অব আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন, কার্ডিয়োলজি'-তে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে। চীনের একটি হাসপাতালে সমীক্ষা চালিয়ে বিজ্ঞানীরা দেখেন, হৃদরোগ আছে এমন কোভিড রোগী, যাঁদের রক্তে ট্রোপোনিন লেভেল বাড়েনি, তাঁদের মৃত্যুহার যেখানে ১৩ শতাংশ, যাঁদের ট্রোপোনিন বেড়েছে, তাঁদের মৃত্যুহার হয়ে গেছে ৬৯ শতাংশ।ট্রোপোনিন হল সেই কার্ডিয়াক এনজাইম, যার মাত্রা হার্টের পেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে।অর্থাৎ কোভিডের প্রভাবে হার্টের ক্ষতি হয়।

'জার্নাল অব আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন, কার্ডিয়োলজি'-তে প্রকাশিত প্রবন্ধে বিজ্ঞানীরা জানান, রেসপিরেটরি ভাইরাস বলে করোনা ফুসফুসের উপরই বেশি আক্রমণ শানাবে বলে ভাবা হয়েছিল, কিন্তু যত দিন গেল, বোঝা গেল, রোগ জটিল হতে শুরু করলে তার প্রভাব পড়ে শরীরের সব গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যঙ্গেই। এমনকি, কিছু ক্ষেত্রে ফুসফুসে জটিলতা দেখা দেওয়ার আগেই হার্ট আক্রান্ত হয়।আগে থেকে হৃদরোগ থাকলে বেশি সমস্যা হয়।না থাকলেও হতে পারে।কারণ, হার্ট ও ফুসফুস শরীরে তাদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে একে অপরের উপর নির্ভরশীল বলে একজনের ক্ষতি হলে তার প্রভাব পড়ে অন্যের উপর।যাঁদের হার্ট দুর্বল, তাঁদের হার্টের ক্ষতি বেশি হয়।দুর্বল ফুসফুসের প্রভাবও হার্টে গিয়ে পড়ে।

ভাইরাস যদি হার্টের পেশিতে সংক্রমণ ছড়ায়, যাকে বলে ভাইরাল মায়োকার্ডাইটিস, হার্টের পাম্প করার ক্ষমতা কমে যায়। তখন তিন রকম পরিস্থিতি হতে পারে। যেমন-

• হার্ট ফেলিয়োর হতে পারে।যাঁদের বয়স ৬৫-র বেশি, আগে থেকে হার্ট ফেলিয়োর আছে বা কোনও কারণে হার্ট দুর্বল, তাঁদের চট করে হয়।অন্যদেরও হতে পারে।বাড়াবাড়ি হলে মারা যেতে পারেন রোগী।

• কারও হৃৎস্পন্দন খুব কমে যায়, কারও খুব বেড়ে যায়।দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে প্রাণ নিয়ে টানাটানি পড়ে।

• যাঁদের ইস্কিমিক হৃদরোগ আছে, তাঁদের হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেতে পারে।অনেক সময় আবার হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ দেখা দিলেও পরীক্ষানিরীক্ষায় তার চিহ্ন দেখা যায় না। অনেকক্ষেত্রে কোভিডের বাড়াবাড়ি হলে রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা বেড়ে গিয়ে এমন পরিস্থিতি হয় যে হার্টের ধমনির পথ অবরুদ্ধ না হলেও, সেরকম উপসর্গই হয় অনেকটা।

সাম্প্রতিক গবেষণা দেখায় যে করোনা আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভবনা বেড়ে যায় বহুগুনে কারণ এই ভাইরাস হৃদপিন্ডের চারপাশে ছোট ছোট রক্ত নালীগুলিকেও ব্যপক ভাবে প্রভাবিত করে। যা ‘সাইটোকাইন স্টর্ম' নামেও পরিচিত। গবেষকদের মতে করোনা ভাইরাস ভাস্কুলার কোষগুলিকে সংক্রামিত না করেই তাদের ক্ষতি করতে পারে। কী কী সাবধানতা মেনে চলার কতাহ বলা হয়েছে

 • রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য যে সমস্ত ওষুধ খেতে হয়, তা খেয়ে যান নিয়মিত।

• বাড়িতে কারও জ্বর-সর্দি-কাশি হলে, তাঁর থেকে দূরে থাকুন।

• দরকার না হলে বাড়ির বাইরে বেরবেন না।

• হাত ধোওয়া ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নিয়ম মেনে চলুন।

• শরীরচর্চা বন্ধ করবেন না।সম্ভব হলে ভোরে বা সন্ধের সময় ছাদে হাঁটুন।

• যোগা ও ব্রিদিং এক্সারসাইজ করুন।

Heart damage
Advertisment