দিল্লির তিহার জেলে বন্দি আম আদমি পার্টি (আপ) নেতা সত্যেন্দ্র জৈনের মেডিকেল রেকর্ড সামনে এসেছে। এই নথিগুলি অনুসারে, সত্যেন্দ্র জৈন জেলে থাকাকালীন একবার বাথরুমে পড়ে গিয়েছিলেন। ২০২২ সালের জুনের এই ঘটনার পরে, সত্যেন্দ্র জৈনকে জুলাই এবং আগস্ট মাসে দুটি টিএফইএসআই অর্থাৎ ট্রান্সফোরমিনাল এপিডুরাল স্টেরয়েড ইনজেকশন দেওয়া হয়েছিল। দিন কয়েক আগেই দিল্লির তিহার জেলের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়, যেখানে আপ নেতা তথা দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈনকে তিহার জেলেই ম্যাসাজ নিতে দেখা যায়। এর পরই শোরগোল শুরু হয়। বিজেপি জেলে আপ নেতার ভিআইপি ট্রিটমেন্টের অভিযোগ তোলে।
দিল্লি সরকারের মন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈন তার ম্যাসাজ ভিডিও নিয়ে সংবাদের শিরনামে রয়েছেন। সম্প্রতি জেলে ম্যাসাজের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সামনে এসেছে। এতে সত্যেন্দ্র জৈনকে এক ব্যক্তিকে দিয়ে ম্যাসাজ করতে দেখা গেছে। ফুটেজ ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই বিজেপি এবং কংগ্রেস আপ সরকার-কে আক্রমণ করছে। বিজেপি’র অভিযোগ দুর্নীতির দায়ে জেলবন্দী এই আপ নেতাকে ক্ষমতাসীন দল ভিআইপি ট্রিটমেন্ট দিচ্ছে।
অন্যদিকে, মঙ্গলবার আরও এক ভয়ঙ্কর তথ্য সামনে আসে তাতে বলা হয় সত্যেন্দ্র জৈন যাঁকে দিয়ে সঙ্গে ম্যাসাজ করাচ্ছিলেন, তিনি তাঁর নিজের নাবালিকা মেয়েকে ধর্ষণের দায়ে জেল খাটছেন। এর পর জৈন ও আপ-এর বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলির আক্রমণ তীব্রতর হয়েছে।
আরও পড়ুন: < পরিস্থিতি উদ্বেগজনক! টিএন সেশানের মতো নির্বাচন কমিশনার প্রয়োজন: সুপ্রিম কোর্ট >
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জেনেছে ২০২২ সালের জুনের কোনও দিন, সত্যেন্দ্র জৈন তিহার জেলের বাথরুমে পড়ে গিয়েছিলেন। এতে তার পিঠে গুরুতর আঘাত লাগে। মেডিকেল রেকর্ডগুলি দেখায় যে দিল্লির লোক নায়ক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগ এবং সেখানকার মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা জৈনকে ফিজিওথেরাপি করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
বাথরুমে পড়ে যাওয়ার কিছু সময় পর সত্যেন্দ্র জৈনের তলপেটে ব্যথা শুরু হয়। এই কারণে তাকে প্রথমে জিবি পান্ত হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগ চেকআপ করা হয়। পরে তাকে লোক নায়ক হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেখানে তার চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকদের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়।
মেডিক্যাল রেকর্ড অনুসারে জানা গিয়েছে সত্যেন্দ্র জৈনের এমআরআই করা হয়েছিল লোক নায়ক হাসপাতালে। তার রিপোর্টে বলা হয়েছে যে জৈনের মেরুদন্ডের স্নায়ুতে প্রচন্ড আঘাত রয়েছে এবং ঘাড়ের কাছে মেরুদন্ডের একটি অংশ ফুলে গিয়েছিল। যার কারণে তাকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে এবং ফিজিওথেরাপি নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে। কোভিড-১৯ মহামারীর সময় সত্যেন্দ্র জৈনও করোনা সংক্রমণের কবলে পড়েছিলেন। মেডিকেল রেকর্ড অনুসারে, তারও পোস্ট কোভিডের কিছু সমস্যা রয়েছে।
৬ আগস্ট ২০২২-এ, লোক নায়ক হাসপাতাল জৈনকে ছেড়ে দেয়। তারপরে হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান ডঃ পিএন পান্ডে দিল্লি সরকারের মন্ত্রীকে ছুটি দেওয়ার সময়, বিশ্রামে থাকতে এবং ফিজিওথেরাপির পরামর্শ দেন।
এছাড়াও তিহার জেলের একজন সিনিয়র মেডিকেল অফিসারও তার একটি মেডিক্যাল রিপোর্টে বলেছিলেন যে রেডিওকিউলোপ্যাথি ছাড়াও, সত্যেন্দ্র জৈনেরও পোস্ট কোভিড ফাইব্রোসিস, শ্বাসকষ্ট, স্থূলতার মতো অন্যান্য সমস্যা রয়েছে। মেডিকেল অফিসার রিপোর্টে লিখেছিলেন যে জিবি পন্ত এবং লোক নায়কের চিকিৎসকদের সঙ্গে জেলের চিকিৎসকরা নিয়মিত যোগাযোগ রেখে জৈনের চিকিৎসা ব্যবস্থা পরিচালন করছেন। যদিও জৈনের চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত কয়েকজন ডাক্তারের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও, তা সম্ভব হয়নি।