২০০২ গোধরা পরবর্তী সময়ে হিংসায় ধর্ষকদের সাজার মেয়াদ শেষের আগে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিলেন বিলকিস বানো। ১১ জন ধর্ষক ও খুনির মুক্তির নির্দেশ আদালতে পুনর্বিবেচনার আর্জি জানানো হয়েছিল। সেই মামলাই খারিজ করল দেশের শীর্ষ আদালত।
সুপ্রিম কোর্ট গত ১৩ই ডিসেম্বর বিলকিস বানোর আবেদন খারিজ করে এবং ১৬ই ডিসেম্বর একটি চিঠির মাধ্যমে সিদ্ধান্তটি আবেদনকারীর আইনজীবীকে জানানো হয়। তবে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে আনুষ্ঠানিকভাবে আদেশটি এখনও আপলোড করা হয়নি।
২০০২ সালে গোধরাকাণ্ডের ভয়াবহ সাক্ষী থেকেছে গুজরাট। সেই হিংসার পর সাম্প্রদায়িক অশান্তি ছড়ায় সে রাজ্যে। ২০০২ সালের ৩ মে দাহোড় জেলার লিমখেদা তালুকে ভয়াবহ হামলা চালানো হয়। গ্রামের বাসিন্দা ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বিলকিস বানোকে গণধর্ষণ করা হয়। বিলকিসের চোখের সামনেই তাঁর তিন বছরের মেয়েকে পাথরে আছড়ে হত্যা করে হামলাকারীরা। ঘটনাস্থলেই মারা যায় সে। তাঁর পরিবারের আরও কয়েক জন সদস্যকে হত্যা করা হয়।
এই অপরাধকে ‘বিরলতম’ আখ্যা দিয়ে মুম্বইয়ের সিবিআই আদালতে কঠোর সাজার পক্ষে সওয়াল করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ২০০৮ সালের ২১ জানুয়ারি মোট অভিযুক্ত ১২ জনের বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয় বিশেষ আদালত। মামলা চলাকালীন এক অভিযুক্তের মৃত্যু হয়।
এরপর চলতি বছর ১৫ অগাস্ট দেশের ৭৬তম স্বাধীনতা দিবসে বিলকিস বানো গণধর্ষণ কাণ্ডে সাজাপ্রাপ্ত ১১ জনকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় গুজরাত সরকার। আগেই, মুক্তির জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছিলেন ওই ধর্ষণের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীরা। সেই আবেদনের ভিত্তিতে গুজরাত সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছিল আদালত। বিজেপি সরকার সাজাপ্রাপ্তদের মুক্তির সিদ্ধান্ত নেয়।
গুজরাট সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে শোরগোল পড়ে। মেয়াদ শেষের আগে কেন ১১ জন ধর্ষক ও খুনিকে ছাড়া হল সেই প্রশ্ন তোলা হয়। এই সিদ্ধান্তকে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন- একটি সিপিআই(এম) নেত্রী সুভাষিনী আলি, সাংবাদিক রেবতী লাউল, শিক্ষাবিদ রূপ রেখা ভার্মা এবং তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ মহুয়া মৈত্র। আবেদনকারীরা যুক্তি দিয়েছিলেন যে কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন ছাড়াই রাজ্য ধর্ষক ও খুনীদের ছেড়ে দিয়েছে। জবাবে গুজরাট সরকার জানিয়েছিল, তারা সাতটি কর্তৃপক্ষের মতামত বিবেচনা করেসাজাপ্রাপ্ত ১১ জনকে মুক্তি দিয়েছে।
এরপরই ধর্ষকদের সাজার মেয়াদ শেষের আগে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিলেন বিলকিস বানো।