ঔপনিবেশিক যুগের রাষ্ট্রদ্রোহ আইন পর্যালোচনার জন্য 'যথাযথ পদক্ষেপ' নিতে সোমবার কেন্দ্রকে অতিরিক্ত সময় দিল সুপ্রিম কোর্ট। একইসঙ্গে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতের পূর্বের অন্তর্বর্তী রায় বহাল রাখল। ফলে, হাতে সময় পেলেও এই আইন কেন্দ্রীয় সরকার প্রয়োজনে প্রয়োগও করতে পারবে না। রাষ্ট্রদ্রোহ আইন অনুযায়ী এফআইআরও করতে পারবে না।
প্রধান বিচারপতি উদয় উমেশ ললিত এবং বিচারপতি এস রবীন্দ্র ভাট ও বিচারপতি বেলা এম ত্রিবেদীর বেঞ্চকে অ্যাটর্নি জেনারেল আর ভেঙ্কটরামানি বলেছিলেন যে 'সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে এই ব্যাপারে কিছু একটা ঘটতে পারে'। তাই কেন্দ্রকে আরও সময় দেওয়া হোক।
অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে আরও জানান যে এই আইন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিবেচনাধীন রয়েছে। তাছাড়া ১১ মে অন্তর্বর্তী আদেশের প্রেক্ষিতে 'চিন্তার কোনও কারণ নেই।' কারণ, ওই আদেশের কারণে এই বিধানের ব্যবহার আটকে রয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে জানান যে ১১ মে জারি করা নির্দেশের প্রেক্ষিতে বিষয়টি ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। সরকার যাতে এই ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারে, সেজন্য তাই অতিরিক্ত সময় দেওয়া হোক।
এই প্রসঙ্গে আদালত আরও জানিয়েছে যে, 'গত ১১ মে এই আদালতের জারি করা অন্তর্বর্তী নির্দেশের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট সবপক্ষের স্বার্থ এবং উদ্বেগ সুরক্ষিত থাকবে। কারও প্রতি কোনও পক্ষপাতিত্বের প্রশ্নও আসছে না। সেই কারণে এই অনুরোধের জেরে আমরা বিষয়টি ২০২৩ সালের জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত স্থগিত রাখছি।' এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আরও কিছু আবেদন জমা পড়েছে আদালতে। সেই সব আবেদনের প্রেক্ষিতে কেন্দ্রকে নোটিস দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। একইসঙ্গে আগামী ছয় সপ্তাহের মধ্যে নোটিসের জবাব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
এর আগে গত ১১মে গৃহীত যুগান্তকারী নির্দেশে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, কেন্দ্র ঔপনিবেশিক ধ্বংসাবশেষের প্রতিশ্রুত পর্যালোচনা সম্পূর্ণ না-করা পর্যন্ত কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলি রাষ্ট্রদ্রোহের জন্য নতুন করে কোনও মামলা নথিভুক্ত করতে পারবে না। শুধু তাই নয়, রাষ্ট্রদ্রোহ নিয়ে চলমান তদন্ত, বিচার এবং অন্যান্য কার্যকলাপ স্থগিত রাখা হবে। রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে কারাগারে থাকা ব্যক্তিরা জামিনের জন্য আদালতে যেতে পারবেন।
আরও পড়ুন- পোস্তা ব্রিজ ভাঙার সঙ্গে মোরবির তুলনা, মোদীর পছন্দের ঠিকাদাররাই কাঠগড়ায়, অভিযোগ বিরোধীদের
রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধ, ১৮৯০ সালে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৪এ ধারার অন্তর্ভুক্ত। যার বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়া-সহ বিভিন্ন মাধ্যমে সমাজের নানাস্তরের মানুষ সরব। ব্রিটিশ জমানায় রাষ্ট্রদ্রোহ আইনটি ভিন্নমতকে দমন করতে এবং মহাত্মা গান্ধী ও বাল গঙ্গাধর তিলকের মতো স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কারারুদ্ধ করার কাজে ব্যবহার হয়েছিল।
এডিটরস গিল্ড অফ ইন্ডিয়া, মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) এসজি ভোমবাটকেরে, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অরুণ শৌরি ও পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজ (পিইউসিএল)-এর মত সংগঠন এই দণ্ডবিধির বিরুদ্ধে আদালতে পিটিশন দায়ের করেছে। এই সব পিটিশনে দাবি করা হয়েছে, রাষ্ট্রদ্রোহ আইনটি বাক স্বাধীনতা হরণ করে। স্বাধীন মতপ্রকাশকে সীমাবদ্ধ করে। পাশাপাশি, নাগরিকের মৌলিক অধিকারকে নষ্ট করছে।
Read full story in English