প্রথম ভারতীয় হিসাবে পদোন্নতি হওয়ার পর সেনাপ্রধানের পদে তিনিই প্রথম ১৫ জানুয়ারি সেনা দিবস পালন করেন।
তিনি ছিলেন দেশের প্রথম ভারতীয় সেনাপ্রধান, পরবর্তীতে ফিল্ড মার্শাল পদের দায়িত্বও সামলেছেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীর কিংবদন্তী জেনারেল কে এম কারিয়াপ্পা। ১৯৭১ সালে লোকসভা নির্বাচনে ইন্দিরা গান্ধীর বিপুল জয়ের এক সপ্তাহ পর কারিয়াপ্পা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, "অস্থায়ীভাবে হলেও দেশে এই মুহুর্তে সেনা শাসনের প্রয়োজন।" ভারতীয়দের “জেগে উঠে কথা বলার" আহ্বান জানিয়ে তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন, গণতন্ত্র বাঁচাতে ৯০ শতাংশ ভারতীয় "রাষ্ট্রপতি শাসনের পক্ষে ভোট দেবেন"।
Advertisment
সম্প্রতি কর্ণাটকের স্টেট আর্কাইভে পাওয়া গিয়েছে কারিয়াপ্পার স্বাক্ষর করা সেই চিঠি। ১৯৭০ সালে ধানবাদে সাংবাদিকদের সামনে এমনই কিছু মন্তব্যর প্রেক্ষিতে তাঁকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং লোকসভার স্পিকারের সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা বলতে হয়েছিল। এই মন্তব্যর জন্য সংসদেও তাঁকে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল। পরবর্তীতে জানা গিয়েছে যে তিনি তাঁর এই মন্তব্যের জন্য মন্ত্রীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ক্ষমাও চেয়েছিলেন। যদিও কারিয়াপ্পা এই কথা অস্বীকার করেছিলেন এবং স্পষ্ট জানিয়েছিলেন তিনি তাঁর মন্তব্য থেকে "এক ইঞ্চিও" পিছিয়ে যাননি।
Advertisment
উদ্ধার হওয়া সেই নোট
চার পৃষ্ঠার টাইপ করা একটি নোটে কারিয়াপ্পা সংবিধান সরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ছিলেন "সাক্ষরতার" ভিত্তিতে প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকার সীমাবদ্ধ করার পক্ষেও। তাঁর মত ছিল, দেশের আইন ব্যবস্থাকে সঠিক পথে আনতে সেনা শাসন দিয়ে তা পুনরুদ্ধারের প্রয়োজন, এবং পরবর্তীতে থাকুক স্রেফ তিনটি রাজনৈতিক দল। নির্বাচনের পর নতুন করে সংবিধান গঠন করা উচিত বলেও মত ছিল তাঁর, যার পর রাষ্ট্রপতি শাসন তুলে নিয়ে পুনরায় গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা হবে।
নোটটিতে তিনি দৃঢ়ভাবে জানিয়েছিলেন যে সাধারণ মানুষ যদি মনে করেন যে রাষ্ট্রপতি শাসন তাঁদের সুরক্ষা প্রদান করবে, উন্নত জীবন তৈরিতে সহায়তা করবে, তবে তাঁদের তা দাবি করার অধিকার রয়েছে। তবে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে তিনি "চিরকালীন সামরিক শাসনে পক্ষে ছিলেন না"। তিনি আরও ব্যাখ্যা করেন যে সেনা শাসন কেবল তখনই আসতে পারে "যদি রাজনীতিকরা স্বেচ্ছায় দেশটিকে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তরিত করেন" অথবা "জনগণ যদি এইরকম কোনও শাসন দাবি করে তবে"।
উল্লেখ্য, সেনাপ্রধান হিসেবে জেনারেল কারিয়াপ্পা ছিলেন অত্যন্ত সম্মানীয়। প্রথম ভারতীয় হিসাবে পদোন্নতি হওয়ার পর সেনাপ্রধানের পদে তিনিই প্রথম ১৫ জানুয়ারি সেনা দিবস পালন করেন। ১৯৫৩ সালে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন তিনি। দুটি লোকসভা নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। রাজীব গান্ধীর সরকারের সময়কালে ১৯৮৬ সালে ফিল্ড মার্শাল পদের দায়িত্বও সামলান। ১৯৯৩ সালে ৯৪ বছর বয়সে প্রয়াত হন জেনারেল কে এম কারিয়াপ্পা।