নতুন বছরে আরও বহরে বেড়ে ফিরেছে করোনার সংক্রমণ। ইতিমধ্যে লকডাউন কিংবা নাইট কার্ফুর শরণাপন্ন একাধিক শহর। বৃহস্পতিবার ৫০ হাজারের গণ্ডি পেরিয়েছে গত ২৪ ঘণ্টার সংক্রমণ। এভাবে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গ শুরু হয়েছে। সেই কথা খানিকটা স্বীকার করে নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। আর এই দ্বিতীয় ঢেউ শিখর আসতে পারে এপ্রিল মাসের দ্বিতীয়ার্ধে, এমনটাই একটা রিপোর্টে জানিয়েছে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। অন্তত ১০০ দিন এই দ্বিতীয় তরঙ্গ থাকবে বলেই জানানো হয়েছে এই রিপোর্টে।
স্টেট ব্যাঙ্কের এই রিপোর্টে বলা, ২৩ মার্চ পর্যন্ত সংক্রমণের গতি-প্রকৃতি বিচার করে বোঝা যাচ্ছে এই দ্বিতীয় তরঙ্গে ভারতে প্রায় ২৫ লক্ষ মানুষ আক্রান্ত হবে। সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি দেখে বোঝা যাচ্ছে এপ্রিল মাসের দ্বিতীয়ার্ধে এই দ্বিতীয় তরঙ্গ শিখরে পৌঁছবে।
২৮ পাতার এই রিপোর্টে উল্লেখ, স্থানীয় ভাবে লকডাউন করলে সংক্রমণ থামানো যাবে না। তার বদলে শুধুমাত্র ব্যাপক পরিমাণে টিকাকরণ করলে তবেই এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
ভারতের ১৮ রাজ্যে করোনার ডবল মিউট্যান্ট ভ্যারিয়ান্ট ছড়িয়ে পড়েছে। ভিনদেশের তিন স্ট্রেনের দরুন ভারতে করোনা সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী। যা উদ্বেগ বাড়িয়েছে কেন্দ্রে। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তরফে এক বিবৃতিতে বুধবার জানানো হয়েছে যে, ভারতে ভ্যারিয়ান্ট কনসার্ন ও ডবল মিউট্যান্ট ভ্যারিয়ান্টের সন্ধান মিলেছে। তবে এগুলির সরাসরি সম্পর্ক স্থাপন বা কোনও রাজ্যে মামলার দ্রুত বৃদ্ধির জন্য এগুলোই দায়ী কিনা তা সনাক্ত করা যায়নি। জুনোমিক্স সুকুয়েসিং ও এপিডিমিওলডিক্যাল স্টাডি ফের এর বিশ্লেষণ করেছে।
ইন্ডিয়ান সার্স কভ-২ জিনোমিক্স কনসরটিয়াম জানাচ্ছে ১০,৭৮৭ সংক্রমিতের জিনের গঠন বিন্যাস বের করে ৭৭১ রকম ভেরিয়ান্ট মিলেছে। করোনার তিন বিদেশি প্রজাতি .থা ব্রিটেন স্ট্রেন, দক্ষিণ আফ্রিকার মিউট্যান্ট স্ট্রেন ও ব্রাজিল স্ট্রেন্ট-এর মাধ্যমেই সংক্রমণ ছাড়াচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
সংক্রমণ রুখতে রাজ্যগুলিকে নয়া নির্দেশিকা পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। তাতে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সামনেই দোল, হোলি, ইদ। তাই করোনা সংক্রমণ রুখতে রাজ্যগুলি চাইলে স্থানীয় স্তরে এই উৎসব উদযাপনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতেই পারে।
বুধবার স্বাস্থ্যমন্ত্রকের দেওয়া তথ্য অনুসারে ভারতে দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৪৭,২৬২। একজদিনে মৃত্যু হয়েছে ২৭৫ জনের।
মঙ্গলবারই আবার এপ্রিল মাসের জন্য নয়া নির্দেশিকা জারি করেছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। তাতে সমস্ত রাজ্যগুলোকে টেস্ট-ট্র্যাক-ট্রিট প্রোটোকল অনুসরণ করতে স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই প্রোটোকল অনুযায়ী, প্রত্যেক রাজ্যকে আরও বেশি করে আরটি-পিসিআর টেস্ট করাতে হবে। অন্তত নির্দেশিকা অনুযায়ী, প্রত্যেকদিন ৭০ শতাংশ বা তার বেশি টেস্ট করাতে হবে রাজ্যগুলিকে। তাতে যাঁদের রিপোর্ট পজিটিভ আসবে, তাঁদের দ্রুত আইসোলেশনে পাঠাতে হবে। এরপর ওই আক্রান্ত ব্যক্তি কাদের সংস্পর্শে এসেছে, দ্রুত তাঁদের ট্র্যাক করতে হবে এবং আইসোলেশনে পাঠাতে হবে।