এবার অশান্তির মেঘ পড়শি রাজ্য ত্রিপুরায়। সাম্প্রদায়িক অশান্তির আশঙ্কায় আগেভাগে ব্যবস্থা স্থানীয় প্রশাসনের। মঙ্গলবার আগরতলার নন্দননগরের থান্ডা কালীবাড়ি এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে পুলিশ। অভিযোগ, এলাকার মুসলিমদের একটি কবরস্থানের 'দখল' নিতে আসে হিন্দুত্ববাদী একটি গোষ্ঠী। তাই নিয়েই অশান্তির সূত্রপাত। তবে সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় সচেষ্ট স্থানীয় প্রশাসন। দু'পক্ষকেই শান্ত থাকার আবেদন প্রশাসনিক কর্তাদের।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার একদল বিক্ষোভকারী (যাঁদের অধিকাংশই মুসলিম মহিলা) আগরতলার কাছে গোবিন্দ বল্লভ পান্ত (জিবিপি) হাসপাতাল এবং খয়েরপুর এলাকার সংযোগকারী জিবি বাইপাস অবরোধ করে। প্রায় চার ঘণ্টা ধরে ব্যস্ত ওই রাস্তা অবরোধ করে রাখেন বিক্ষোভকারীরা। স্বভাবতই ব্যাপক যানজট তৈরি হয় ওই এলাকায়। একইসঙ্গে এলাকায় বাড়তে থাকে উত্তেজনা।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, হিন্দু যুব বাহিনীর কর্মীরা পশ্চিম ত্রিপুরার পালপাড়ায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একটি কবরস্থানে রাতারাতি শিব মন্দির তৈরি করেন। বিক্ষোভকারীরা সেই মন্দিরটি সরানোর দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন। মন্দির সরিয়ে পুনরায় তাঁরা মুসলিম সম্প্রদায়ের হাতেই ওই জমির মালিকানা ফেরানোর দাবি তুলেছেন। এদিকে, দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে এই অসন্তোষকে কেন্দ্র করে এলাকায় অশান্তি ছড়ানোর প্রবল আশঙ্কা তৈরি হয়। তড়িঘড়ি ওই এলাকায় ১৪৪ ধারি জারির সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন।
মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ওই এলাকায় ১৪৪ দারি জারি থাকবে বলে জানানো হয়েছে প্রশাসনের তরফে। প্রশাসনিক নির্দেশ অমান্য করলে ভারতীয় দণ্ডবিধির নির্দিষ্ট ধারা অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে বলে জানিয়েছেন সদর সাব ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট অসীম সাহা। নুর ইসলাম নামে এক বিক্ষোভকারী বলেন, ''একদল লোক কবরস্থানের একাংশ পরিষ্কার করে সোমবার রাতে মন্দির তৈরি করে ফেলে। কয়েক বছর ধরেই কবরস্থানের এই জমি দখলের চেষ্টা চলছে।''
তিনি আরও বলেন, ''২০১৯ সাল থেকে বেশ কয়েকবার প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তাঁরা আমাদের জমির সীমানা নির্ধারণের আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। গতকাল রাতে একদল দুষ্কৃতী এসে জমি দখল করে মন্দির তৈরি করে। রাজ্যে শান্তি ও সম্প্রীতির পরিবেশ বিঘ্নিত করার চেষ্টা চলছে।'' বিষয়টি নিয়ে হিন্দুত্ববাদী ওই গোষ্ঠী ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বাদানুবাদ চলে। যার জেরে প্রায় ঘণ্টা চারেক রাস্তা অবরোধ করে রাখা হয়।
আরও পড়ুন- দিল্লি থেকে গন্তব্যে না গিয়ে পাকিস্তানে নামল ভারতের বিমান, ঘটনা ঘিরে শোরগোল
এলাকার বাসিন্দা তাজুল ইসলাম স্থানীয় মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি এবং ওই ‘কবরস্থান’ কমিটিরও সদস্য ছিলেন। তিনি জানান, কবরস্থানটি কয়েক দশক ধরে তাঁদের সম্প্রদায়ের মানুষজন ব্যবহার করে চলেছেন। তাঁর কথায়, ''আমরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েছি। তাঁরা দখলদারদের সরিয়ে জমি খালি করে দিয়েছে। এখন ওই জমিতে কোনও দখলদার নেই। এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। আমরা সরকারি নির্দেশ পালন করছি।''
অন্যদিকে, স্থানীয় এক মহিলা ওই জমিতে মন্দির তৈরির দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন। তিনি বলেন, ''ওই জমিতে কোনও কবরস্থান নেই। হিন্দু সম্প্রদায় ওখানে একটি মন্দির তৈরি করতে চায়।'' এদিকে, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি)-এর প্রাক্তন রাজ্য প্রধান চন্দ্রশেখর কর এদিন ওই এলাকায় গিয়েছিলেন। পরে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে আলোচনার মাধ্যমে অচলাবস্থা কাটানোর দাবি জানিয়েছেন তিনি।