"শ্রমিকের অধিকার চাই।" আন্তর্জাতিক শ্রম দিবসের আগের দিন মঙ্গলবার সোনাগাছিতে এই শ্লোগান তুলে পদযাত্রা করলেন কয়েকহাজার যৌনকর্মী। ওই মিছিলে তাঁদের সন্তান ও অন্যান্য সংঠনের সদস্যরাও হাজির ছিলেন। ১ মে সোনাগাছিতে কাজও বন্ধ রাখেন যৌনকর্মীরা। এই দাবি নিয়েই গত কয়েকবছর ধরে লাগাতার আন্দোলন করে চলেছেন সোনাগাছি সহ রাজ্যের অন্য যৌনপল্লীর কর্মীরা।
টিনকা (পরিবর্তিত নাম) পাঁচ বছর ধরে থাকেন মহানগরের এই যৌনপল্লীতে। সোনাগাছির বহু ঘটনার সাক্ষী টিনকা। তাঁর অভিযোগ, "এখনও সমাজে নানা ধরনের অত্যাচার আমাদের সহ্য করতে হয়। কখনও চাঁদার জুলুম তো কখনও মাস্তানের চোখরাঙানী। তাছাড়া পুলিশের বিভিন্ন ধরনের অত্যাচার রয়েছে। এসব জ্বালাতন সঙ্গে করেই আমাদের চলতে হয়। কিছু ঘটনা অন্তরালেই থেকে যায়। অনেকে পাশে থাকার কথা বললেও লড়াইটা অনেক ক্ষেত্রে নিজেকেই করতে হয়। এত কিছু সত্ত্বেও এখনও আমরা শ্রমের স্বীকৃতি পেলাম না। সরকারি শ্রমদপ্তরে যৌনকর্মী হিসাবে আমাদের নথিভুক্ত করতে হবে। এটা আমাদের অন্যতম মূল দাবি। জানি না কবে মিলবে আমাদের অধিকার," বললেন বছর তিরিশের এই যৌনকর্মী।
সোনাগাছি সহ রাজ্যের বিভিন্ন যৌনপল্লীর যৌনকর্মীরা সরকারি নানা সুবিধা পাচ্ছেন। এমনকী আধার কার্ড, রেশন কার্ড, স্বাস্থ্যবিমা সহ অনেক প্রকল্পেরও অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন অনেকেই। কিন্তু এখনও শ্রমিকের অধিকার পান নি তাঁরা। এটাই এখন কুরে কুরে খায় যৌনকর্মীদের। তাছাড়া ইমমরাল ট্রাফিকিং আইনের ফাঁদে পড়েও তাদের হয়রানির শিকার হতে হয়। সোনাগাছির মহল্লায় মহল্লায় যৌনকর্মীদের এই অভিযোগ। তাঁদের বক্তব্য, "এটা আমাদের পেশা। তবু কেন পুলিশ হয়রান করবে? আর কবে এসব বন্ধ হবে?"
১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। এখনও তাঁরা সরকারিভাবে যৌনকর্মী হিসাবে নথিভুক্ত নন। বছরের পর বছর এই দাবি করে আসছেন। মর্যাদা পান নি বলে কিন্তু যৌনকর্মীরা ঘরে বসে নেই। লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে শুধু দাবি বা পদযাত্রা নয়, শ্রম দিবসে তাঁরা কাজও বন্ধ রাখেন। সারা বিশ্বে অন্যান্য কর্মক্ষেত্রে যখন স্বাভাবিক ছুটি যাপন করেন কর্মীরা, তখন সোনাগাছির যৌন কর্মীরা শ্রমিকের মর্যাদার দাবিতে কাজ বন্ধ রাখেন। সোনাগাছিতে বর্তমানে প্রায় ১১ হাজার যৌনকর্মী রয়েছেন।
মঙ্গলবার বিকেলে সোনাগাছির শীতলা মন্দির এলাকা থেকে বিধান সরণী হয়ে যৌনকর্মীদের মিছিল বিডন স্ট্রীট হয়ে হেদুয়া যায়। সেখানে শেওড়াফুলি, উলুবেড়িয়া, বসিরহাট সহ অন্যান্য এলাকার যৌনকর্মীরা মিছিলে যোগ দেন। সেই মিছিল শ্রদ্ধানন্দ পার্কে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলকারীদের হাতে শুধু দাবি-দাওয়া নিয়ে প্ল্যাকার্ড নয়, ছিল মশালও। এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষে কাজল বোস বলেন, "আমরা ২৫ বছর ধরে সরকারি শ্রমদপ্তরের তালিকায় যৌনকর্মীদের কর্মী হিসাবে নথিভুক্ত করার দাবি জানিয়ে আসছি। তাছাড়া ইমমরাল ট্রাফিকিং অ্যাক্টের বিভিন্ন ধারা বাতিল করতে হবে।"