Advertisment

জিজ্ঞাসাবাদের মুখে ভেঙে পড়ল 'দেশদ্রোহী'র স্কুল পড়ুয়া শিশুকন্যা

পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকরা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

সামনে পিছনে বসে রয়েছে পুলিশ। মাঝে ৯ বছরের শিশুকন্যা। টানা জেরাতেও টলানো যায়নি শিশুটিকে। তবে, মা কোথায় জিজ্ঞাসা করতেই ভেঙে পড়ে মেয়েটি। দেশদ্রোহীতার অভিযোগে গত তিন ধরে শিশু কন্যাটির মা নাজমুন্নিসা কারাবন্ধি। কর্নাটক শাহিন প্রাইমারি অ্যান্ড হাইস্কুলে চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়ারা মিলে সিএএ বিরোধী নাটক মঞ্চস্থ করে। যার সংলাপ রচনায় নাজমুন্নিসার ভূমিকা ছিল বলে জানা গিয়েছে। তাই দেশ বিরোধী কাজের অপরাধে শিশু কন্যার মা নাজমুন্নিসাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। একই অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে শাহিন প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ফরিদা বেগমকে।

Advertisment

চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি শাহিন প্রাইমারি অ্যান্ড হাইস্কুলে চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়ারা মিলে সিএএ বিরোধী নাটক মঞ্চস্থ করে। এরপরই থানায় অভিযোগ দায়ের করেন সমাজকর্মী নীলেশ রক্ষাল। এই অভিযোগ পেয়ে ইউনিফর্ম পরে দুই মহিলা পুলিশকর্মী ও সাধারণ পোশাকে এক পুরুষ পুলিশকর্মী স্কুলে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের ওই নাটক সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জেরা করা হয় ৯ বছরের এক শিশুকেও।

publive-image বিদারের শাহিন স্কুল

তদন্তের জন্য গত শুক্রবার থেকেই শাহিন স্কুলে যাচ্ছে পুলিশ। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে পড়ুয়া সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সোমবার ফের স্কুলে যায় পুলিশ। তবে তদন্ত নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ পুলিশ। তবে, সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, 'স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা সিএএ বিরোধী প্রচারের জন্যই ওই নাটক মঞ্চস্থ করার অনুমতি দিয়েছিলেন।'

আরও পড়ুন: স্কুলে সিএএ বিরোধী নাটক, গ্রেফতার প্রধান শিক্ষিকা-শিশুর মা

নাটকের একটি লাইনকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্কুলের সিইও তৌসিফ মাদিকেরি। নাটকের একটি ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, একটি শিশু আর একজনকে বলছে, 'সরকার মুসলিমদের বলছে ভারত ছেড়ে চলে যেতে।' জবাবে অপর শিশু বলছে, 'মা, মোদী বলছেন, আপনার বাবার ও ঠাকুরদার তথ্য দেখাতে হবে। নইলে তিনি আমাদের দেশ ছেড়ে চলে যেতে বলবেন।' সেই সময় আর এক শিশুকে বলতে শোনা যায়, 'কেউ তথ্য দেখতে চাইলে, তাঁকে চটিপেটা করো।'

publive-image শাহিন স্কুলের অভিভাবকদের জিজ্ঞাসাবাদ।

সাত বছর আগেই নাজমুন্নিসার স্বামীর মৃত্যু হয়। তারপর থেকে একাই মেয়েকে বড় করে তুলছে সে। জানা গিয়েছে, বছর ৩৫-এর নাজমুন্নিসার বাড়িতে টিভি নেই। মোবাইলে দেখা ভিডিও থেকেই সে সিএএ-এর কথা জানতে পেরেছে। মাস কয়েক আগেই মেয়েকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে আসে সে। নিজে অক্ষরজ্ঞানহীন হলেও মেয়েকে শাহিন স্কুলে ভর্তি করেছে সে। আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারের কাছে এই স্কুল স্বাভাবিক পছন্দের বলে বিবেচিত হয়। শাহিন গ্রুপের তরফে সিইও বলেন, 'আমাদের স্কুলে মুসলিমদের পাশাপাশি বহু হিন্দু পড়ুয়া রয়েছে। কখনও কোনও অসুবিধা হয়নি। রাজনৈতিক চাপেই পুলিশ এইসব করছে।'

পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন শাহিন স্কুলের অভিভাবকরা। এক অভিভাবককের কথায় 'কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর বা প্রভাবশালীরা বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করলে কোনও পদক্ষেপ করা হচ্ছে না। অথচ, সিএএ-এর প্রতিবাদে একটি বাচ্চার মন্তব্যকে ঘিরে কত ঘটনা ঘটছে।' আরেক অভিভাক বলেন, '২১ তারিখের ঘটনা কীভাবে দেশদ্রোহীতা হতে পারে তা বুঝতে পারছি না। ৯-১০ বছরের শিশু সিএএ বিরোধী কথা বললে কীভাবে তা জাতীয়তাবাদ বিরোধী হতে পারে?'

Read the full story in English

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

karnataka caa
Advertisment