শিমলায় জল নেই কেন?
কয়েকদিন আগে শিমলায় পর্যটকদের যেতে নিষেধ করে ফেসবুকে একটি পোস্টের জেরে নড়েচড়ে বসেছেন সেখানকার হোটেল ব্যবসায়ী থেকে প্রশাসন। দেশের অন্যতম বিখ্যাত এই হিলস্টেশনে জলসংকটের কথা গোটা দেশের সঙ্গে ছড়িয়ে পড়েছে সারা পৃথিবী জুড়ে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকেই পর্যটকরা শিমলায় আসেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে। বিদেশি পর্যটকদের আসা বন্ধ হয়ে গেলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা তো বিপাকে পড়বেনই, বিদেশি মুদ্রার আমদানি বন্ধ হয়ে গেলে একই সঙ্গে কিছুটা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের অর্থনীতি।
প্রবল জলসংকটের সময়ে দাঁড়িয়ে গতকাল হিমাচল প্রদেশ হাইকোর্ট জানিয়ে দিয়েছেন, জল সরবরাহের ক্ষেত্রে ভিআইপিদের জন্য কোনও বিশেষ ব্যবস্থা করা যাবে না। এই ভিআইপিদের মধ্যে যেমন মন্ত্রী, বিধায়ক, পুলিশ অফিসাররা পড়বেন, তেমনই পড়বেন বিচারকরাও। একইসঙ্গে আদালত জানিয়ে দিয়েছেন, মূল শহরে আগামী এক সপ্তাহ সমস্ত নির্মাণকাজ বন্ধ রাখতে হবে। চলবে না গাড়ি ধোয়াও।
Read more: No special tanker supply for judges, ministers, bureaucrats, MLAs, says HC
হিমাচল প্রদেশের মুখ্যসচিব বিনীত চৌধুরী জানিয়েছেন, শিমলায় জলের মূল উৎস দুটো। এক হল গিরি প্রকল্প, যেখান থেকে প্রতিদিন ২০ মিলিয়ন লিটার জল আসার কথা। আর দু নম্বর হল শহরের সবচেয়ে প্রাচীন গুম্মা প্রকল্প, যেখান থেকে প্রতিদিন ২১ মিলিয়ন লিটার জল আসার কথা। কিন্তু এখন গিরি থেকে জল আসছে প্রতিদিন ৯.৭৫ মিলিয়ন লিটার, অর্ধেকেরও কম, এবং গুম্মার অবস্থা একই রকম। এখান থেকে প্রতিদিন জল মিলছে ১০.৬ মিলিয়ন লিটার, প্রায় অর্ধেক।
গত সোমবার মোট ৬টি প্রকল্প থেকে ৪২ মিলিয়ন লিটারের জায়গায় জল এসেছে ২২ মিলিয়ন লিটার। এরকম খারাপ অবস্থা এর আগে কখনও হয়নি। শিমলা শহরে মোট ২.২ লক্ষ মানুষ বাস করেন। পিক সিজনে এ শহরে প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার পর্যটক আসেন। সপ্তাহান্তে এ সংখ্যাটা বেড়ে ২৫ থেকে ৩০ হাজার পর্যন্ত দাঁড়ায়।
কিন্তু জলের হাল এত খারাপ কেন? কারণ জলের উৎসগুলির হালও খারাপ, জানাচ্ছেন চৌধুরী। তিনি বলেন, "পাম্প স্টেশন গুলিতে পর্যাপ্ত জল নেই। এ বছর বৃষ্টিও খুব কম হয়েছে, তুষারপাতও অতি নগণ্য। সেটা একটা কারণ হতে পারে। আমরা খতিয়ে দেখছি।" শিমলা পুরসভার পক্ষ থেকে রাজ্য সরকারকে দেওয়া একটি নোটে জানানো হয়েছে, আবহাওয়া ও জলবায়ু জনিত কারণে জলের উৎসগুলি শুকিয়ে যেতে বসেছে।
কিন্তু এটা হল এক দিকের চিত্র। শিমলায় একটা বড় অংশের জলের অপচয় হয় পুরনো, ফাটল ধরা পাইপের কারণে। পুরসভার জল সরবরাহের পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। অভিযোগ, ভিআইপিদের জন্য জল সরবরাহের বিশেষ বন্দোবস্ত রয়েছে। অনেক হোটেলও অতিরিক্ত জল নিয়ে নেয়, যার ফলে সাধারণ মানুষ সারাবছরই জলকষ্টে ভোগেন। তাছাড়া শহর ছেয়ে গেছে বেআইনি নির্মাণে, যেসব জায়গায় প্রচুর জল ব্যবহৃত হচ্ছে। হোটেল ব্যবসায়ীদের একাংশের মতে, যত্রতত্র হোম স্টে তৈরি হওয়াও জলসংকটের একটি অন্যতম কারণ।
Read more: Vikramaditya gives three-day ultimatum to Shimla MC
গুম্মার কাছে কৃষকদের একটা বড় অংশ সবজি চাষের জন্য অন্তত তিনটি খাল কেটেছেন। তাঁদেরকে সেখান থেকে জল নিতে বারণ করা হয়েছে, তবে এর ফলে যে দীর্ঘস্থায়ী সমাধান হবে না, সে কথা আধিকারিকরাও জানেন।
সেচ ও জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর ১৫০ জনেরও বেশি কৃষককে গিরি নদী থেকে পাম্প ব্যবহার করে জল তোলার অনুমতি দিয়েছিল। বাস্তবে জল নিচ্ছিলেন এর দ্বিগুণ সংখ্যক কৃষক। সোমবার এ নিয়ে সরকারি মহলে ছুটোছুটি শুরু হয়, শেষ পর্যন্ত কৃষকদের যে নো অবজেকশন সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছিল, তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
অশ্বিনী খাদ নামের একটি জলপ্রকল্প, যেখান থেকে দৈনিক ৮ মিলিয়ন লিটার জল সরবরাহ হওয়ার কথা, ২০১৫-১৬ সালে শহরে জন্ডিস ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে বন্ধ রয়েছে। একটি জল পরিশোধন প্রকল্প থেকে অপরিশোধিত জল সরবরাহ হতেও দেখা গেছে।