রাজস্থানের উদয়পুরে ধর্মীয় উন্মাদনার শিকার দর্জি। বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার পয়গম্বর মন্তব্যকে সমর্থন করায় উদয়পুরের কানহাইয়া লাল নামে দর্জিকে নৃশংস খুনের ঘটনায় গোটা দেশ স্তম্ভিত। সর্বত্র সমালোচনা হচ্ছে। গোটা রাজস্থানে এক মাসের জন্য বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। এর মাঝেই সামনে এসেছে আরও একটি খুনের অভিযোগ। উদয়পুরে দর্জি কানহাইয়ালাল খুনের ঠিক সপ্তাহ খানেক আগেই ২১জুন মহারাষ্ট্রের অমরাবতীতে বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার পয়গম্বর মন্তব্যকে সমর্থন করায় ৫৪ বছর বয়সী পেশায় কেমিস্ট উমেশ প্রহ্লাদরাও কোলহেকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পরিবারের।
তদন্তকারী আধিকারিকদের ধারণা পুর শর্মার পয়গম্বর মন্তব্যকে সমর্থন করে সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের প্রতিশোধ স্বরূপ উমেশকে হত্যা করা হয়েছে। মৃত উমেশের ছেলে সংকেতের অভিযোগের ভিত্তিতে অমরাবতীর সিটি কোতোয়ালি থানার পুলিশ ইতিমধ্যেই হত্যায় জড়িত সন্দেহে মুদ্দসির আহমেদ এবং সহযোগী শাহরুখ পাঠানকে গ্রেপ্তার করেছে। ধৃতদের জেরা করে আরও চারজনের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। যার মধ্যে তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। ধৃতরা হলেন, আব্দুল তৌফিক (২৪), শোয়েব খান (২২) এবং আতিব রশিদ (২২)।
আরও পড়ুন: <বাংলা উত্তরপ্রদেশ-গুজরাট হবে, স্কুলে স্কুলে গীতা পড়ানো হবে: শুভেন্দু>
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে ২১ জুন উমেশ রাত্রে দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার সময় খুন করা হয় উমেশকে। তার অভিযোগে সংকেত পুলিশকে বলেছেন, “আমরা প্রভাত চক থেকে যাচ্ছিলাম এবং আমি এবং বাবা দুটি ভিন্ন স্কুটারে ছিলাম। একটি হাই স্কুলের গেটের সামনে যখন আমরা পৌঁছাই, বাবার স্কুটারের সামনে হঠাৎ করে মোটরসাইকেলে দুজন ব্যক্তি এসে হাজির হন। তারা আমার বাবার বাইকটি জোর করে থামায় এবং তাদের মধ্যে একজন বাবার ঘাড়ের বা’দিকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে। সঙ্গে সঙ্গে বাবা রাস্তায় পড়ে যান। আমি আমার স্কুটার থামিয়ে সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে থাকি । সেই সুযোগে তিন আততায়ী মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়”।
এই ঘটনার পরই দ্রুত উমেশকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও শেষরক্ষা হয়নি। অমরাবতী সিটি পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন আধিকারিক ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, “এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় মোট ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে কেউ একজন তাদের ১০ হাজার টাকা এবং মটর বাইক দিয়ে সাহায্য করেছিল, তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে”। তিনি আরও বলেন, “তদন্তের সময় আমরা জানতে পেরেছি যে কোলহে হোয়াটসঅ্যাপে নূপুর শর্মাকে সমর্থন করে একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট প্রচার করেছিলেন। যে ছুরি দিয়ে উমেশকে হত্যা করা হয়েছে সেটিও উদ্ধার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে উদ্ধার করা হয়েছে একটি, মোবাইল ফোন, খুনের কাজে ব্যবহৃত মোটরবাইক ও জামাকাপড়”।
আরও পড়ুন: <অমিত শাহ নিজের কথা রাখলে, আজ বিজেপির লোক মুখ্যমন্ত্রী হত: উদ্ধব ঠাকরে>
সংকেত দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমার বাবা খুব হাসিখুশি মানুষ ছিলেন। তিনি কখনো কারুর সম্পর্কে কোন খারাপ কথা বলেননি বা কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও তিনি যুক্ত ছিলেন না। আমি এটাও শুনেছি যে তার সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের তাকে খুন করা হয়েছে, কিন্তু আমি বাবার ফেসবুক প্রোফাইল চেক করেছি এবং আপত্তিকর কিছু পাইনি। কী উদ্দেশ্য ছিল তা কেবল পুলিশই বলতে পারবে। আমি কেবল নিশ্চিত করে বলতে পারি বাবাকে নেহাত ডাকাতির জন্য খুন করা হয়নি।”
অমরাবতী শহরের পুলিশ কমিশনার আরতি সিংয়ের সঙ্গে এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “এই ঘটনায় পাঁচজনকে ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং আমরা বাকিদের খোঁজেও তল্লাশি চালাচ্ছি। তারা গ্রেপ্তারের পরেই ফলে হত্যার পেছনে আসল উদ্দেশ্য সম্পর্কে আমরা নিশ্চিত হতে পারব”।