বিপক্ষে জোটসঙ্গী জনতা দল ইউনাইটেড বা জেডি (ইউ), নিমরাজি আরও বেশ কিছু 'বন্ধু' দল। এই পটভূমিতে অগ্রাধিকারের তালিকা থেকে মুসলিম উইমেন (প্রোটেকশন অফ রাইটস অন ম্যারেজ) বিল ২০১৯, বকলমে 'ট্রিপল তালাক বিল' সরিয়ে ফেলেছে এনডিএ সরকার। এমনটাই মোট ওয়াকিবহাল মহলের।
শুক্রবার যখন সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশী আগামী কয়েকদিনের 'লিস্ট অফ বিজনেস' পেশ করেন, তাতে সংসদের অবশিষ্ট পাঁচটি কর্মদিবসে আলোচ্য অথবা উপস্থাপিত হতে যাওয়া ১৭টি বিলের মধ্যে ছিল ট্রিপল তালাক বিল। উল্লেখ্য, সপ্তদশ অর্থাৎ বর্তমান লোকসভায় বিজেপি সরকার দ্বারা উপস্থাপিত প্রথম বিল ছিল এটি, যা পেশ করার সময় বিরোধিতায় মুখর হয়ে ওঠে লোকসভা।
আরও উল্লেখ্য, এর আগে চলতি বর্ষাকালীন অধিবেশনের মেয়াদ বাড়ানোর ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল, কিন্তু ২৬ জুলাইয়ের পর অধিবেশন চলবে কিনা, সে সম্পর্কে এখনও কোনও সরকারি তথ্য পাওয়া যায় নি।
আরও পড়ুন: সংসদে ফের পেশ তিন তালাক বিল
সরকারি সূত্রের খবর, আপাতত "শীর্ষ অগ্রাধিকার তালিকায়" নেই এই বিল, যেহেতু রাজ্যসভায় বিল পাশ করতে প্রয়োজনীয় সমর্থন নিশ্চিত করতে চায় সরকার।
প্রসঙ্গত, চলতি অধিবেশনে সংসদের উভয় কক্ষেই বিল পাশ না হলে, এবং তা রাষ্ট্রপতির অনুমোদন না পেলে, এই সংক্রান্ত যে অর্ডিন্যান্স রয়েছে তার মেয়াদ ফুরিয়ে যাবে। প্রস্তাবিত এই বিলে মুসলমানদের একাংশের মধ্যে প্রচলিত তাৎক্ষণিক তিন তালাক প্রথাকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করার বিধান রয়েছে। ২০১৭ সালে পাশ হওয়া সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ের ভিত্তিতে তৈরি হয় এই বিলের খসড়া, জন্মলগ্ন থেকেই যা জড়িয়ে পড়েছে একাধিক বিতর্কে।
গতমাসে বিরোধীপক্ষের প্রতিবাদের মধ্যেই লোকসভায় পেশ হয় বিলটি, যদিও সেটি আলোচনা এবং পাশের জন্য গৃহীত হয় নি। লোকসভায় ভোটাভুটির পর বিল পেশ করার ক্ষমতা অর্জন করে সরকার (পক্ষে ১৮৬ জন সদস্য, বিপক্ষে ৭৪), এবং সংসদের নিম্নকক্ষে সরকারের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ফলে এই বিল পাশ হতেও অসুবিধে হবে না, কিন্তু রাজ্যসভার পরিস্থিতি আরেকটু জটিল। এক সূত্রের কথায়, "রাজ্যসভায় এরকম অনিশ্চয়তা চলতে থাকলে সরকার ফের একবার অর্ডিন্যান্স জারি করতে পারে।"
আরও পড়ুন: ‘অর্ডিন্যান্স জারি হতেই কমেছে তিন তালাকের অভিযোগ'
সংসদের উচ্চকক্ষে সংখ্যার খেলাটা যথেষ্ট সূক্ষ্ম - জেডি (ইউ) ছাড়া এনডিএ-র আসন সংখ্যা ১০৯, যার মধ্যে রয়েছে বিজেডি, নির্দল এবং অন্যান্য কিছু সদস্যের সমর্থন। সেখানে বিরোধীপক্ষের আসন সংখ্যা ১০৮। বিলের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে মূলত তিনটি দলের অবস্থানের উপর - জেডি (ইউ) এবং তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি (টিআরএস), যাদের রয়েছে ছ'টি করে আসন, এবং ওয়াইএসআর কংগ্রেস, যার রয়েছে দু'টি। মোটকথা, ২৪১-সদস্যের উচ্চকক্ষে বিজেপির আছে ৭৮ টি আসন, এবং এনডিএ-র ১১৫ টি, যেখানে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন বিরোধীপক্ষের আছে ১০৭ টি আসন। এআইএডিএমকে এবং জেডি (ইউ)-কে বাদ দিলে এনডিএ-র আসন সংখ্যা ১০০'র কম।
২০১৭'র সুপ্রিম কোর্ট রায়ের পরে পরেই আইন মন্ত্রক তিন তালাক বিলের প্রস্তাব তোলে, যার আওতায় তাৎক্ষণিক তিন তালাক দিলে তার শাস্তিস্বরূপ তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া হতে পারে। কিন্তু বিরোধীরা একযোগে প্রতিরোধ করায় এই বিল রাজ্যসভার চৌকাঠ পেরোতে পারে নি। ২০১৮ সালে যখন বিলটি প্রথমবার রাজ্যসভায় পেশ হয়, বিরোধীপক্ষ থেকে প্রস্তাব আসে সিলেক্ট কমিটির সুপারিশের, কিন্তু এই বিষয়ে ভোট হওয়ার আগেই মুলতুবি হয়ে যায় রাজ্যসভা, কারণ কক্ষের 'ওয়েল'-এ নেমে এসে স্লোগান তুলতে থাকে শাসক পক্ষ।
বিজেপির অন্দরের খবর, চলতি অধিবেশনে বিল পাশ হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। বর্ষীয়ান এক দলনেতার কথায়, "এই অধিবেশনে বিলটি নিয়ে আলোচনা বা পাশ করানোর কোনও কর্মসূচী নেই। চলতি সেশনে এই বিল পাশ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।"