Advertisment

বান্ধবী খুনে পুলিশের হাতে চমকে দেওয়ার মত তথ্য, রয়েছে একাধিক চ্যলেঞ্জও

১০ জুন পর্যন্ত আফতাব শ্রদ্ধার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট চালিয়ে যান বলে তদন্তে জানতে পেরেছে পুলিশ

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Shraddha Walkar's murder case, accused in Shraddha Walkar's murder case, Delhi girl chopped off, Aftab, delhi crime news, crime news

ভয়ঙ্কর অভিযোগ

মেহরৌলির পুলিশ লিভ ইন পার্টনার খুনে অভিযুক্ত আফতাবকে গতকালই আদালতে হাজির করে এবং তাকে পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজত চাওয়া হয়েছে। পুলিশকে জেরায় আফতাব জানিয়েছে, শ্রদ্ধার দেহ সে মেহরৌলির জঙ্গলে ফেলেছিল। শ্রদ্ধা ওয়াকারের দেহের টুকরোগুলি খুঁজে পাওয়া এবং পুরো ঘটনায় আরও বেশি তথ্য জোগাড় করতে চাইছে মেহরৌলির পুলিশ। সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৩৫টি টুকরোর  মধ্যে প্রায় ১৩টি উদ্ধার করেছে পুলিশ।

Advertisment

পুলিশ জানিয়েছে খুনের ঘটনার পরও আফতাবের মধ্যে কোন রকমের অনুশোচনা কাজ করেনি।জেলার অতিরিক্ত ডেপুটি পুলিশ কমিশনার অঙ্কিত চৌহান জানান, শ্রদ্ধা মুম্বইয়ের মালাদে থাকতেন এবং আফতাবও মুম্বইয়ের বাসিন্দা। একটি ডেটিং সাইটে তাদের আলাপ-প্রেম এরপর একটি ফ্ল্যাট ভাড়া করে দিল্লিতে আলাদা থাকতে শুরু করেন আফতাব- শ্রদ্ধা।

বান্ধবীকে খুনের পর ঘরের দুর্গন্ধ দূর করতে ২২ দিনে কয়েক ডজন সুগন্ধি কেনেন আফতাব। যে ফ্রিজে বান্ধবীর দেহাংশ রাখা হয়েছিল সেখান থেকেই উদ্ধার করা হয়েছে ঠাণ্ডা পানীয়, পানি, মাখন, পেপসি ও দুধ ইত্যাদি। ১০ জুন পর্যন্ত তিনি শ্রদ্ধার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট চালিয়ে যান। পুলিশ আধিকারিকরা জানাচ্ছেন সন্দেহ এড়াতেই বান্ধবীর ইন্সটা অ্যাকাউন্ট নিজেই ব্যবহার করতেন আফতাব। তাঁর কোন বন্ধু মেসেজ করলে শ্রদ্ধার হয়ে আফতাবই সেই মেসেজের উত্তর দিত।

মেহরৌলির চত্তারপুর পাহাড়ি এলাকার এক গলিতে, দিল্লি শহরেরই অন্য জায়গার মত একটি সবুজ অ্যাপার্টমেন্ট আছে। অভিযোগ যে সেই বিল্ডিংয়েই ১৮ মে বছর ২৭-এর লিভ-ইন পার্টনার শ্রদ্ধা ওয়াকারকে হত্যা করেছিল আফতাব পুনাওয়ালা (২৮)। পুলিশকে জেরায় আফতাব জানিয়েছে, শ্রদ্ধার দেহ সে মেহরৌলির জঙ্গলে ফেলেছিল।

মঙ্গলবার সকালে সেই দেহাংশ উদ্ধার করতে আফতাবকে মুখে স্কার্ফ পরিয়ে মেহরৌলির জঙ্গলে নিয়ে যায় দিল্লি পুলিশের একটি বিশেষ দল। তদন্ত শেষে তেমন কিছু না-পেলেও কিছু হাড়ের টুকরো পুলিশ উদ্ধার করেছে। সেগুলো শ্রদ্ধারই কি না, জানতে ফরেনসিক দফতরে পাঠিয়েছেন তদন্তকারীরা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, টুকরোগুলো দেখে মনে হয়েছে, সেটা শরীরের ১৩টি স্থানের।

লিভ-ইন পার্টনারকে নৃশংস ভাবে খুনের পর তাঁর দেহ ফ্রিজে পুরে রেখেছিল আফতাব পুনাওয়ালা। কিন্তু এমন নারকীয় হত্যাকাণ্ডের পরও দক্ষিণ দিল্লির মেহেরৌলির ফ্ল্যাটে আরেক মহিলাকে নিয়ে এসেছিল আফতাব। দিল্লির নৃশংস কাণ্ডের তদন্তে নেমে চোখ কপালে তোলার মতো তথ্য পেল পুলিশ। ২৮ বছরের আফতাব জেরা করে এমনই তথ্য পাওয়া গিয়েছে বলে জানতে পেরেছে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

বাম্বল নামে একটি ডেটিং অ্যাপে এক মনোবিদের প্রেমে পড়ে আফতাব। তার আগে এই অ্যাপেই ২০১৯ সালে শ্রদ্ধার সংস্পর্শে আসে সে। সূত্রের খবর, জুন-জুলাই মাসে একাধিকবার আফতাবের ফ্ল্যাটে আসেন সেই মহিলা। তখন শ্রদ্ধার দেহাংশ বাড়িতেই ফ্রিজে রাখা ছিল। তদন্তকারী গোয়েন্দাদের মতে, গত ১৮ মে শ্রদ্ধাকে খুন করা হয়। এর পর তাঁর ইনস্টাগ্রাম থেকে বন্ধুদের মেসেজ করে আফতাব। যাতে শ্রদ্ধার বন্ধুদের কোনও সন্দেহ না হয়। শ্রদ্ধার ক্রেডিট কার্ডের বিলও মিটিয়ে দেয় যাতে সংস্থাগুলি শ্রদ্ধার মুম্বইয়ের ঠিকানায় যোগাযোগ না করে।

নানা ভাবে খুনের তথ্যপ্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করেছিল আফতাব। তদন্তে জানা গিয়েছে, ২০১৯ সাল থেকে দুজনের প্রেম শুরু হয়। কিন্তু কারওরই পরিবার এতে রাজি ছিল না। পালঘর থেকে দুজনে উচ্চশিক্ষার জন্য মুম্বইয়ে চলে আসে। এর পর একসঙ্গে থাকতে শুরু করে। ২০১৯ সালে শ্রদ্ধা একটি স্পোর্টস সংস্থায় কাজ করতে শুরু করেন। অন্যদিকে, আফতাব একটি পাঁচতারা হোটেলে শেফের প্রশিক্ষণ শেষ করে।

আরও পড়ুন: < দেশের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দোকানে চুরির অভিযোগ, জারি গ্রেফতারি পরোয়ানা >

তবে কয়েক বছরের মধ্যে আফতাব এবং শ্রদ্ধার সম্পর্কে তিক্ততা চলে আসে। একে অপরকে সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করে। ঝগড়াঝাঁটি লেগেই থাকত। দুজনেই এই লড়াই থেকে মুক্তি চাইছিল। এর পর গত এপ্রিলে দুজনে হিমাচল-উত্তরাখণ্ডে ট্রেকিংয়ে যাওয়ার প্ল্যান বানায়।

বেড়ানোর পর দুজনে দিল্লিতে একটি এক কামরার ফ্ল্যাট ভাড়া নেয়। ১৫ মে ভাড়া নেওয়ার পর তিনদিনের মাথায় ফের দুজনের মধ্যে তুমুল ঝগড়া হয়। তার পরই শ্রদ্ধাকে খুন করে আফতাব। ডিসিপি অঙ্কিত চৌহান জানিয়েছেন, শ্বাসরোধ করে শ্রদ্ধাকে খুন করা হয়। এর পরই দেহ টুকরো টুকরো করে আফতাব।

গত ৬ অক্টোবর মানিকপুর থানায় নিখোঁজের মামলা হয়

গত ১৪সেপ্টেম্বর শ্রদ্ধার ভাই শ্রীজয় বিকাশ ওয়াকারকে তার এক বন্ধুকে ফোন করে জানায় গত ২ মাস ধরে শ্রদ্ধার ফোন বন্ধ রয়েছে। এর পরেই শ্রদ্ধার বাবা, বাবা ৬ মানিকপুর থানায় মেয়ের নেমে নিখোঁজের অভিযোগ দায়ের করেন। যদিও তদন্তে নেমে পুলিশকে বেশ কিছু বাঁধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

খুনের ঘটনা ৬ মাস কেটে গিয়েছে এখন পুলিশ মনে করছে খুনের ঘটনায় সমস্ত প্রমাণ সংগ্রহ করা যথেষ্ট কঠিন। খুনের ঘটনায় আফতাবকে গ্রেফতার করা হলেও পুলিশের কাছে এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত সীমিত তথ্যপ্রমাণ হাতে এসেছে। দেহের টুকরোগুলি জঙ্গলের বিভিন্ন স্থানে ছুড়ে ফেলা হয় বলেই জেরায় জানিয়েছে আফতাব।

এখন পর্যন্ত পুলিশ মাত্র ১০-১২টি নমূনা সংগ্রহ করতে পেরেছে। ডিএনএ টেস্টের পরই পুলিশ দেহাংশ গুলির বিষয়ে নিশ্চিত হবে। পুলিশের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল মৃত যুবতীর মাথা উদ্ধার করা, যার মাধ্যমে তাকে শনাক্ত করা যায়। পুলিশ তদন্তে নেমে যে ফ্রিজটি উদ্ধার করে তাতে কোন রক্তের দাগ ছিল না। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে এমন কিছু রাসায়নিক আফতাব ব্যবহার করে যাতে রক্তের দাগ সম্পূর্ণভাবে মুছে ফেলা যায়। পাশাপাশি খুনে ব্যবহার করা অস্ত্রটিও এখনও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।

Murder Delhi Police
Advertisment