শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনে যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের পরিবার ও নিকটাত্মীয়দের ক্ষতিপূরণ নিয়মমাফিক দেওয়া যেতে পারে বলে মনে করেন রেলওয়ে ক্লেইমস ট্রাইব্যুনালের প্রাক্তন চেয়ারম্যান।
২০১৮ সালের আরসিটিএক রায়ে বিচারপতি কে কান্নান এক যাত্রী ট্রেনের আপার বার্থ থেকে পড়ে গিয়ে মারা যাওয়ায় নিকটাত্মীয়দের ৮ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই বিচারপতিই বলেছেন কেবলমাত্র অসুস্থতাই যদি রেলযাত্রার সময়ে মৃত্যুর কারণ না হয় তাহলে আইনমতে তাঁর নিকটাত্মীয়রা ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন।
২০১৮ সালের মামলাতেও রেলওয়ে দাবি করেছিল ওই মৃত যাত্রীর পূর্ব অসুস্থতা ছিল, যেমনভাবে তারা এখন বলছে শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনের মৃত যাত্রীদের অসুস্থতা ছিল। শুক্রবার রেলের এক আধিকারিক প্রকাশিত তালিকা অনুসারে এখনও পর্যন্ত শ্রমিক স্পেশালে ৮০ জন যাত্রী মারা গিয়েছেন।
শ্রমিক স্পেশালে ২৪ ঘণ্টা: এক যাত্রায় আর পৃথক ফল নয়
কোন নিয়মে এঁরা ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন তা ব্যাখ্যা করেছেন বিচারপতি কান্নান। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে তিনি এ বিষয়ে বলেন, “একটা এগশেল রুল রয়েছে, যদি কোনও ব্যক্তি অসুস্থ হন এবং কোন অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটে... উনি অসুস্থ ছিলেন... পড়ে গিয়েছিলেন, এবং কিছু একটা ঘটেছে। ফলে, সাধারণ একজন মানুষ হয়ত মারা যেতেন না, কিন্তু ওই ব্যক্তি মারা গিয়েছেন। সেক্ষেত্রে রেল তো এটা ধরে নিতে পারে না, যে তার সবা যাত্রীই দারুণ সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবে। ফলে এটা একটা ভঙ্গুর ডিমের খোলার মত ব্যাপার ওই ব্যক্তি ক্ষেত্রে, এবং তাঁকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।” রেলওয়ে আইন অনুসারে, কোনও ব্যক্তি অনভিপ্রেত ঘটনার জেরে আহত হলে বা মারা গেলে, তিনি বা তাঁর পরিবার ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকারী।
শ্রমিক ট্রেনে পরিযায়ীদের মৃত্যু সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি বলেন, “আমার মনে হয় প্রতিষ্ঠানে নেতার এ নিয়ে কোনও দৃষ্টিভঙ্গি থাকা সম্ভব এবং তিনি এ ধরনের ক্ষেত্রে অন্য সময়ে ক্ষতিপূরণ না দেওয়া হলেও এরকম সময়ে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়ে আধিকারিকদের পরামর্শ দেবেন।”
বিচারপতি কান্নান বলেন, “ট্রাইব্যুনাল আগে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে যাত্রীদের মৃত্যুর ব্যাপারে মোকদ্দমা গ্রহণ করে ক্ষতিপূরণের অনুমতি দিয়েছে।”
২০১৮ সালে অশোক রায় নামের এক ব্যক্তি আম্রপালী এক্সপ্রেসে লুধিয়ানা থেকে ছাপরা যাচ্ছিলেন। তিনি বার্থ থেকে পড়ে গিয়ে আহত হন এবং ট্রেন যতক্ষণে পুরনো দিল্লি রেলস্টেশনে পৌছয় ততক্ষণে মারা যান। রেল তাদের স্বপক্ষে বলেছিল, “মৃত ব্যক্তি স্বাভাবিক ভাবে মারা গিয়েছেন, কারণ তাঁর কোনও ক্ষত ছিল না এবং কোনও প্রমাণও ছিল না।”
এতে সন্তুষ্ট না হয়ে আদালত বলেছিল, “অন্যভাবে বলা চলে ভঙ্গুর স্বাস্থ্যের ওই ব্যক্তি আরও কোনো ক্ষতি ব্যাতিরেকেই নিজের গন্তব্যে পৌছতে পারতেন, কিন্তু সম্ভাব্য অসুস্থতার কারণেই তাঁর মৃত্যু ত্বরান্বিত হয়েছে ধরে নেওয়া যেতে পারে। ফলে এই মৃত্যুকে ডিমের খোলার নীতি অনুসারে আমরা ধরে নিতে পারি, এবং একে আমাদের অনভিপ্রেত ঘটনা হিসেবেই ধরতে হবে।” আদালত এক্ষেত্রে ৮ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ধার্য করেছিল।
শুক্রবার রেলওয়ের এক আধিকারিক শ্রমিক ট্রেনে মৃত ৮০ জন পরিযায়ীর তালিকা প্রকাশ করলেও সরকারি ভাবে রেলওয়ে তা থেকে দূরত্ব অবলম্বন করেছে। রেলের এক মুখপাত্র সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “রেল মন্ত্রক এখনও পর্যন্ত কোনও তালিকা প্রকাশ করেনি।”
এই তালিকায় ৯ থেকে ২৭ মে পর্যন্ত শ্রমিক ট্রেনে মৃতদের বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বিহারে মৃত এক চার বছরের শিশু, বাড়ির পথে রওনা দেওয়া ছাপরাগামী এক মহিলাযাত্রী, এবং ক্যানসার, হৃদরোগ ও প্যারালিসিস রোগীও। মৃতদের মধ্যে রয়েছেন এক কোভিড-১৯ রোগী ও ট্রেন থাকে ঝাঁপ দিয়ে ট্রেনে কাটা পড়া এক ব্যক্তিও, যাঁরা একই ট্রেনের যাত্রী ছিলেন। এই নথিতে বলা হয়েছে, যিনি ঝাঁপ দিয়েছিলেন তাঁর এই কাজের পিছনে কারণ ছিল, তিনি শাহজাহানপুরের বাসিন্দা ও ট্রেনটি গোরখপুর যাচ্ছিল।
এই তালিকায় রয়েছে এমন যাত্রীদের নামও, যাঁরা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা গিয়েছেন এবং চিকিৎসার সময়ে মারা গিয়েছেন।