কোভিশিল্ড ৬০০ টাকা প্রতি ডোজ! বেসরকারি হাসপাতালের জন্য এই দাম নির্ধারিত করেছে সিরাম ইনস্টিটিউট। কিন্তু কোভিশিল্ডের এই দাম বিশ্বের মধ্যে ভারতেই সর্বোচ্চ। এমনটাই সুত্রের খবর। এই টিকার গবেষণা-উৎপাদনের নেপথ্যে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি-অ্যাস্ট্রাজেনেকা। চুক্তি ভিত্তিতে ভারতে এই টিকা তৈরি করছে সিরাম ইনস্টিটিউট। সেক্ষেত্রে পুনের এই সংস্থাকে গবেষণা কিংবা উৎপাদন বাবদ সেভাবে কোনও মূলধন বিনিয়োগ করতে হয়নি। তারপরেই কেন ভারতে প্রায় ৮ ডলার দাম এই টিকার? সেই প্রশ্ন ঘিরে বিতর্ক দানা বেঁধেছে।
যদিও সিরাম ইনস্টিটিউটের সিইও আদর পুনাওয়ালা বলেছেন, ‘তারা উৎপাদন বাবদ মাত্র ১৫০ টাকা প্রতি ডোজে লাভ রাখছেন।‘ তিনি আরও জানিয়েছেন, প্রথম ১০০ মিলিয়ন ডোজ ভারত সরকারকে ২০০টাকায় পাঠিয়েছে সিরাম পরের ডোজগুলো খোলা বাজারে হাজার টাকায় পাঠাবো আমরা।‘
যদিও পরে সেই দামের পুনর্বিন্যাস হয়েছে। দেশব্যাপী দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তেই ৮ ডলার প্রতি ডোজ বাবদ খোলা বাজারে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সুত্রের দাবি, এই দাম বিশ্ব বাজারের চলতি দামের চেয়ে অনেক বেশি।
এমনকি, রাজ্যগুলোকে প্রায় ৫ ডলার প্রতি ডোজপিছু খরচ করতে হবে। এমনটাও জানিয়েছে সিরাম।
এদিকে, গত বছর অর্থাৎ ২০২০তে যখন করোনা অতিমারীতে ক্ষতবিক্ষত দেশ, সেই সময় করোনা ভ্যাকসিন কে আগে উৎপাদন করবে তা নিয়ে রীতিমতো লড়াই বিশ্বে। রাশিয়া তো তৃতীয় ট্রায়ালের আগেই স্পুটনিক ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমোদন দিয়ে দেয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও বলে ফেলেছিলেন ১৫ অগাস্ট তিনি দেশবাসীর হাতে ভ্যাকসিন তুলে দেবেন। যদিও পরে গবেষক-বিজ্ঞানী মহলের তথ্য অনুযায়ী সে বার্তা ফিরিয়ে নেন।
তবে এখন যখন একাধিক ভ্যাকসিন তৈরি হচ্ছে দেশে, টিকাকরণও চলছে জোরকদমে, তাহলে কেন দেশে আক্রান্ত বাড়ছে? এমনকী টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েও কোভিড ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে বহু মানুষ? প্রথম ডোজ নিয়ে আক্রান্ত হচ্ছে এমন খবর দেশে চাউর হতেই নানা মহলের নানা মত ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পরও কোভিড সংক্রমিত হওয়ায় ভ্যাকসিন কার্যকারীতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
সম্পূর্ণ সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব নয়
একটি বিষয় প্রথম থেকেই বোধগম্য ছিল যে ভ্যাকসিন দেওয়া মানেই ১০০ শতাংশ সুরক্ষিত নয়। যেকোনও ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রেই এই তথ্য সত্য। অতএব কোভিড-১৯ টিকাও এর ব্যতিক্রম নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (সিডিসি) অনুসারে, ভ্যাকসিন নেওয়া দেহে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। কিন্তু সম্ভাবনা একেবারেই নেই, এটি কখনই বলা হয়নি।
বিভিন্ন ট্রায়ালে দেখা গিয়েছে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের কার্যকারীতা ৬০ শতাংশ থেকে ৯৫ শতাংশের মধ্যে থাকছে। তাই টিকা নিয়ে সকলে ১০০ শতাংশ কার্যকারীতা পাবেন কিংবা নিশ্চিন্ত হবেন বৈজ্ঞানিকভাবে সে তথ্যে সিলমোহর দেওয়া হয়নি কখনই। তাছাড়া টিকা দেওয়ার পরে শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে প্রায় দু’সপ্তাহ সময় লাগে। এই সময়ের মধ্যে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কিন্তু প্রবল। যে ব্যক্তি করোনা টিকা নেয়নি প্রায় তার সমান বলা চলে। এরই মধ্যে আবার করোনার ডাবল ভ্যারিয়েন্ট, ট্রিপল ভ্যারিয়েন্ট চলে এসেছে। ফলে যে ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে টিকা তৈরি হয়েছিল, সেখানে কিছুটা কার্যকারীতা কম হবে বলেই মত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।