প্রথম ঘটনা- গত ৩ জুলাই, মহারাষ্ট্র বিধানসভায় যখন নয়া স্পিকার নির্বাচন হচ্ছে, সেই সময় বিরোধীদের বেঞ্চ থেকে স্লোগান ওঠে 'ইডি, ইডি'। এর কারণ হল, শিবসেনার বিদ্রোহী বিধায়ক একনাথ শিণ্ডে বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। তা-ও আবার অভিযোগ, ইডি-র ভয়ে।
দ্বিতীয় ঘটনা- গত ১৪ অগস্ট, বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ গোষ দাবি তুললেন, কেন্দ্র ইডি-কে দায়িত্ব দিয়ে রাজ্যের শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে তদন্ত করার জন্য পাঠিয়েছে। কারণ, সিবিআই স্লথগতিতে তদন্ত করছে।
এই দুটি পর্বে, দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, দুটি ভিন্ন জায়গায় এই জনমত তৈরি হয়েছে যে রাজনৈতিক দলগুলির কাছে ইডি এখন নয়া সিবিআই। কারণ, বিরোধীদের ধরপাকড়ে সিবিআইয়ের থেকেও দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছে ইডি। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের তদন্তমূলক অনুসন্ধানে আদালতের রেকর্ড ঘেঁটে দেখা গিয়েছে, গত ১৮ বছরে ১৪৭ জন রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তার মধ্যে ৮৫ শতাংশই বিরোধী পক্ষের নেতা-নেত্রী।
গত মঙ্গলবার দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের তদন্তমূলক প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়, কংগ্রেস এবং বিজেপি দুই আমলেই গত ১৮ বছরে ২০০-র মতো নেতা-নেত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে সিবিআই। ৮০ শতাংশই বিরোধী দলের। ইডি-র ক্ষেত্রেও ফল একই। এখানেও দ্বিতীয় এনডিএ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ১২১ জন প্রখ্যাত নেতার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেছে ইডি। হানা দেওয়া হয়েছে, জেরা করা হয়েছে, গ্রেফতার করা হয়েছে এমন নেতার সংখ্যা অন্তত ১১৫ বিরোধী নেতাকে। ৯৫ শতাংশই বিরোধী দলের সদস্য। ইডি-র কর্মী সংখ্যা সিবিআইয়ের এক তৃতীয়াংশ।
আরও পড়ুন Express Investigation: মোদী জমানায় ‘অতি সক্রিয়’ CBI! ৯৫ শতাংশ বিরোধী নেতা স্ক্যানারে
ইউপিএ আমলে দশ বছরে মাত্র ২৬ জন নেতার বিরুদ্ধে তদন্ত করেছিল ইডি। যার মধ্যে ১৪ জন (৫৪ শতাংশ) বিরোধী দলের। একনজরে ইউপিএ এবং এনডিএ আমলে ইডি-র তৎপরতা দেখে নিন-
ইউপিএ আমলে ইডি-র স্ক্যানারে দুজন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, তিনজন মন্ত্রী, তিন জন সাংসদ ছিলেন। একজনও গ্রেফতার হননি, ৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ হয়, দোষী সাব্যস্ত হন তিন জন। উল্টোদিকে, দ্বিতীয় এনডিএ সরকারের আমলে একজন মুখ্যমন্ত্রী, ১৪ জন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, ১৯ জন মন্ত্রী, ২৪ জন সাংসদ, ২১ জন বিধায়ক, ১১ জন প্রাক্তন বিধায়ক, ৭ জন প্রাক্তন সাংসদ রয়েছেন ইডি-র স্ক্যানারে। যার মধ্যে ১৯ জন গ্রেফতার হয়েছেন, চার্জশিট পেশ হয়েছে ৩২ জনের বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন Explained: ‘খাঁচাবন্দি তোতাপাখি’-র তদন্তে ইনসাফ! নিজেই কাঠগড়ায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলো
বিরোধী দলের মধ্যে কংগ্রেসের নেতা-নেত্রী বেশি (২৪ জন)। তার পরেই রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস (১৯ জন)। বিজেপি এবং শরিক দলের মাত্র ৬ জন। তৃণমূলে থাকাকালীন শুভেন্দু অধিকারী এবং মুকুল রায় ছিলেন ইডি এবং সিবিআইয়ের স্ক্যানারে। সারদা এবং নারদ কাণ্ডে তাঁদের নাম উঠে আসে। কিন্তু ২০২০ সালে বিজেপিতে যোগ দেন শুভেন্দু। তারও অনেক আগেই ২০১৭ সালে বিজেপিতে চলে যান মুকুল। তার পর থেকে কোনও মামলাতেই শুভেন্দু বা মুকুলের বিরুদ্ধে তৎপরতা দেখায়নি কেন্দ্রীয় এজেন্সি। সারদা ও নারদ কাণ্ডে অন্য তৃণমূল নেতা--মন্ত্রীদের গ্রেফতার করা হলেও এঁদের দুজনকে জেরা করতেও ডাকেনি ইডি-সিবিআই। বিধানসভা নির্বাচনের পর তৃণমূলে ঘরওয়াপসি হয় মুকুলের।