কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের অধীন সরকারি সংস্থা ব্রডকাস্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কনসালট্যান্টস ইন্ডিয়া লিমিটেড (বেসিল)একটি টেন্ডার ডেকেছে। যেসব সংস্থা সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে তথ্য যাচাই ও ভুয়ো খবর চিহ্নিত করার ব্যাপারে সমাধান ও পরিষেবা দিতে পারবে তাদের কাছ থেকে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
এই টেন্ডারে তাদেরই ডাকা হয়েছে, যারা সোশাল মিডিয়ায় ফেক নিউজ ও মিথ্যা তথ্যের মোকাবিলা করতে পারবে, এবং শুধু তাই নয়, এর পিছনের যারা চাঁই তাদের এবং তাদের ভৌগোলিক অবস্থান চিহ্নিত করতে পারবে। সাইবার আইন ও অন্যান্য ফেক নিউজ ফাঁসে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলে সরকারের বেআইনি নজরদারি বেড়ে গেল এবং এর মাধ্যমে ডাইনি শিকার বাড়বে।
টেকলেজিস অ্যাডভোকেটস অ্যান্ড সলিসিটর সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা অংশীদার সলমন ওয়ারিস বলেছেন, “আমরা যদি না জানি যে ফেক নিউজ কী, তাহলে যিনি টেন্ডার পাবেন তিনি কী করে ফেক আর সত্যির মধ্যে ফারাক করবেন? ঠিক কী চিহ্নিত ও পরীক্ষা করতে চাওয়া হচ্ছে? এর ফলে বেআইনি ও অনৈতিক নজরদারির রাস্তা খুলে যাবে।”
ভুয়ো খবর বা মিথ্যা তথ্যের কোনও সংজ্ঞায় পৌঁছনো গিয়েছে কিনা বা ১৩ মে ডাকা টেন্ডারে কোনও সাড়া মিলেছে কিনা, সে সম্পর্কিত বিস্তারিত প্রশ্নমালার কোনও উত্তর বেসিল। ইলেকট্রনিক এবং তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রকের সূত্রে গত এপ্রিল মাসে বলা হয়েছে যে তারা সোশাল মিডিয়া ব্যবহার বিধি সম্পর্কিত গাইডলাইন ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক গাইডলাইন তৈরির শেষ পর্যায়ে রয়েছে এবং এই আইনের খসড়া এখনও জনসমক্ষে আনা হয়নি।
মন্ত্রকের এক মুখপাত্র বলেন, “আমরা এখনও ফের নিউজের গাইডলাইন নিয়ে কাজ করছি। প্রেস ইনফর্মেশন ব্যুরো যে কোনও ভাইরাল হওয়া খবরের ফ্যাকট চেক করে। কিন্তু সোশাল মিডিয়া সম্পূর্ণ অন্য।”
এতদিন পর্যন্ত সরকার ফেক নিউজ ও ভুয়ো তথ্য আটকাতে সোশাল মিডিয়া সংস্থাগুলির উপরেই ভার চাপিয়ে এসেছে। ২০১৮ সালের অগাস্ট মাসে তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী রবি শংকর প্রসাদ সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিকে ফেক নিউজ ও ভুয়ো তথ্য আটকাতে তাদের প্রযুক্তি দৃঢ় করার কথা বলেন। ২০১৮ সালে সারা দেশে পরপর গণপ্রহারের ঘটনার প্রেক্ষিতে রবিশংকর এই মন্তব্য করেছিলেন।
তদন্তকারী সংস্থা বলেছিল, হোয়াটসঅ্যাপের মত সোশাল মিডিয়ায় সম্ভাব্য শিশু অপহরণকারীদের এলাকায় উপস্থিতি সম্পর্কিত পোস্ট পড়ে জনতা মারমুখী ভূমিকা নিয়েছে। হিংসা ছড়ানোর ব্যাপারে হোয়াটসঅ্যাপের অপব্যবহার এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে ফের একবার সামনে আসে, যথন বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে দুটি গোষ্ঠী জনতার জমায়েতের উদ্দেশ্য বিভিন্ন উত্তেজক লেখা, অডিও ভিডিও বার্তা পোস্ট করছিল। এর মধ্যে বেশ কিছু ছিল পুরনো ও ঘটনাবলীর সঙ্গে যুক্ত নয় এমন পোস্টও।
ফেসবুক সংস্থার প্ল্যাটফর্ম হোয়াটসঅ্যাপ এ ধরনের মেসেজ ছডা়নো নিয়ন্ত্রণ না করতে পারার জন্য সরকারের রোষের মুখে পড়ে। ফেসবুক ও টুইটারও এ ধরনের ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সমালোচনার মুখে পড়েছে। যদিও টুইটার এখন ফেক নিউজ বা মিথ্যা তথ্যসমৃদ্ধ টুইটকে লেবেলিং করা শুরু করেছে, তাহলেও বড় আকারে এরকমটা করা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ফ্যাকট চেকিং প্ল্যাটফর্ম অলট নিউজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা প্রতীক সিনহা বলছেন এ ধরনের পোস্টের পিছনে কে রয়েছে, তা চিহ্নিত করা সহজ নয়।
প্রতীক বলেন, “মূল বিষয় হল কী করে এর পরিকল্পনাকারীকে চিহ্নিত করা হবে! মানুষ সর্বদা ভুয়ো তথ্য দিতে চায় না। তারা কোনও ভয়ে বা ভুল বোঝার মধ্যে থাকতে পারে। কিন্তু তার মানে তারা ভুয়ো তথ্য ছড়াতে চায় এমন নাও হতে পারে। ভুয়ো তথ্যের সঙ্গে অপরাধকে যুক্ত করে ফেলার সমর্থক আমরা নই।”
ভুয়ো তথ্যের মূল পাণ্ডা ও তাদের অবস্থান চিহ্নিত করার ব্যাপারে বেসিল বলেছে, সংস্থাকে ভুয়ো তথ্যের ভৌগোলিক অবস্থান বিশ্লেষণ করতে হবে এলং যেসব আপলোড হওয়া ভিডিও, ছবি বা পেজ সম্ভাব্য হিংসা সৃষ্টিকারী, সেগুলিকে চিহ্নিত করতে হবে। এই টেন্ডারে ডেটা বিশ্লেষণের জন্য আর্টিফিশিয়াল ইন্টালিজেন্স ব্যবহার করতেও বলা হয়েছে। প্রতীক সিনহার মত বিশেষজ্ঞরা যদিও বলছেন প্রযুক্তিগতভাবেই তা সম্ভব নয়।
প্রতীকের কথায়, একটা সেরা উপায় হল “সচেতনতা প্রচার, মানুষকে ফ্যাকট চেক করতে শেখানো। টুইটার ও ফেসবুকের মত প্ল্যাটফর্ম পুরনো যেসব ভিডিও ও ছবি ফের ছড়ানো হচ্ছে সে সম্পর্কে ডিসক্লেমার দিতে পারে।”