মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর তোলপাড় ইরান। পরিস্থিতি এখনও রীতিমত উত্তাল। বিক্ষোভের পর প্রায় তিন মাস হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে এখন পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী বুধবার রাজধানী তেহরানের একটি মেট্রো স্টেশনে হিজাবের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালায় বলে অভিযোগ।
বিক্ষোভকারীদের মেট্রো স্টেশনগুলিতে স্কার্ফ জ্বালিয়ে প্রতিবাদে সামিল হতে দেখা গিয়েছে। এরমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় সামনে এসেছে এক ভয়ঙ্কর ভিডিও। সেখানে দেখা যাচ্ছে ইরানে খোমেনির পৈতৃক বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছেন শ’য়ে শ’য়ে বিক্ষোভকারী। ভাইরাল এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে খোমেইন শহরে আয়াতুল্লা খোমেনির পৈতৃক বাড়ির একটি অংশ জ্বলছে।
আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন ভিডিওটি ১৭ নভেম্বরের। বেশ কয়েকটি সংবাদ সংস্থাও আগুন লাগিয়ে দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। যদিও খোমেইন কাউন্টি প্রেস অফিস দাবি করেছে সেখানে কোন হামলা হয়নি। খোমেনির জন্ম ওই বাড়িতে বলে জানা গিয়েছে। বাড়িটি এখন জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সেখানে খোমেনির জীবনের নানা স্মৃতি সংরক্ষিত আছে। ১৯৭৯ সালে ইরানে যে ইসলামিক বিপ্লব হয় তাতে নেতৃত্ব দেন খোমেনি।
অন্যদিকে অপর একটি ভিডিওতে, দেখা যাচ্ছে ভিড় লক্ষ্য করে পুলিশ গুলি চালায়। প্রাণভয়ে লোকজন দৌড়াতে শুরু করেছেন। ট্রেনের ভিতরেও লাঠি দিয়ে মহিলাদের মারতে দেখা গেছে ভিডিওতে। মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল তা ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর থেকে দেশের গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।
ইরান হিউম্যান রাইটসের তথ্য (আইএইচআর) অনুসারে, গত ২ মাসের বিক্ষোভে ৩০০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন । প্রায় ১৫ হাজার মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে ইরান প্রশাসন এই তথ্যকে অস্বীকার করেছে। এদিকে ইরানের একটি আদালত সরকারি ভবনে আগুন লাগানো, শান্তি বিঘ্নিত করা এবং জাতীয় নিরাপত্তা ব্যহত করার অভিযোগে একজন বিক্ষোভকারীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে বলেও জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন: < জু ফেস্টিভ্যালেই ‘উৎসবের’ প্রস্তুতি, শীতে রেকর্ড ভিড়ের আশা, বুক বাঁধছে আলিপুর চিড়িয়াখানা >
যদিও মাহসার মৃত্যুর পর প্রশাসন দাবি করেছে, আমিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। কিন্তু, ওই যুবতীর পরিবারের অভিযোগ, তাঁকে পুলিশি হেফাজতে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমিনি ঠিকমতো হিজাব পরেননি। সেই যুক্তিতেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ইরানে সঠিকভাবে হিজাব না-পরা দণ্ডনীয় অপরাধ। সাকেজে আমিনির শেষকৃত্যের সময় একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সেই ভিডিওয় দেখা গিয়েছে, ব্যাপক বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সেই ভিডিওয় দেখা গিয়েছে যে মহিলারা মাথা থেকে স্কার্ফ খুলে ফেলেছেন। আর, সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছেন।
সংবাদমাধ্যমকে আমিনির মা জানিয়েছেন, তাঁর মেয়ের পোশাক ঠিকঠাকই ছিল। আমিনির মা জানান, তাঁর মেয়েকে আটক করার পরই নিয়ে যাওয়া হয় ডিটেনশন সেন্টারে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় আমিনির ভাইও উপস্থিত ছিলেন। আমিনির ভাই জানিয়েছেন, যে ঘরে তাঁর বোনের জিজ্ঞাসাবাদ চলছিল, সেখান থেকে তিনি আত্মচিৎকার শুনতে পান। এরপরই একটি অ্যাম্বুল্যান্সকে পুলিসকর্মীরা তলব করেন। এরপরই আমিনিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু, হাসপাতালে কোমায় চলে যান ওই যুবতী। হাসপাতালে আমিনির ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে দেখা গিয়েছে যে আমিনি শয্যাশায়ী। তাঁর শরীরে নল লাগানো। কান দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে। চোখে কালশিটের দাগ।
পালটা ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, আমিনি আচমকা হৃদরোগে আক্রান্ত হন। তাঁকে হিজাব আইন শেখানো হচ্ছিল। আমিনির পরিবারের অবশ্য দাবি, আটক করার আগে তাঁদের মেয়ের স্বাস্থ্য ভালোই ছিল। পালটা, ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী ভিডিও প্রকাশ করেছে। সেই ভিডিও এডিট করা হয়েছে। সেই ভিডিওয় এক পোশাক পরা মহিলাকে দেখা যাচ্ছে। যাকে আমিনি বলে দাবি করেছেন পুলিশ আধিকারিকরা। ওই ভিডিওয় দেখা গিয়েছে, তিনি ডিটেনশন সেন্টারে এক মহিলার সঙ্গে কথা বলেছেন। সেখানে তিনি আচমকা নিজের মাথা ধরে পড়ে যাচ্ছেন। আর, তারপরই স্বাস্থ্যকর্মীরা সেই ঘরে ছুটে আসছেন।