বিজেপি-র এক রাজ্যসভা সদস্য শুক্রবার অধিবেশনে একটি প্রস্তাব আনতে চলেছেন, যার গৃহীত হলে বদলে যাবে সংবিধানের প্রস্তাবনা। তিনি চান সংবিধানের প্রস্তাবনায় উল্লিখিত সমাজতান্ত্রিক শব্দটি বাদ দিতে। তাঁর বক্তব্য বর্তমান পরিস্থিতিতে এই শব্দটি অর্থহীন এবং কোনও নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি ছাড়া অর্থনৈতিক ভাবনার জন্য পরিসর উন্মুক্ত করে দিতে এই শব্দটির বাদ যাওয়া প্রয়োজন।
সংবিধানের প্রস্তাবনায় ভারতকে সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রাইভেট মেম্বার্স বিলের জন্য ধার্য সময়ে এই প্রস্তাব আনার জন্য রাকেশ সিং চেয়ারম্যানের অনুমতি চেয়েছিলেন। বুধবার সে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অধিবেশনে গৃহীত সম্স্ত প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয় এবং মন্ত্রী সে সম্পর্কিত আইন আনতে পারেন।
সমাজতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ এ দুটি কথা সংবিধানের প্রস্তাবনা পরে আনা হয়েছে। জরুরি অবস্থার পর ৪২ তম সংবিধান সংশোধনীর সময়ে ভারতীয় সাধারণতন্ত্রের চরিত্র বোঝাতেই এই সংযোজন।
অনেক গোষ্ঠীই চান পুরনো প্রস্তাবনা ফিরিয়ে আনতে। ২০১৫ সালে সাধারণতন্ত্র দিবসের সরকারি বিজ্ঞাপনে ধর্মনিরপেক্ষ ও সমাজতান্ত্রিক শব্দদ্বয় উল্লিখিত হয়নি। সে নিয়ে প্রভূত বিতর্কও হয়েছিল।
রাকেশ সিনহাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল সমাজতান্ত্রিক শব্দ নিয়ে তিনি আপত্তি তুললেন না কেন। এর উত্তরে তিনি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, "ধর্মনিরপেক্ষ শব্দটি নিয়ে বহুরকম দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে পারে। কেউ মনে করতে পারেন এর প্রয়োজন রয়েছে, যদিও আমাদের সংস্কৃতি, সভ্যতা এবং কর্মে ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র নিহিত রয়েছে। কিন্তু বর্তমান আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পরিপ্রেক্ষিতে সমাজতন্ত্র সম্পূর্ণ অর্থহীন শব্দ।"
১৯৭৬ সালে ৪২ তম সংশোধনীতে আনা "সমাজতান্ত্রিক" শব্দটি যে জরুরি অবস্থার সময়ে, যখন মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ ছিল, সে সময়ে আনা হয়েছিল, সে দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে রাকেশ বলেন, সংসদে কোনও রকম আলোচনা বা বিতর্ক ছাড়াই তা গৃহীত হয়।
তিনি বলেন, "ওই শব্দের কোনও প্রয়োজন ছিল না কারণ গণ পরিষদে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছিল এবং আম্বেদকর পুরো বিষয়টি স্পষ্ট করেছিলেন। পরিষদ গোটা বিষয়টিতে একমত হয়।"
রাকেশ সিনহার সওয়াল, "একটা প্রজন্মকে এক ধরনের চিন্তাধারায় বেঁধে রাখা উচিত নয়। তা ছাড়া ৭ দশক ধরে দেশ শাসন করা কংগ্রেস তার অভিমুখ সমাজতান্ত্রিক থেকে কল্যাণমূলক হয়ে নয়া লিবারেলের দিকে বদলেছে। ১৯৯০ সালে তাদের গৃহীত নিও লিবারেল নীতির মাধ্যমে তারা পূর্বতন অবস্থান থেকে সরে এসেছে।"
তিনি বলেন, "নরেন্দ্র মোদী সরকার একাধিক পদক্ষেপের মাধ্যমে কল্যাণমূলক নীতি ফিরয়ে এনেছে, স্পন্দমান সমাজে গোঁড়ামি আর প্রযোজ্য নয়।"