যৌন হেনস্থার অভিযোগে চক্রান্তের ভূত দেখছেন WFI প্রধান ব্রিজ ভূষণ। বিজেপি নেতা তথা WFI প্রধান ব্রিজ ভূষণ শনিবার বলেন, "আমি নির্দোষ, আমি তদন্তের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত। আমি তদন্তে সব রকমের সাহায্য করতেও রাজী। বিচার ব্যবস্থার প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা রয়েছে। এটা কংগ্রেস, কিছু শিল্পপতিদের আন্দোলন, কুস্তিগীরদের নয়’।
সেই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি সুপ্রিম কোর্টের আদেশকে সম্মান করি, আমি FIR-এর প্রতিলিপি এখনও হাতে পাইনি, পেলেই তার উত্তর দেব”। তিনি আরও বলেন যে পরবর্তী WFI প্রধান নির্বাচনের জন্য ইতিমধ্যে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং ৪৫ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি যোগ করেছেন “প্রতিদিন তারা (কুস্তিগীর) নতুন দাবি নিয়ে আসছে। তারা এফআইআর দাবি করেছে, এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। এখন তারা বলছে আমাকে জেলে পাঠানোর চিন্তা করছে, তারা বলছে সব পদ থেকে ইস্তফা দিতে, মানুষের ভোটে আমি এমপি হয়েছি ভিনেশ ফোগাটের কারণে আমি এমপি হই নি’।
এদিকে আজই কুস্তিগীরদের সঙ্গে দেখা করতে যন্তর মন্তরে যান কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, প্রশ্ন তুললেন কেন বাঁচানো হচ্ছে ব্রিজভূষণ সিংকে? দিল্লির যন্তর মন্তরে কুস্তিগীরদের আন্দোলন সপ্তম দিনে পড়েছে। আজ শনিবার কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী নিজে কুস্তিগীরদের সঙ্গে দেখা করেন। তাদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথাও বলেন। প্রিয়াঙ্কা গান্ধী এদিন ভিনেশ ফোগাট, সাক্ষী মালিক এবং বজরং পুনিয়ার সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলে তাদের দাবি দাওয়া অভিযোগের কথা শোনেন।
কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী দিল্লির যন্তর মন্তরে বিক্ষোভরত কুস্তিগীরদের সঙ্গে দেখা করে কেন্দ্রকে নিশানা করে বলেন,”যে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে তা কেউ জানে না। কেন তারা তা দেখাচ্ছে না? যখন এই কুস্তিগীররা দেশের হয়ে পদক জেতে, আমরা সবাই টুইট করি এবং গর্ববোধ করি কিন্তু আজ তারা রাস্তায় নেমেছে ন্যায়বিচারের আশায় এবং তারা ন্যায়বিচার পাচ্ছে না। মহিলা কুস্তিগীররা এই পর্যায়ে পৌঁছানোর জন্য অনেক সংগ্রাম করে এবং আমি বুঝতে পারছি না সরকার কেন ব্রিজভূষণ শরণ সিংকে বাঁচাতে মরিয়া?
অলিম্পিক পদক বিজয়ী বজরং পুনিয়া অভিযোগ করেছেন যে দিল্লি পুলিশ প্রতিবাদী কুস্তিগীরদের খাবার এবং জল দিতে পর্যন্ত অস্বীকার করে “নির্যাতন” করছে। তিনি বলেন, বিক্ষোভস্থলের বিদ্যুৎও বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। তিনি যোগ করেছেন যে কুস্তিগীররা “বিচার না হওয়া পর্যন্ত” প্রতিবাদ করবে। কুস্তিগীর বজরং পুনিয়া বলেন, “যতক্ষণ না ন্যায়বিচার না হয়, পুলিশ প্রশাসন আমাদের যতই নির্যাতন করুক না কেন আমরা প্রতিবাদ চালিয়ে যাব”।
এদিকে আজই প্রতিবাদে সামিল কুস্তিগীরদের সঙ্গে গিয়ে দেখা করার কথা আম আদমি পার্টির আহ্বায়ক এবং দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের। আজ বিকেল ৪টে নাগাদ দিকে যন্তর মন্তরে প্রতিবাদস্থল পরিদর্শন করবেন তিনি এবং সেখানে গিয়ে প্রতিবাদকারী কুস্তিগীরদের সঙ্গে কথা বলবেন কেজরিওয়াল। ক্যাবিনেট মন্ত্রী সৌরভ ভরদ্বাজ এবং অতীশিও এদিনের সফরে কেজরিওয়ালের সঙ্গে যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
শীর্ষ আদালতের নির্দেশের পর দিল্লি পুলিশ WFI সভাপতি ব্রিজ ভূষণ সিংয়ের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে। ২৩শে এপ্রিল থেকে যন্তর-মন্তরে WFI প্রধানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের বসেছেন কুস্তিগীররা। এখন এফআইআর দায়ের হওয়ার পরও কুস্তিগীররা তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
তাঁরা বলেছেন শুধুমাত্র এফআইআর নয়, ব্রিজ ভূষণ সিংকে গ্রেফতার না করা পর্যন্ত আমরা আমাদের অবস্থান চালিয়ে যাব। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ পদক বিজয়ী ভিনেশ ফোগাট, যন্তর-মন্তরে আন্দোলনের অন্যতম মুখ, একটি প্রেস কনফারেন্সে তিনি বলেছিলেন যে “সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে দিল্লি পুলিশের আশ্বাসের পরে লড়াই শেষ হয়নি। “এই লড়াই শুধু এফআইআর দায়ের করা নয়। এই লড়াই ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য, তাকে (সিং) শাস্তি দেওয়ার জন্য, তাকে জেলে পাঠানো এবং WFI সভাপতি পদ থেকে অপসারণ না করা পর্যন্ত আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব”।
ফোগাট এদিন আরও বলেন, ‘প্রতিবাদী কুস্তিগীররা দিল্লি পুলিশের উপর বিশ্বাস হারিয়েছে। “আমরা শুধুমাত্র সুপ্রিম কোর্টের সামনে প্রমাণ পেশ করব, কোনও কমিটি বা দিল্লি পুলিশের সামনে নয়। আমরা দিল্লি পুলিশকে বিশ্বাস করি না। আমরা ছয় দিন ধরে এখানে বসে আছি এবং দিল্লি পুলিশ সব জানার পরও এফআইআরও দায়ের করেনি’।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর দিল্লি পুলিশ ব্রিজ ভূষণ সিংয়ের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে। এরপরও প্রতিবাদী কুস্তিগীররা ক্রমাগত সিংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে আন্দোলনে সামিল রয়েছেন। দিল্লি পুলিশ শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) রেসলিং ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া (ডব্লিউএফআই) প্রধান এবং বিজেপি নেতা ব্রিজ ভূষণ শরণ সিংয়ের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগে দুটি এফআইআর দায়ের করেছে।
দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, পকসো আইন এবং প্রাপ্তবয়স্ক কুস্তিগীরদের অভিযোগের ভিত্তিতে দ্বিতীয় এফআইআর করা হয়েছে। দুটি এফআইআরেই তদন্ত চলছে। আগের দিন, দিল্লির যন্তর মন্তরে বিক্ষোভকারী কুস্তিগীরদের আবেদনের ভিত্তিতে গতকাল সুপ্রিম কোর্টে শুনানি হয়। আদালতে দিল্লি পুলিশ জানিয়েছিল যে শীঘ্রই যৌন হেনস্থার ঘটনায় একটি এফআইআর দায়ের করা হবে।
সুপ্রিম কোর্টে শুনানির পরে, প্রবীণ কুস্তিগীর ভিনেশ ফোগাট বলেছিলেন যে ব্রিজ ভূষণকে জেলে না পাঠানো পর্যন্ত আমরা প্রতিবাদ চালিয়ে যাব। তিনি আরও বলেন, ব্রিজভূষণকে তার সকল পদ থেকে অপসারণের দাবিও তারা তুলেছেন। অন্যথায় তিনি তদন্তকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করবেন।
অন্যদিকে মহিলা কুস্তিগীর সাক্ষী মালিক যন্তর মন্তরে বলেছেন যে এটি জয়ের প্রথম পদক্ষেপ, তবে ব্রিজভূষণ শরণ সিংকে জেলে না পাঠানো পর্যন্ত আমাদের প্রতিবাদ চলবে। আমরা সুপ্রিম কোর্টে আমাদের বক্তব্য রেকর্ড করব।
গত কয়েকদিন ধরে যন্তর মন্তরে বিক্ষোভ করছেন দেশের তাবড় কুস্তিগীররা। কুস্তিগীররাও দাবি করেছেন যে সিংয়ের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি এবং ভয় দেখানোর অভিযোগ তদন্তকারী কমিটির রিপোর্ট সামনে আনার। উল্লেখ্য গত জানুয়ারিতে কুস্তিগীররা যন্তর মন্তরে তিনদিন ধরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করার পর ক্রীড়া মন্ত্রক এই কমিটি গঠন করেছিল।
বিজেপি সাংসদ এবং ডব্লিউএফআই প্রধান ব্রিজ ভূষণ শরণ সিং বলেছেন যে আমি বিচার বিভাগের সিদ্ধান্তে খুশি। তদন্তে নেমেছে দিল্লি পুলিশ। এমন অবস্থায় আমার সহযোগিতার প্রয়োজন হলে আমি তার জন্য প্রস্তুত।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের কুস্তিগীরদের এই আন্দোলনে রাজনৈতিক দলগুলি তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। কংগ্রেস, টিএমসি, আম আদমি পার্টি এবং বাম সহ বেশ কয়েকটি দলের একাধিক নেতা যন্তর-মন্তরে তাদের আন্দোলনে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। TMC সুপ্রিমো তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি টুইটবার্তায় লিখেছেন, “আমাদের সকলের উচিত প্রতিবাদী কুস্তিগীরদের পাশে দাঁড়ানো। আমাদের খেলোয়াড়রা দেশের গর্ব। তারা চ্যাম্পিয়ন। অপরাধীরা যে দলেরই হোক না কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। বিচার হওয়া উচিত। সত্যের জয় হবেই”।