'ওম' এবং 'গাই' (অর্থাৎ গরু) শব্দ দুটি শুনলেই কিছু মানুষ ভাবেন যে দেশ পিছিয়ে চলে যাচ্ছে ষোড়শ শতাব্দীতে, বুধবার উত্তর প্রদেশের মথুরায় এক অনুষ্ঠানে বলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই অনুষ্ঠানে তিনি গবাদি পশুদের নানারকম অসুখবিসুখ প্রতিরোধে এক প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।
ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ (FMD) এবং ব্রুসেলোসিস-এর মতো গবাদি পশুদের পক্ষে প্রাণঘাতী অসুখ নির্মূল করতে ন্যাশনাল অ্যানিম্যাল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম (NADCP) প্রকল্প চালু করে মোদী বলেন, "দেশের দুর্ভাগ্য, যে 'ওম' এবং 'গরু' জাতীয় শব্দ শোনা মাত্র এমন অনেক মানুষ আছেন যাঁদের চুল খাড়া হয়ে যায়। তাঁরা ভাবেন, এবার বুঝি দেশ পিছিয়ে ষোড়শ শতাব্দীতে চলে গেল।" তিনি আরও বলেন, "যাঁরা দেশকে বিনষ্ট করতে চেয়েছিলেন, তাঁরা বিশেষ কিছু বাকি রাখেন নি।"
মোদীর এই মন্তব্যের উত্তরে সরব হয়েছেন অল ইন্ডিয়া মজলিস-এ-ইত্তেহাদ-উল-মুসলিমীন (AIMIM) প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়েইসি। দেশের নানা জায়গায় সম্ভাব্য গো-রক্ষকদের দ্বারা ঘটিত গণপ্রহারে মৃত্যুর ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেছেন, গো-রক্ষার নামে মানুষ খুন হলে নরেন্দ্র মোদীর উচিইত তাতে উদ্বিগ্ন হওয়া।
"যখন গরুর নাম করে মানুষ মারা হচ্ছে, এবং সংবিধানের সর্বনাশ করা হচ্ছে, তখন নরেন্দ্র মোদীর কান খাড়া হওয়া উচিত," বলেছেন ওয়েইসি।
ওয়েইসি আরও বলেন যে যদিও "আমাদের হিন্দু ভাইদের কাছে গরু একটি পবিত্র প্রাণী, তবু বলব, সংবিধানে কিন্তু জীবন এবং সাম্যের অধিকার মানুষকেই দেওয়া হয়েছে"।
২০২৪ পর্যন্ত ১০০ শতাংশ সরকারি খরচায় চলবে এই প্রতিরোধক প্রকল্প, যার জন্য খরচ হবে ১২,৬৫২ কোটি টাকা। এর উদ্দেশ্য হলো গরু, মোষ, ভেড়া, ছাগল, এবং শুয়োর সমেত ৫০০ মিলিয়ন (৫০ কোটি) গবাদি পশুকে প্রতিষেধক টিকা অর্থাৎ ভ্যাকসিন দেওয়া। এছাড়াও ব্রুসেলোসিস রোধে প্রতি বছর টিকাকরণ হবে আনুমানিক ৩৬ মিলিয়ন (৩.৬ কোটি) মেয়ে বাছুরের। উল্লেখ্য, ব্রুসেলোসিস হলে প্রধানত গরুর জননেন্দ্রিয়তে (reproductive organs) বা স্তনে জমে ব্যাক্টেরিয়া, যা সেখান থেকে সংক্রামিত হয় দুধেও। এই প্রকল্পের লক্ষ্য হলো ২০২৫-এর মধ্যে এই দুটি রোগ নিয়ন্ত্রণে আনা, এবং ২০৩০-এর মধ্যে তাদের নির্মূল করা।
এদিন মোদী আরও উদ্বোধন করেন ন্যাশনাল আর্টিফিশিয়াল ইনসেমিনেশন প্রোগ্রাম-এর, যার পরে কৃষকদের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন তিনি। তাঁর এই সফরে 'স্বচ্ছতা হি সেবা' প্রকল্পের সমর্থনে তিনি মহিলাদের সঙ্গে মিলে জঞ্জাল থেকে প্লাস্টিক আলাদা করার কাজেও হাত লাগান।