বিদেশে পড়াশুনা করতে গিয়ে মর্মান্তিক পরিণতি ভারতীয় ছাত্রের। ২৪ বছর বয়সের ওই ছাত্রের নাম গুরবিন্দর নাথ। থাকতেন কানাডার ব্রাম্পটন শহরে। সেই শহরেই এক নামী বিজনেস স্কুলে পড়তেন তিনি। পড়াশোনার পাশাপাশি হাত খরচের জন্য ফুড ডেলিভারি এজেন্ট হিসেবেও কাজ করতেন গুরবিন্দর।
খাবার ডেলিভারি দিতে যাওয়ার সময়ই ঘটে যায় মর্মান্তিক ঘটনা। রাস্তায় তাকে বেশ কিছু অজ্ঞাত পরিচয় দুষ্কৃতী পথ আটকায়। গাড়ি ছিনতাইয়ে বাঁধা দিলে বেধড়ক মারধর করা হয় তাকে। একমকী ধারালো অস্ত্র নিয়েও হামলা চলে তাঁর ওপর। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ওই ছাত্র। সেখানকার বাসিন্দারা তাকে উদ্ধার করে ট্রমা কেয়ার সেন্টারে ভর্তি করেন। ১৪ই জুলাই তার মৃত্যু হয়। এদিকে এই খবর মায়ের কাছ থেকে আড়াল করা হয়। এদিকে ছেলের দেহ গ্রামের বাড়িতে আনা হলে অসুস্থ হয়ে পড়েন গুরবিন্দরের মা। পরে হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর। একই সঙ্গে দাহ করা হয় মা-ছেলেকে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ৯ জুলাই গুরবিন্দর নাথের গাড়ি ছিনতাইয়ের জন্য অজ্ঞাতপরিচয় কিছু দুষ্কৃতী তার ওপর হামলা চালায়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৪ জুলাই তিনি মারা যান। গতকাল সন্ধ্যায় ছেলের দেহ এসে পৌঁছালে মা নারিন্দর কৌর বয়স (৫২) অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও শেষ রক্ষা হয়নি।
পরিবার সূত্রে খবর, গুরবিন্দর সিং বছর দুয়েক আগে কানাডায় গিয়েছিলেন পড়াশোনা করতে। তারা তিন ভাই। এ্দিকে মা-ছেলের মৃত্যুশোকে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।মা-ছেলের শেষ বিদায়ে রাজনৈতিক নেতাকর্মী থেকে শুরু করে, ধর্মীয় সংগঠনের হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন। ছিলেন আম আদমি পার্টির সিনিয়র নেতা অশোক কাটারিয়া, কংগ্রেসের জেলা সভাপতি অজয় মাঙ্গুপুর, ব্রিগেডিয়ার রাজ কুমার, সহ অনেকে।
গুরবিন্দরের ভাই কামাল বলেন, “আমার মা সম্ভবত কিছু কীটনাশক খেয়েছিলেন। আমরা তাকে দ্রুত বালাচৌরের সিভিল হাসপাতালে নিয়ে যাই, সেখানে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। চিকিৎসকরা তাকে পিজিআই-তে রেফার করেন। সেখান থেকে তাকে লুধিয়ানার ডিএমসি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। সেখানে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার রাত আনুমানিক ২.১৫ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন’।
ঘটনার পর গুরবিন্দরের বাবা কৃষাণ দেব বলেন, 'ছেলে সবসময় বিদেশে যেতে চেয়েছিলেন এবং দু বছর আগে উচ্চশিক্ষার জন্য ও কানাডায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এর আগেও গুরবিন্দরের ওপর হামলা হয়েছিল। “আমার ছেলে এই ঘটনার এক মাস আগে একই ধরনের ঘটনার মুখোমুখি হয়েছিল এবং পুলিশে অভিযোগ করেছিল’।
গুরবিন্দরের দিদিমা, বিদ্যা দেবী বলেছেন “আমার পুত্রবধূ প্রথমে নিজেকে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট করার চেষ্টা করেছিল কিন্তু আমরা জানতে পেরেছিলাম, আমার নাতি কমল এবং বলবিন্দর তাকে এক মিনিটের জন্যও একা থাকতে দেয়নি। পরের দিন, বৃহস্পতিবার সকালে, কেউ বাড়িতে ছিলেন না। আমরা ভেবেছিলাম সে যথারীতি মন্দিরে গেছে। কিন্তু পরে আমার বড় নাতি কামাল তাকে বাড়ির বাইরে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে’। শুক্রবার সন্ধ্যায় গুরবিন্দরের মৃতদেহ তার গ্রামে পৌঁছায়। পাঞ্জাবের শহীদ ভগত সিং নগর জেলার গ্রামে মা-ছেলের একই সঙ্গে দাহ করা হয়।