একজন সেনা জওয়ানের ছেলে। তাঁর বাবা যে ইউনিটে চাকরি করতেন, সেই ইউনিটেরই অফিসার হয়েছেন। সিনেমা ছাড়া এমন গল্প তেমন একটা শোনা যায় না। সেই হিসেবে, কর্নেল মনপ্রীত সিং ব্যতিক্রম। তিনি সেই কয়েকজনের মধ্যে একজন, যিনি ২০০৫ সালের জুনে শিখ লাইট ইনফ্যান্ট্রির ১২তম ব্যাটালিয়নে অফিসার হয়েছিলেন। বুধবার সকালে জম্মু ও কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলায় জঙ্গিদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে কর্নেল মনপ্রীত সিং মারা যান।
মোহালি জেলার মোল্লানপুর গরিবদাস শহরের ভরউনজিয়ান গ্রামে তাঁর বাড়িতে এই খবর পাওয়ার পর থেকেই নীরবতা ঘিরে ধরেছে। একসময় চণ্ডীগড়ের উপকণ্ঠে একটি ছোট গ্রাম ছিল ভরউনজিয়ান। এখন অবশ্য এর চারপাশে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন তলের অফিসবাড়ি। তারমধ্যেই, কর্নেল মনপ্রীতের বাড়িটি যেন তাঁর নিজের মতই অতীতের এক নিদর্শন।
তার পিতা প্রয়াত লক্ষ্মীর সিং ১২, শিখ লাইট ইনফ্যান্ট্রিতে একজন নায়েক ছিলেন। তিনি ২০১৪ সালে মারা যান। কিন্তু, যে ব্যাটালিয়নের জওয়ান ছিলেন, সেখানেই ছেলেকে অফিসার হিসেবে দায়িত্ব নিতে দেখে গিয়েছেন। বুধবারের ঘটনার পর মনপ্রীতের ভাই সন্দীপ সিং এবং বোন সন্দীপ কউরের চোখে স্তব্ধতা নেমে এসেছে। তাঁদের মা মনজিত কউরও যেন বাকরুদ্ধ। ঘরে শোকার্ত আত্মীয়দের ঘেরাটোপে কথা বলতেই ভুলে গিয়েছেন। এই স্তব্ধতার মধ্যেই ঘরের দেওয়ালে একটা ফ্রেমবন্দি ফোটো ঝুলছে। যেখানে গোটা পরিবারের সুখী একটা মুহূর্তের ছবি ধরা আছে।
প্রয়াত সেনাকর্তার বান্ধবী শিবানী বললেন, 'মনপ্রীত ফোটোগ্রাফি খুব পছন্দ করত। যেখানেই যেত, ওঁর ক্যামেরা সঙ্গে নিয়ে যেত। আফ্রিকায় রাষ্ট্রসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীর হয়ে কাজ করতে গিয়েছিল। সেখানেও অনেক ছবি তুলেছিল।' শিবানী জানালেন, তিনি আর মনপ্রীত ২০০০ সালের গোড়ার দিকে চণ্ডীগড়ের এক চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের ফার্মে ইন্টার্ন হিসেবে কাজ করত।
মনপ্রীত এসডি কলেজ চণ্ডীগড় থেকে বিকম পাশের আগে মুল্লানপুর কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে পড়েছে। তাঁর ছোটভাই সন্দীপ সিং চণ্ডীগড়ের পঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করেন। তিনি বলেন, 'মনপ্রীত কম্বাইন্ড ডিফেন্স সার্ভিসেস (সিডিএস) পরীক্ষায় পাশ করে। আর, ২০০৪ সালে ইন্ডিয়ান মিলিটারি একাডেমিতে যোগ দিয়েছিল। ২০০৫ সালের জুনে পাস করে ১২ শিখ লাইট ইনফ্যান্ট্রিতে যোগ দেয়।' মনপ্রীত সেই ব্যাটালিয়ন, ১৯ রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের নেতৃত্বে ছিলেন, যে বাহিনী ২০১৭ সালে কাশ্মীরে বুরহান ওয়ানিকে হত্যা করেছিল। ২০২১ সালে গুলির লড়াইয়ে দুই জঙ্গিকে হত্যা করে বীরত্বের জন্য তিনি সেনা পদকও পেয়েছিলেন।
তাঁর বোন সন্দীপ কউর বলেছেন, মনপ্রীত জুন মাসে ছুটিতে এসেছিলেন। ভাইবোন এবং তাঁদের মা অক্টোবরে তাঁকে জম্মু-কাশ্মীরে দেখতে যাবে বলে কথা ছিল। কারণ, শীঘ্রই তাঁর অন্য কোথাও পোস্টিং হওয়ার কথা ছিল। সন্দীপ কউর জানান, দাদা মনপ্রীতের সঙ্গে তাঁর রাখিবন্ধনের সময় শেষ কথা হয়েছিল। তিনি বলেন, 'দাদা লেফটেন্যান্ট কর্নেল হিসেবে ১৯ রাষ্ট্রীয় রাইফেলসে ছিল। তারপর কর্নেল হওয়ার পর তাঁকে কমান্ডিং অফিসার নিযুক্ত করা হয়।'
আরও পড়ুন- কেউ গুজব ছড়াচ্ছে বা মিথ্যা রটাচ্ছে? সতর্ক করুন, কারণ, কী হতে পারে জানেন?
কর্নেল মনপ্রীতের মৃতদেহ চণ্ডীগড়ে বাড়িতে পৌঁছনোর পর শুক্রবার গ্রামেই দাহ করতে চায় পরিবার। ভাই-বোন এবং মা ছাড়াও তাঁর পরিবার বলতে স্ত্রী জগমিত গ্রেওয়াল ও দুই সন্তান, ছয় বছরের কবীর সিং ও দুই বছরের বানি কউর। যারা এখনও বুঝতে পারছে না, পিতৃহারা হওয়াটা কী ব্যাপার!