তাঁর পাঁচ দিনের জলবায়ু উপবাস শেষের একদিন আগে লাদাখের পরিবেশপ্রেমী সোনম ওয়াংচুক দাবি করেছেন যে তাঁকে নিজের ইনস্টিটউটে গৃহবন্দি করা হয়েছে। পুলিশ তাঁকে খারদুং লা-তে প্রবেশ করতে দিতে চাইছে না। নিজের বক্তব্যের সমর্থনে তাঁকে দেওয়া লাদাখ প্রশাসনের বন্ডের অনুলিপিও সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছেন ওয়াংচুক।
এই বন্ড অনুযায়ী, ওয়াংচুককে লেহ জেলার সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো নিয়ে মন্তব্য না-করতে বলা হয়েছে। বিবৃতি না-দিতে বলা হয়েছে। জনসাধারণের সামনে বক্তৃতা না-দিতে বলা হয়েছে। জনসমাবেশ বা সেই জাতীয় কোনও কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ না-করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি, বন্ডে বলা হয়েছে, ওয়াংচুক যেন তাঁর উপবাস নিজের বাড়ির মধ্যেই সীমাবব্ধ রাখেন।
সোশ্যাল মিডিয়া টুইটারে এই ব্যাপারে ওয়াংচুক লিখেছেন, 'আমি ভারতীয় সংবিধানের ২৪৪ অনুচ্ছেদের ষষ্ঠ তফসিলের অধীনে হিমালয়, হিমবাহ, লাদাখ এবং এর জনগণকে বাঁচাতে এবং রক্ষা করতে পাঁচ দিনের জলবায়ু উপবাস ঘোষণা করেছি। আমাকে প্রাথমিকভাবে বলা হয়েছিল যে আমার নিরাপত্তার জন্য পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আমি না-হলে পুলিশ নিতে চাইনি।'
তবে, ওয়াংচুকের গৃহবন্দি করার অভিযোগ অস্বীকার করেছে লেহ পুলিশের সুপার পিডি নিত্য। তিনি সংবাদসংস্থা পিটিআইকে বলেছেন, 'ওঁকে (ওয়াংচুককে) প্রশাসনের পক্ষ থেকে খারদুং লা পাসে পাঁচ দিনের উপবাস করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। কারণ, সেখানে তাপমাত্রা মাইনাস ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে নেমে গেছে। এর ফলে তাঁর এবং তাঁর অনুগামীদের জন্য ওই জায়গায় যাওয়া প্রচণ্ড ঝুঁকির ব্যাপার ছিল। সেই কারণে আমরা তাঁকে তাঁর হিমালয়ান ইনস্টিটিউট অফ অল্টারনেটিভস লাদাখ (HIAL) সংস্থার ক্যাম্পাসে উপবাস করার অনুরোধ করেছি।'
প্রসঙ্গত, সোনম ওয়াংচুকের কথা মাথায় রেখেই আমির খানের ‘থ্রি ইডিয়টস’ ছবির মুখ্য চরিত্র ফুংসুক ওয়াংরু তৈরি হয়েছে। লাদাখে সমাজসেবামূলক কাজের জন্য সোনম ওয়াংচুক বিখ্যাত। হাতেকলমে ছাত্রদের বিজ্ঞানের শিক্ষা দিতে ২০১৮ সালে তিনি ‘হিমালয়ান ইনস্টিটিউট অফ অলটারনেটিভস’ নামে এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন। 'থ্রি ইডিয়টস' ছবির পর থেকে বহু মানুষের আইকন সোনম ২০১৮ সালে পেয়েছেন রমন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার।
আরও পড়ুন- টার্গেট বাংলা, কুর্সিতে ফিরলেই বিজেপি সিএএ জারি করবে, ফাঁস করলেন সুকান্ত
সোনমের বক্তব্য, নানা সমস্যায় জর্জরিত লাদাখের মানুষ। শিল্প ও বাণিজ্যিক সম্প্রসারণের জেরে বিপর্যস্ত তুষাররাজ্যের বাস্তুতন্ত্র। তিনি সেই সমস্যার সমাধান ঘটিয়ে লাদাখের উন্নয়ন চান। কারণ, লাদাখের দুই-তৃতীয়াংশ হিমবাহ বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। সেজন্য দরকার ষষ্ঠ তফসিলের বর্ধিতকরণ। আর, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে অনিয়ন্ত্রিত শিল্প ও বাণিজ্যিক সম্প্রসারণ পরিবেশ সুরক্ষা। লাদাখের দাবির প্রতি কেন্দ্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই খারদুং লা, যেখানে মাইনাস ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে তাপমাত্রা, সেখানে ২৬ জানুয়ারি তাঁর পাঁচ দিনের জলবায়ু উপবাস শুরু করেছিলেন সোনম ওয়াংচুক।
এই পরিস্থিতিতে ওয়াংচুকের পাশে দাঁড়িয়েছে সিপিএম। কেন্দ্রকে তীব্র আক্রমণ করে সিপিএম অভিযোগ করেছে, ওয়াংচুককে গৃহবন্দি করে তাঁকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলের অধীনে আনার ব্যাপারে কথা বলতে বাধা দিয়েছে মোদী সরকার। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি টুইট করেছেন, 'ম্যাগসেসে পুরস্কারপ্রাপ্ত সোনম ওয়াংচুকের জীবন থ্রি ইডিয়টসকে অনুপ্রাণিত করেছে। তিনি লাদাখের অনন্য বৈশিষ্ট্যগুলো রক্ষা করার জন্য একটি প্রচারাভিযান শুরু করেছিলেন। এই জন্য তাঁকে গৃহবন্দি করা হয়েছে! প্রজাতন্ত্র দিবসে ষষ্ঠ তফসিল এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির ব্যাপারে তাঁকে কথা বলতে দেওয়া হয়নি! নিন্দনীয়।'
Read full story in English