কোরিয়ার বহুজাতিক মোটরগাড়ি সংস্থা হুন্ডাইকে ঘিরে বিতর্কের পারদ চড়ছে। পাকিস্তানে হুন্ডাইয়ের এক ডিস্ট্রিবিউটর পার্টনার সম্প্রতি 'কাশ্মীরের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম' উল্লেখ করে একটি টুইট করেছিল। যা আগুনে ঘৃতাহুতি করে। এই ঘটনায় কড়া অবস্থান নেয় ভারত। দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছিল ভারতের বিদেশ মন্ত্রক। অন্যদিকে, দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী চুং ইউই ইয়ং, মঙ্গলবার বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে ফোন করেন। কথা হয় দু'জনের। জয়শঙ্করের দাবি, ভারতবাসী ও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ওই সোশাল মিডিয়া পোস্টের জন্য 'অনুতাপ' প্রকাশ করেছেন।
এ দিন টুইটে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর জানান, তাঁর সঙ্গে ফোনে দক্ষিণ কোরিয়ার বিদেশমন্ত্রীর কথা হয়েছে। সেখানেই হুন্ডাইয়ের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেন জয়শঙ্কর। টুইটে বার্তায় জয়শংকর লেখেন, ‘আজ কোরিয়া প্রজাতন্ত্রের বিদেশমন্ত্রী চুং ইউই ইয়ংয়ের ফোন পেয়েছি। দ্বিপাক্ষিক এবং বহুপাক্ষিক বিষয়ের পাশাপাশি হুন্ডাই বিষয়টি নিয়েও আলোচনা করেছি আমরা।’
এই বিতর্কের প্রেক্ষিতে ভারেতর বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বিবৃতি প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা হুন্ডাই পাকিস্তানের তথাকথিত কাশ্মীর সংহতি দিবস নিয়ে একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট দেখেছি। ৬ ফেব্রুয়ারি রবিবার এই পোস্টটি করা হয়েছিল সামাজিক মাধ্যমে। তারপরই, সিওলে আমাদের রাষ্ট্রদূত হুন্ডাই সদর দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং ঘটনার ব্যাখ্যা চান। আপত্তিকর পোস্টটি পরে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কোরিয়া প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রদূতকে গতকাল, ৭ ফেব্রুয়ারি তলব করা হয়েছিল বিদেশ মন্ত্রকের তরফে।
অরিন্দম বাগচির সংযোজন, ‘হুন্ডাই মোটরস একটি বিবৃতি জারি করে ভারতের জনগণের কাছে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছে এবং এটা স্পষ্ট করে যে তারা কোনও রাজনৈতিক বা ধর্মীয় বিষয়ে মন্তব্য করে না। ভারত বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিদেশি কোম্পানির বিনিয়োগকে স্বাগত জানায়। তবে এটাও প্রত্যাশা করে যে এই ধরনের কোম্পানি বা তাদের সহযোগীরা ভারতের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার বিষয়ে মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকবে।’
কী নিয়ে বিতর্ক?
হুন্ডাই ইন পাকিস্তান– এই নামে একটি টুইটার হ্যান্ডেল থেকে, ৫ ফেব্রুয়ারি একটি টুইট করা হয়। ওইদিন অর্থাৎ, ৫ ফেব্রুয়ারিকে কাশ্মীর সংহতি দিবস হিসেবে পালন করে পাকিস্তান। পাকিস্থানে বিচ্ছন্নতাবাদীদের যে লড়াই চলছে, তাকেই খুল্লমখুল্লা সিলমোহর দেওয়া হয় এই দিনে। এখন, ‘হুন্ডাই ইন পাকিস্তান’ টুইটার হ্যান্ডল থেকে করা ওই টুইটে স্বাধীনতার লড়াইয়ে কাশ্মীরিদের আত্মবলিদানকে কুর্নিশ করা হয়। বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কার্যকলাপে পাকিস্তানের সমর্থনের যে সুর, হুন্ডাইয়েরও সেই সুর ফুটে ওঠে, মিলে সুর মেরা তুমহারা হয়ে যায়। ওই একই পোস্ট ফেসবুকেও শেয়ার করা হয়, তাতে বিতর্কে ঘৃতাহুতি পড়ে। ভারতের পক্ষে বিরক্তি উদ্রেককারী এই টুইট নিয়ে সোশ্য়াল মিডিয়ায় তোলপাড় পড়ে। ভারতে হুন্ডাইয়ের গাড়ি বয়কটের আওয়াজ ওঠে।
পরে হুন্ডাই মটরস-এর পক্ষ থেকে বিবৃতি জারি করে বলা হয়, ব্যবসায়িক নীতি হিসাবে সংস্থা কোনও দেশ বা অঞ্চলেক রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় বিষয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকে। কৃতকর্মের জন্য ভারতীয়দের কাছে 'অনুতাপ'ও প্রকাশ করা হয়।
মারুতি সুজুকির পর হুন্ডাই ভারতে দ্বিতীয় গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থা। ভারত থেকে হুন্ডাই সবচেয়ে বেশি গাড়ি রফতানি করে। চলতি বছর জানুয়ারিতে হুন্ডাই ভারতে ৪৪,০২২টি গাড়ি বিক্রি করেছ। ২০২১-এ দেশে এই সংস্থার মোট গাড়ি বিক্রির সংখ্যা ৫০৫,০৩৩। যা ২০২০-র তুলনায় ১৯.২ শতাংশ বেশি।
আরও পড়ুন- এবার গাড়ির চাকায় গড়িয়ে অনেক দূর পাক-বিতর্ক, কী ভাবে জানেন?
Read in English