অগ্নিগর্ভ শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপক্ষের প্রাসাদ জনতা দখলের পর তিনিও আর প্রশাসন চালানোর সাহস পাননি। রীতিমতো ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। ঘোষণা করেছেন, শ্রীলঙ্কায় সর্বদলীয় সরকার গঠনে সাহায্য করতেই পদত্যাগ করছেন।
কিন্তু, ক্ষুব্ধ জনতা আর সেসব ঘোষণায় ভুলল না। পুড়িয়েই দিল শ্রীলঙ্কার সদ্যপ্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি। মাত্র কয়েক মাস আগেই রনিলের পূর্বসূরি শ্রীলঙ্কার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মহিন্দ্রা রাজাপক্ষের বাড়িও এভাবেই পুড়িয়ে দিয়েছিলেন দ্বীপরাষ্ট্রের উত্তেজিত জনতা।
শনিবার বিক্ষোভকারীরা আক্রমণ করেন প্রেসিডেন্ট গোয়াবায়া রাজাপক্ষের প্রাসাদ। প্রেসিডেন্টের প্রাসাদে যাওয়ার প্রতিটি রাস্তা গিজগিজে মাথার ভিড়ে ঢেকে যায়। যা সামলানোর ক্ষমতা ছিল না কোনও নিরাপত্তারক্ষীরই। পুলিশ ব্যারিকেড বানিয়ে গুলি চালিয়েও শেষরক্ষা করতে পারেনি। সেসব উপেক্ষা করেই প্রাচীর টপকে কাতারে কাতারে মানুষ প্রেসিডেন্ট রাজাপক্ষের প্রাসাদে ঢুকে পড়ে।
তাঁর আসবাব দখল করে নেয়। শ্রীলঙ্কার জাতীয় পতাকা থেকে প্রেসিডেন্টের হেলমেট সব ছিনতাই করে। প্রেসিডেন্টের বাসভবনের সুইমিং পুলে ইচ্ছেমতো সাঁতার কাটে। সোশ্যাল মিডিয়া এবং গণমাধ্যমের পরদায় সেই চূড়ান্ত আইন-শৃঙ্খলার অবনতি দেখে রীতিমতো শিউড়ে উঠেছেন ভারতীয় উপমহাদেশ তথা বিশ্বের তাবড় প্রশাসনের কর্তারা।
পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে রাজাপক্ষে আগেই তাঁর প্রাসাদ থেকে পিঠটান দিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্টের হাল দেখে আর নিজের ওপর ভরসা রাখতে পারেননি প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিঙ্ঘেও। তড়িঘড়ি ইস্তফার ইচ্ছা প্রকাশ করে তিনি টুইট করেন, 'সাংবিধানিক সরকার আর জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমি পার্টি নেতৃত্বের সেরা পরামর্শ মেনে নিলাম। সর্বদলীয় সরকার গঠনে সাহায্য করতে আমি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিচ্ছি।'
শুধু তাই নয়, বিক্ষোভের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে পুলিশের হাতে সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের আহত হওয়ার খবরে দুঃখপ্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে টুইট করা হয়, 'বিক্ষোভের খবর সংগ্রহ করার সময় নিরাপত্তা বাহিনীর আঘাতে সাংবাদিকরা আহত হওয়ায় রনিল বিক্রমসিঙ্ঘে গভীর দুঃখপ্রকাশ করেছেন। শ্রীলঙ্কায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়।'
আরও পড়ুন- চরম ডামাডোল শ্রীলঙ্কায়, ইস্তফা দিলেন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিঙ্ঘে
তবে, যে জনগণের নিরাপত্তার জন্য রনিলের এই ইস্তফা, সেই দ্বীপরাষ্ট্রবাসী কিন্তু, এসব ছেঁদো টুইট গায়েই মাখেননি। কে কার নিরাপত্তা দেয়, কার্যত এই ভঙ্গিমাতেই শ্রীলঙ্কার সদ্যপ্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে তাঁরা হামলা চালান। আগুন ধরিয়ে দেন রনিল বিক্রমসিঙ্ঘের বাড়ি। উপস্থিত পুলিশকর্মীরা সেসব দাঁড়িয়ে দেখলেও সামনে এসে বাধা দেওয়ার সাহস পাননি।
Read full story in English