প্রবল দাবদাহ। ক্রমেই বাড়ছে বিদ্যুতের চাহিদা। কেন্দ্র ইতিমধ্যেই পরিসংখ্যা তুলে ধরে জানিয়েছে যে, গত বছরের সর্বোচ্চ চাহিদার (২০০.৫৩৯ মেগাওয়াট) তুলনায় গত মঙ্গলবার বিদ্যুতের চাহিদা (২০১.০৬৬ মেগাওয়াট) বেশি ছিল। আগামী মে এবং জুনে বিদ্যাতের চাহিদা প্রায় ২১৫.২২০ মেগাওয়াট স্পর্ষ করতে পারে বলে অনুমান কেন্দ্রের। এই পরিস্থিতিতে, দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বিদ্যুৎ ঘাটতি শুরু হয়েছে। চাহিদার সঙ্গে যোগানের ফারাকই এই ঘাটতির কারণ। বিরোধী কংগ্রেস এই অবস্থার জন্য কেন্দ্রকে দায়ী করেছে। সমস্যা মেটাতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলিকে একযোগে কাজের কথা বলেছে মোদী সরকার।
একনজরে কোন কোন রাজ্য প্রবল বিদ্যুৎ ঘাটতির সম্মুখীন-
ঝাড়খণ্ড-
পিক আওয়ারে ঝাড়খণ্ডে বিদ্যুৎ খরচেন পরিমান ১,৪০০-২,১০০ মেগাওয়াট। এপ্রিলের আগে ঝাড়খণ্ডে বিদ্যুৎ সরবরাহ হত প্রায় ১,৮৫০ মেগাওয়াট। সরকার সাধারণত ২০০-২৫০ মেগাওয়াটের ঘাটতি মেটাতে সক্ষম। প্রবল দাবদাহে চাহিদা এখন বেড়ে হয়েছে ২,৫০০-২,৬০০ মেগাওয়াট। দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (ডিভিসি) সাধারণত ৫৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে। মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন ঘাটতি পূরণের জন্য ডিভিসি আরও ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে বলেছেন। রাজ্য সরকার পাওয়ার এক্সচেঞ্জের জন্য বিড জমা করেছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তা নিয়ে সদর্থক কোনও প্রতিক্রিয়া আসেনি। ঘটতি মেটাতে বেসরকারি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলছে।
জম্মু-কাশ্মীর-
কেন্দ্র শাসিত জম্মু-কাশ্মীরের বেশ কিছু অংশে ১৬ ঘন্টার বেশি বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সম্মুখীন হচ্ছে। চাহিদা ৩,০০০ মেগাওয়াট হলেও সরবরাহ তার অর্ধেকেরও কম। জম্মু-কাশ্মীরের নিজস্ব বিদ্যুৎ প্রকল্পের ক্ষয়িষ্ণু ক্ষমতা এই সমস্যা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। কেন্দ্র শাসিত এই অঞ্চলের বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলির ১,২১১ মেগাওয়াটে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে। তবে এখন সেগুলি থেকে মাত্র ৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ মেলে। জম্মু-কাশ্মীরের NHPC-র প্রকল্পগুলির ২০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন থাকলেও বর্তমানে ১,৪০০ মেগাওয়াটের কম উৎপাদন হয়।
এর মধ্যে জম্মু-কাশ্মীরপ পায় ১৫০ মেগাওয়াটের কিছু বেশি। সরকারি আধিরিকদের মতে, উপত্যাকায় প্রায় ২,৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে। প্রশাসন সমস্যা কমাতে উচ্চ শুল্ক দিয়ে প্রায় ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনছে।
রাজস্থান-
২০২১ সালের এপ্রিল মাসে রাজস্থানে দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা ছিল প্রায় ২,১৩১ লক্ষ ইউনিট। দৈনিক প্রায় ২,৮০০ লক্ষ ইউনিট ঘাটতি রয়েছে। একইভাবে, গত বছর সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১১,৫৭০ মেগাওয়াট, যা এখন ১৩,৭০০ মেগাওয়াট। প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি (জ্বালানি) এ সাওয়ান্ত বলেছেন যে, 'দেশব্যাপী কয়লা সংকটের কারণে উৎপাদন প্রভাবিত হয়েছে এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে সম্পূর্ণ ক্ষমতায় উৎপাদন হচ্ছে না। রাজ্যের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলি ১০.১১০ মেগাওয়াট পর্যন্ত উৎপাদনে সক্ষম। কিন্তু এখন সেগুলি থেকে মিলছে ৬,৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
হরিয়ানা-
হরিয়ানা অন্তত ৩,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতির সম্মুখীন। মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টর বলেছেন যে, 'সরকার ঘাটটি পূরণের জন্য একাধিক উৎস থেকে ব্যবস্থা করছে। হরিয়ানা মুন্দ্রা পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে সরবরাহ পুনরুদ্ধারের জন্য আদানি পাওয়ার লিমিটেডের সঙ্গে আলোচনা করছে। অদূর ভবিষ্যতে ১,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরুদ্ধারের আশা করছি।' বিদ্যুৎ মন্ত্রী রঞ্জিত সিং বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তাপপ্রবাহ এবং পরিকাঠামোর উল্লেখ করেছেন। ততাঁর কথায়, 'আমি আশা করি আদানি পাওয়ার থেকে বকেয়া 1,400 মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এক সপ্তাহের মধ্যে পাওয়া যাবে। ফলে আগামী শনিবারের মধ্যে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি ঠিক হবে।'
পাঞ্জাব-
কয়লার ঘাটতি এবং কারিগরি সমস্যাকেই এই ঘাটতির প্রধান কারণ বলে দাবি করছে রাজ্য সরকার৷ বুধবার বিদ্যুতের চাহিদা ৭,৮০০ মেগাওয়াট এবং যোগান ছিল প্রায় ৭,০০০ মেগাওয়াট। এর ফলে পাঞ্জাবের প্রান্তিক এলাকায় ২-৫ ঘন্টা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। যদিও শিল্পাঞ্চলে বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন হওয়ার খবর নেই। গম কাটার কারণে এখন কৃষিতে বিদ্যুৎ ব্যবহার সামান্য বেড়েছে। পাঞ্জাবে থার্মাল প্ল্যান্ট ৫,৪৮০ মেগাওয়াট উৎপাদন করে। বুধবার পর্যন্ত, কয়লার ঘাটতি সত্ত্বেও তারা প্রায় ৩,৭০০0 মেগাওয়াট উৎপাদন করছে। আধিকারিকরা জানিয়েছেন, প্রায় ১,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রক্ষণাবেক্ষণে সংরক্ষিত এবং বাকিটা প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে উৎপাদন হচ্ছে না।
ওডিশা-
ওডিশা প্রতিদিন প্রায় ৪০০ মেগাওয়াটের ঘাটতির সম্মুখীন হয়েছে। এই রাজ্যে গড় চাহিদা ৪,১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এবং সর্বোচ্চ চাহিদার সময় ৪,৪৫০ মেগাওয়াটে পৌঁছায়। সোমবার মুখ্যসচিব সুরেশ চন্দ্র মহাপাত্র বিদ্যুৎ ঘাটতি নিয়ে বৈঠক করেছেন। সরকারি আধিকারিকদের মতে, ঘাটতি সাময়িক এবং এক সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। সরকারি সূত্রে খবর, ঘাটতি কারণ প্রযুক্তিগত সমস্যা। সুন্দরগড় জেলায় এনটিপিসির একটি ৪৪১ মেগাওয়াট ইউনিট অকেজ হয়ে পড়েছে। ওডিশা পাওয়ার জেনারেশন কর্পোরেশনের একটি ইউনিট বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণের কারণে বন্ধ।
Read in English