হিজাব কি ইসলামের একটি অপরিহার্য অনুশীলন? স্কুল বা কলেজের নির্দিষ্ট পোশাকের উপর পড়ুয়ারা অন্য পোশাক পরেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারেন? এসব প্রশ্নের উত্তর হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টের অলিন্দে ঘোরাফেরা করছে। কিন্তু একটি বিষয় স্পষ্ট। অন্য ধর্মের মেয়েদের মতো, কর্নাটকে মুসলিম মেয়েদেরও স্কুল ও কলেজে যাওয়ার সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে।
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ দলিত স্টাডিজের খালিদ খানের জাতীয় নমুনা সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ২০০৭-২০০৮ এবং ২০১৭-২০১৮-এর মধ্যে, ভারতে উচ্চ শিক্ষায় মুসলিম মহিলাদের গ্রস অ্যাটেনডেন্স রেশিও ৬.৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৩.৫ শতাংশ হয়েছে। গ্রস অ্যাডেডেন্স রেশিও হল ১৮-২৩ বছর বয়সী মোট মুসলিম মেয়েদের মধ্যে কলেজে পড়া ওই একই বয়সের মধ্যে থাকা মেয়েদের সংখ্যার অনুপাত। প্রসঙ্গত, ২০০৭-২০০৮ সালে উচ্চশিক্ষায় হিন্দু মহিলাদের গ্রস অ্যাটেডেন্স রেশিও ১৩.৪ শতাংশ এবং ২০১৭-২০১৮ সালে যা ২৪.৩ শতাংশে গিয়ে দাঁড়ায়।
কর্নাটকেও মুসলিম মেয়েদের স্কুল, কলেজে পড়ার সংখ্যা দিনে-দিনে বেড়েছে। যে কর্নাটকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেয়েদের হিজাব পড়া নিয়ে এত শোরগোল, সেই রাজ্যেও উচ্চশিক্ষায় মুসলিম মহিলাদের গ্রস অ্যাটেডেন্স রেশিও ২০০৭-০৮ সালে সর্বনিম্ন ১.১ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০১৭-১৮ সালে ১৫.৮ শতাংশে পৌঁছেছে। স্কুলের তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, অতীতের তুলনায় বর্তমান সময়ে বিপুল সংখ্যায় মেয়েরা পড়াশোনায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন। স্কুল, কলেজে ভর্তি হচ্ছেন।
ইউনিফায়েড ডিস্ট্রিক্ট ইনফরমেশন সিস্টেম ফর এডুকেশন (UDISE) প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার তথ্য অনুযায়ী, জাতীয়স্তরে উচ্চ প্রাথমিকে (পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি) মেয়েদের মোট নথিভুক্তিতে মুসলিম তালিকাভুক্তির অংশ ২০১৫-১৬ সালে ১৩.৩০ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৪.৫৪ শতাংশ। কর্ণাটকে, এই পরিসংখ্যান ১৫.১৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৫.৮১ শতাংশ হয়েছে।
আরও পড়ুন- দেশে সবচেয়ে বড় ব্যাংক প্রতারণার অভিযোগ এবার প্রকাশ্যে আনল সিবিআই
প্রাথমিক স্কুল শিক্ষা নিয়ে কাজ করা এক সংস্থার শীর্ষ কর্তার মতে, ''মেয়েদের তালিকাভুক্তির এই বৃদ্ধি ধর্মীয় ও সামাজিক গোষ্ঠীগুলির মধ্যে কমেছে। রাজ্য জুড়েই এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।'' তিনি আরও বলেন, ''হিন্দু বা মুসলিম, শিখ বা খ্রিস্টান মেয়েরা সারা দেশে তাঁদের পরিবার-সহ বিভিন্ন স্তরে প্রতিকূলতার শিকার হচ্ছেন। অনেক সমস্যা দেখা যায়। এখন যেটা চলছে, কি পরতে হবে কি হবে না। এসব ছাড়াও একটা বিষয়ে আমি নিশ্চিত এবং আশাবাদী, মহিলারা আর পিছনে ফিরে তাকাবেন না।"
বেঙ্গালুরুর মাউন্ট কারমেল কলেজে সমাজবিজ্ঞান পড়ান আফিদা কেটি। তিনি বলেন, ''হিজাবের বিষয়টিতে এটা স্পষ্ট যে হিন্দুত্ববাদী শক্তি মুসলিম সম্প্রদায়কে রাজনৈতিক লক্ষ্যবস্তু হিসেবে দেখছে। তবে এটা নিয়ে আমরা যদি মুসলিম নারীদের উচ্চশিক্ষার উপর এর প্রভাবের দিকে তাকাই, তবে সেই ভবিষ্যদ্বাণী এখনই করাটা খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে।"
Read full story in English