সেপ্টেম্বরের ১৯ তারিখ কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরির পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল মেয়েটার। অথচ সারা শরীরে অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে ১৯ তারিখ ওকে শুয়ে থাকতে হয়েছে হাসপাতালের বিছানায়। দিন সাতেক আগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে কোচিং যাওয়ার পথে মুহূর্তে ওলট পালট হয়ে গেল গোটা জীবনটা। ১৯ বছরের মেয়েটাকে গন ধর্ষণ করে বীভৎস এক উল্লাসে মেতে উঠল জনা পাঁচেক ছেলে। এদের প্রত্যেকেই মেয়েটির পরিবারের পরিচিত।
হরিয়ানা পুলিশ জানিয়েছে পাঁচজনকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আগে থেকেই একাধিক যৌন হেনস্থার অভিযোগ রয়েছে।
কোচিং ক্লাসের খরচ ছিল মাসিক ৫৪০০ টাকা। এদিকে স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলে পড়িয়ে মাস গেলে বাবার হাতে আসে হাজার পাঁচেক। সংসার চালাতে, মেয়ের কোচিং-এর খরচ চালাতে স্কুল শেষে প্রাইভেট টিউশনি করতেন বাবা, গত কয়েকদিন ধরে তাঁর নিজের ঠিকানাও ওই হাসপাতাল চত্বর।
"পড়াশোনা, খেলাধুলো দুটোতেই চৌখস ছিল মেয়েটা। দশম শ্রেণির পর্ষদের পরীক্ষায় যখন ভালো ফল করল, রাজধানী থেকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। গর্বে ভরে গেছিল বুকটা। তারপর স্বাধীনতা দিবসে পতাকা উত্তোলনের জন্য মেয়েকে ডেকে পাঠানো হল ওর পুরনো স্কুলে", মেয়ের কথা বলতে বলতে বাবার ঠোঁটে তখনও লেগে আছে ম্লান হয়ে আসা হাসির শেষটুকু। " অভাবের সংসারে চাকরি পাওয়ার তাড়া আছে বুঝতে পেরে কলেজে না পড়ে সরকারি চাকরির পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে মেয়েটা। যেটুকু যা আয় ছিল, সব ছেলে মেয়েদের পড়াশোনায় খরচ করতাম, ওটাই ছিল আমার বিনিয়োগ। আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, মেয়ে আমার যাই করুক, সেখানেই নাম করবে। পরীক্ষাটাই দিতে পারল না, হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকতে হল", মাটিতে মুখ গুঁজে বললেন বাবা।
শরীর দুর্বল, মনে সবসময় এক ভয়। মাইগ্রেনের ব্যথায় ছিঁড়ে যাচ্ছে মাথা। ঘুম ভাঙলেই আতঙ্কে বিড়বিড় করে কিছু বলে উঠছে একটা ১৯ বছরের 'ফোটা ফুল'। আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করাও আপাতত বারণ। ঠাণ্ডা বাতাস নিতে একান্তই হাসপাতালের বাইরে যেতে হলে মুখে ওড়না জড়িয়ে।
বাবার সঙ্গে স্কুল বাসেই কোচিং-এ যেত মেয়েটা। ১২ সেপ্টেম্বরেও তার অন্যথা হয়নি। কোচিং ক্লাসের সামনে বাস থেকে মেয়েকে নামিয়ে দিলেন বাবা। বিকেল সাড়ে চারটের দিকে বাবার কাছে ফোন আসে মূল অভিযুক্তদের একজনের, "বাস স্টপ থেকে মেয়েকে নিয়ে যান"। "আমি যখন পৌঁছলাম, ওর প্রায় জ্ঞান নেই, বাইকে করে নিয়ে আসি ওকে, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পয়সা আমার ছিল না, ১০ হাজার টাকা ধার করে নিয়ে আসি।"
নিগৃহীতার পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে চেয়েছিল হরিয়ানা সরকার। নেয়নি তারা। মেয়ের মা জানিয়েছেন, "রাজনীতিবিদরা আমার বাড়ি এসে ঘুরে ঘুরে যাবেন, আমরা তা চাইনা, শুধু চাই দোষীদের যেন ফাঁসির ব্যবস্থা হয়"।
শাস্তি হয়তো হবে, কিন্তু কবে স্বাভাবিক হবে রেওয়ারির ১৯ বছরের মেয়েটা, কিমবা তার পরিবারের, আশে পাশের পাড়ার মেয়েগুলো? যারা দেখল স্বাধীন ভাবে উড়তে চাইলে এ সমাজে ডানা কেটে দেওয়া হয় নানা উপায়ে, তাদের ভয়টা কাটবে তো?