মহানগর দ্বিতীয়া থেকে দুর্গাপুজোর আনন্দে মেতে উঠেছে। শহরের বস্তি এলাকা থেকে অট্টালিকায় এখন শুধু আলোর ছটা। নতুন জামাকাপড়, খাওয়া-দাওয়া, ঘুরে-বেড়ানো, যেমন খুশি ফুর্তি, রাস্তায় লক্ষ লক্ষ মানুষ, আরও কত কিছু। কলকাতা থেকে ৪৭০ কিলোমিটার দূরে ইসলামপুরের দাড়িভিটে ঠিক তার ভিন্ন চিত্র। পুজোর রাতে গ্রামজুড়ে আলোর ঝলকানিও নেই, নেই কোনও উৎসব। এবার যে দুর্গাপুজোই বন্ধ দাড়িভিটে। পাশের মাঠপাড়াতেও পুজো বন্ধ রয়েছে গত মাসে নিহত দুই স্থানীয় যুবকের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে। উৎসবের আনন্দ ছুঁতে পারছে না দাড়িভিটের বাসিন্দাদের।
এক বছর আগেও ষষ্ঠী থেকেই আলোর রোশনাইয়ে ভেসে গিয়েছে ইসলামপুরের প্রত্যন্ত গ্রাম দাড়িভিট। দুর্গাপুজোর কয়েকটা দিন ঠিকানা বদলে যেত প্রতিটি গ্রামবাসীর। এই কটা দিন কাউকে খুঁজতে হলে গ্রামের চৌরাস্তার পুজোমন্ডপই ছিল একমাত্র ঠিকানা। দাড়িভিটের দোকানপাটে দেদার বেচা-কেনাও চলত। এক স্কুলের গন্ডগোলে গ্রামের চিত্রটাই এবার আমূল বদলে গিয়েছে। ৫০ বছরের দুর্গাপুজো এবার বন্ধ রয়েছে দাড়িভিটে।
আরও পড়ুন: ইসলামপুরে ছাত্র মৃত্যুর প্রতিবাদে বিজেপি-র ডাকা বনধে মিশ্র সাড়া, সরকারি বাস ভাঙচুর
শুক্রবার দশমীর দিন ওই ঘটনার এক মাস সম্পূর্ণ হবে। দাড়িভিটের স্কুল কাণ্ডে তাপস বর্মণ ও রাজেশ সরকারকে কাদের গুলিতে প্রাণ হারাতে হল, এখনও তার কোনও জবাব মেলেনি। এই দুই পরিবারের পাশে রয়েছেন দাড়িভিটের গ্রামবাসীরাও। এবছর তাঁরা বন্ধ রেখেছেন দুর্গাপুজো। নমো নমো করে ঘটপুজো করেই দেবীকে বরণ করেছেন। গ্রামের কেউই পরে নি নতুন জামাকাপড়। উৎসবের আমেজ পর্যবসিত হয়ে রয়েছে শোকের আবহে।
দাড়িভিট বাজার সর্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটির কোষাধ্যক্ষ পবন সরকার বলেন, “কী আর বলব! আমার মেয়ে বলছে, বাবা এবার পুজো হচ্ছে না তাই জামাকাপড় নেব না। আট বছর বয়স, মন খুব খারাপ।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের পুজোর বাজেট থাকে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা। গ্রামের আপামর মানুষ এই পুজোর সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু ওরা দুজন কীভাবে গুলি খেল, তার প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন করতে হবে, এটাই আমাদের দাবি। কার গুলিতে মৃত্যু হল ওদের? তা এখনও পুলিশ জানাতে পারল না। সিবিআই তদন্ত হলেই গুলি রহস্য সমাধান হবে। তাছাড়া গ্রামবাসীরা এখনও শোকে ডুবে আছেন। তাই এবার ঘটপুজো করা হচ্ছে। গ্রামের প্রতিটি রাস্তা পুজোর কটা দিন আলো হয়ে থাকতো। এবার সেখানে নিকষ কালো অন্ধকার।”
আরও পড়ুন: আগে সিবিআই তদন্ত, পরে স্কুল, বলছে দাড়িভিট
দাড়িভিটে স্কুলে বিক্ষোভের পর পাশের দোলনচা নদী দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছে। গুলিতে দুই যুবকের মৃত্যুর পর আন্দোলন থেমে থাকেনি। মৃতদেহ এখনও বাক্সবন্দী হয়ে কবরস্থ রয়েছে দোলনচা নদীর তীরে। পালা করে এখনও পাহারা দেওয়ার কাজ চলছে। গ্রামের মানুষের এখনও বিশ্বাস, ওই দেহ দুটির নতুন করে ময়নাতদন্ত হবে। ২০ সেপ্টেম্বরের পর এখনও স্কুল খোলেনি। ওই দিনের ঘটনা দাড়িভিটের বাসিন্দাদের জীবনযাত্রাই পাল্টে দিয়েছে। বাঙালীর শ্রেষ্ঠ উৎসবেও কান্না থামছে না তাঁদের।