Advertisment

উত্তর প্রদেশের গরুদের কী হবে?

"স্যার, আপনাদের কাছে অনুরোধ, গরুগুলো রেখে দিন। এইসব পরিত্যক্ত গরু আর ষাঁড় আমাদের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করছে। আমাদের ক্ষেত একেবারে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।"

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

দূর থেকে দেখলে মনে হবে, মথুরা-হাথরাস হাইওয়ের পাশে অবস্থিত পরাগ ডেয়ারির তালাবন্ধ গেট ভেঙে ঢোকার চেষ্টা করছেন বুঝি ওঁরা। বাস্তবে এঁরা কাছাকাছি হর্দপুর গ্রামের কয়েকজন মরিয়া বাসিন্দা, ভরদুপুরে এক ট্রাক ভর্তি বেওয়ারিশ গরু ডেয়ারিতে ঢোকানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু যতই তাঁরা চ্যাঁচান আর হাত পা ছুড়ুন, ডেয়ারি কর্মীরা শান্ত অথচ দৃঢ়ভাবে জানিয়ে দিচ্ছেন, ভেতরে ইতিমধ্যেই ২,৫০০ গরু রয়েছে, আর জায়গা নেই।

Advertisment

এই বাদানুবাদ, তর্কাতর্কির মধ্যে দিয়েই স্পষ্ট হয়ে উঠছে উত্তর প্রদেশের একটি দ্রুত বাড়তে থাকা সমস্যার চিত্র - বেওয়ারিশ গরুদের নিয়ে কী করা হবে?

আরও পড়ুন- রাম মন্দির মামলার শুনানি শেষ আধ মিনিটে

রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে আগ্রা, আলিগড়, মথুরার মতো জায়গায় উত্তেজিত গ্রামবাসীরা রাস্তাঘাট থেকে বেওয়ারিশ গরু ধরে ধরে বিভিন্ন স্কুলের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এই প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার রাজ্য সরকার ০.৫ শতাংশ 'গো কল্যাণ সেসের' ঘোষণা করে, মূলত রাজ্যের গোশালার খরচ চালানোর জন্য। বুধবার উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ সমস্ত জেলাশাসকদের নির্দেশ দেন, ১০ জানুয়ারির মধ্যে নিরাশ্রয় গরুদের জন্য আশ্রয়, অর্থাৎ শেল্টারের ব্যবস্থা করতে হবে।

পরাগ ডেয়ারির বাইরের উত্তেজিত জনতা কিন্তু সেসব কিছুই দেখছেন না। "স্যার, আপনাদের কাছে অনুরোধ, গরুগুলো রেখে দিন। এইসব পরিত্যক্ত গরু আর ষাঁড় আমাদের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করছে। আমাদের ক্ষেত একেবারে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে," ডেয়ারিকে লেখা একটি চিঠিতে বলেছেন হর্দপুুরের গ্রামপ্রধান সুন্দর সিং তোমর। সেই চিঠি বুধবার গ্রামবাসীরা ডেয়ারি কর্মীদের হাতে তুলে দেন।

বৃহস্পতিবার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে তোমর জানান, "গতকাল আমরা প্রায় কুড়িটি রাস্তার গরু আর ষাঁড় ধরে একটা মিনি ট্রাকে করে ডেয়ারিতে নিয়ে যাই, কিন্তু ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসি। শুক্রবার মহকুমা শাসক আমাদের মিটিংয়ে ডেকেছেন।" গ্রামপ্রধান আরো বলেন, "আমাদের গ্রামে আন্দাজ দুশো পরিবারের বাস, সেখানে বেওয়ারিশ গরুর সংখ্যা প্রায় পঞ্চাশে গিয়ে ঠেকেছে। ব্যাপারটা হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। আমাদের আলুর ফসলের বিপুল ক্ষতি হয়েছে। কী করব আমরা? আশেপাশে আর কোনো নির্দিষ্ট গোশালা নেই যেখানে ওদের রাখা যাবে।।"

আরও পড়ুন- দিদি-মোদীর দল ছেড়ে রাজ্যে কংগ্রেসে ঢোকার হিড়িক, দাবি ‘ছোড়দা’র

আধিকারিকদের বক্তব্য, পরাগ ডেয়ারি পাততাড়ি গোটায় ২০১০ সালে, এবং গত সপ্তাহেই স্থানীয় বাসিন্দাদের চাপের মুখে হাথরাস জেলা প্রশাসন এটিকে গোশালা হিসেবে চিহ্নিত করে। কিন্তু সাসনি থানার এক অফিসার বলছেন, মাত্র চারদিনে গাদাগাদি ভিড় জমে গেছে এই শেল্টারে। বুধবার অবস্থার মোকাবিলা করতে, এবং ক্রুদ্ধ গ্রামবাসীদের শান্ত করতে, সাসনি থানা থেকে ডেয়ারিতে পুলিশ পাঠাতে হয়।

তার আগে সোমবার ডেয়ারি পরিদর্শন করে হাথরাসের জেলাশাসক রমাশঙ্কর মৌর্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছিলেন, "পরাগ ডেয়ারির ১৫০ বিঘা জমি আছে, যেখানে আপাতত ২,৫০০ গরু রয়েছে। আর রাখা সম্ভব নয়। আমরা বিভিন্ন গ্রামপ্রধানকে বলেছি তাঁদের গ্রামে জায়গা দেখতে। নতুন গোশালা তৈরি হবে।"

আরও পড়ুন-শবরীমালায় মহিলাদের প্রবেশ নিয়ে জাতীয় মঞ্চে প্রতিবাদ চলবে না, ধমক সোনিয়ার

ডেয়ারির গেটে দাঁড়ালে দেখা যায়, ভেতরে খোলা জায়গায় ইতিউতি ঘুরে বেড়াচ্ছে গরু। স্থানীয়দের মতে, অনাহারে এবং কনকনে ঠাণ্ডায় গো মৃত্যুর সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। "চাহিদা ভয়ানক। আপনাদের ওদিকে নার্সারি স্কুলে বাচ্চাদের ভর্তি করানো নিয়ে যা হয়, এটা অনেকটা তাই," বলছেন পঞ্চাশ বছর বয়সী আলু চাষী শ্যাম বাবু।

uttar pradesh yogi adityanath
Advertisment