আসামের ছায়াগাঁও জেলায় ৪২ জন নর্তকীর একটি দলকে হেনস্থা করা হয়েছে। এ ঘটনা ঘটেছে গত ৭ জুন রাতে। জাতীয় মহিলা কমিশন এ ঘটনার স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করেছে।
গুয়াহাটির নিকটবর্তী এক গ্রামের বাসিন্দা ওই নাচের দলের ম্য়ানেজার। তিনি জানিয়েছেন, ওই দলের সব মেয়েদেরই বয়স ছিল ১৭-১৮-র মধ্য়ে। এরা সকলেই ভয়ানক মানসিক আঘাত পেয়েছে। সেদিন রাতের ঘটনার সঙ্গে এখনও কেউ মানিয়ে উঠতে পারেনি।
গত ৭ জুন ওই নাচের দলটিকে চামারিয়া শহরে এক অনুষ্ঠানের বরাত দেওয়া হয়। তাঁদের বলা হয়েছিল এটি বিহুর একটি কর্মসূচি। সেখানে গিয়ে নাচ শুরু করার পর প্রায় ৭০০ জনের একটি দল নর্তকীদের পোশাক খুলতে বলে। মেয়েরা তাতে রাজি না হলে তাদের তাড়া করে শারীরিক নিগ্রহ করা হয়।
গত ৮ জুন ছায়াগাঁও থানায় এ ঘটনায় এফআইআর দায়ের করেন ওই নাচের দলের ম্য়ানেজার। এখনও পর্যন্ত ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের নাম শাহরুখ খান, সুভান খান, রহমৎ আলি, নিজামউদ্দিন, আতিকুল ইসলাম এবং সঞ্জয় চৌধুরী।
ছায়াগাঁও থানার দায়িত্বে থাকা পুলিশ আধিকারিক রূপম হাজারিকা জানিয়েছেন, "অনুষ্ঠানের উদ্য়োক্তা কারা ছিল তা আমরা জানি না। তদন্ত চলছে। আমরা খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে ছুটে যাই এবং মেয়েদের উদ্ধার করতে সাহায্য় করি।"
তবে পুলিশ যখন পৌঁছেছিল, তখন পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে গিয়েছিল। দলের ম্য়ানেজার বললেন, "ওরা আমাদের রাস্তা দিয়ে তাড়া করেছিল। আমরা প্রাণ হাতে করে দৌড়চ্ছিলাম। শেষ পর্যন্ত আমরা গাড়িতে উঠে গাড়ি লক করে দিই।" ১২ বছর আগে এই নাচের দলটি কাজ শুরু করেছিল। ম্য়ানেজার জানিয়েছেন, "আমরা বলিউড-হলিউডের নাচ করি, আধুনিক অসমিয়া গানের সঙ্গে নাচি, আবার ট্র্য়াডিশনাল লোকনৃত্য়ও করি।" তিনি জানান, মূলত তাঁরা বিহুর অনুষ্ঠানে নাচেন, এ ছাড়া গ্রামের কাছাকাছি বিভিন্ন নৃত্য় প্রতিযোগিতাতেও অংশগ্রহণ করেন তাঁরা।
৭ জুন বিকেলে দলের ম্য়ানেজার একটি ফোন পান। তাঁকে ফোন করেন সঞ্জয় চৌধুরী। তিনি যোগাযোগ করিয়ে দেন কুদ্দুস আলি নামের একজনের সঙ্গে। এফআইআরে বলা হয়েছে, "কুদ্দুস আমাদের ওই দিনই রাতে অনুষ্ঠান করতে বলেন। তিনি জানান আমাদের ৩৭ হাজার টাকা দেওয়া হবে। রাত ৮ টা নাগাদ চামারিয়ার দিকে রওনা দেয় দলটি।"
ম্য়ানেজার জানিয়েছেন, "আমরা যখন সেখানে পৌঁছই, দেখি কিছুই হচ্ছে না। কুদ্দুস আলি আমাদের ডেকে আরও ভেতরে নিয়ে যান। সে জায়গাটা ছিল টিনের ছাদ দেওয়া। কিছু লোক মেয়েদের ধাক্কা দিয়ে স্টেজে তুলে দিয়ে বলে "নাচ"। আমি বুঝতে পারছিলাম কিছু একটা গণ্ডগোল আছে, কিন্তু বিশাল সংখ্য়ক লোক জমায়েত হয়েছিল। এদের দেখে ভয় করছিল। তাই আমি মেয়েদের বলি নাচ শুরু করতে।"
একটি বলিউড নাচ শুরু করে দলটি। তখন কিছু লোক চিৎকার করে বলে, এটা কী হচ্ছে। তারা ডিসকো নাচতে বলে।
একজন লোক ম্য়ানেজারকে ফোনে নগ্ন নাচের ভিডিও দেখায়। ম্য়ানেজার বলেন, "সেগুলো সব নোংরা গান। আমাকে বলা হয় এরকম নাচ নাচতে। আমরা ভয় পেয়েছিলাম কিন্তু এত বেশি লোক ছিল যে আমি সবাইকে শান্ত থাকতে বলেছিলাম।" ম্য়ানেজার গোপনে পুলিশে খবরে দেন।
কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গিয়েছিল। জনতা মেয়েদের পোশাক ধরে টানাটানি শুরু করে, তাদের গায়ে হাত দেয় করে। ম্য়ানেজার একটা টিন ভেঙে কোনওমতে সব মেয়েদের নিয়ে দৌড়তে শুরু করেন। "জনতা আমাদের তাড়া করেছিল কিন্তু আমরা কোনওরকমে গাড়িতে উঠে পালাই।" রাত তিনটের সময়ে বাড়ি পৌঁছয় মেয়েদের দলটি।
এফআইআরে বলা হয়েছে নাচের দলটি জানতে পেরেছে উদ্য়োক্তারা নগ্ন নাচ হবে বলে লোকের কাছ থেকে চাঁদা তুলেছিল। তারা বলেছিল পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার থেকে স্ট্রিপ ড্য়ান্সারদের দল আসবে।
১১ জুন এ ঘটনার প্রতিবাদে যৌথ মিছিল করে আসু এবং অল রাভা স্টুডেন্টস ইউনিয়ন।
Read the Story in English