এক মাস নয়, দু'মাস নয়, আট আটটা মাস। অতগুলো দিনই তিনি কাটিয়ে দিয়েছেন মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালা লামপুরের বিমানবন্দরে বসে। অবশেষে মিলল কিনারা। সোমবার কানাডা যাওয়ার ওয়ান ওয়ে টিকিট পেলেন হাসান আল কোনতার, যেখানে তাঁকে স্থায়ী আবাসিকের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।
রবিবার তাইওয়ানের তাওইয়ুআন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রা বিরতির সময় টুইটারে একটি ভিডিও পোস্ট করেন হাসান। "আপাতত আর যায় আসে না আমি এতদিন কোথায় ছিলাম। সেই বাস আর আমাদের সঙ্গে নেই। এখন যা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো আজ এবং কাল, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ। আজ আমি তাইওয়ান আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্টে আছি, কাল পৌঁছব আমার শেষ গন্তব্য ভ্যাঙ্কুভার, কানাডায়," তাঁর ভিডিও মেসেজে বলেন হাসান।
গত মার্চ মাসের ৭ তারিখ থেকে কুয়ালা লামপুর বিমানবন্দরে কার্যত বন্দী ছিলেন হাসান। পৃথিবীর কোনও দেশে যাওয়ার অনুমতি ছিল না, এবং ভিসা সংক্রান্ত গোলযোগের ফলে অনুমতি ছিল না মালয়েশিয়ায় ঢোকারও। এর আগে হাসান বলেছিলেন তিনি দু'বার কুয়ালা লামপুর ছেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। প্রথমবার তাঁর গন্তব্য ছিল একুয়াডর, কিন্তু বিমান সংস্থার কর্মীরা তাঁকে বিমানে উঠতে দিতে অস্বীকার করেন। মার্চ মাসে তিনি কাম্বোডিয়াও যাওয়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু সেখানকার অভিবাসন আধিকারিকরা তাঁকে মালয়েশিয়া ফেরত পাঠান।
আরও পড়ুন: মার্কিন নাগরিকের দেহ উদ্ধারের কাজ বন্ধ করল আন্দামান প্রশাসন
আদতে সিরিয়ার নিবাসী এই প্রাক্তন বীমা সেলসম্যান সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে বাস করছিলেন যখন সিরিয়ায় যুদ্ধ শুরু হয়। তাঁর দাবী, তাঁকে ২০১৬ সালে মালয়েশিয়াতে কার্যত নির্বাসন দেওয়া হয়, কারণ আরব আমিরশাহীর সিরিয়ান দূতাবাস তাঁর পাসপোর্ট রিনিউ করতে অসম্মত হয়।
এর পর থেকেই হাসান তাঁর প্রাত্যহিক জীবনের ভিডিও নিয়মিত পোস্ট করতে থাকেন টুইটার এবং ফেসবুকে, যার ফলে তিনি বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এবং মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তাঁর জীবনের সঙ্গে অনেকেই মিল খুঁজে পান স্টিভেন স্পিলবার্গ পরিচালিত 'দ্য টার্মিনাল' ছবির, যেখানে এক পূর্ব ইউরোপীয় পর্যটকের চরিত্রে ছিলেন অভিনেতা টম হ্যাঙ্কস, যাঁর নিজের দেশে সামরিক অভ্যুত্থানের ফলে তাঁর পাসপোর্ট বাতিল হয়ে যায়, এবং তিনি আটকে পড়েন নিউ ইয়র্কের জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে।
অক্টোবর মাসে জাতি সংঘের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছিল যে হাসানকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া উচিৎ, এবং যুদ্ধ বিধ্বস্ত তাঁর নিজের দেশে তাঁকে ফেরত পাঠানো উচিৎ নয়, যদিও এতগুলো মাস মালয়েশিয়ার বিমানবন্দরে কাটানর ফলে তিনি অবশেষে গ্রেফতার হন।