যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইউক্রেনের সুমিতে আটকে থাকা পড়ুয়াদের গতকাল দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। সুমিতে আটকে থাকা পড়ুয়াদের উদ্ধারের জন্য মোট তিনটি বিমান পাঠিয়েছিল বিদেশ মন্ত্রক। দেশে ফিরেই স্বস্তির ছবি ধরা পড়ল পড়ুয়াদের চোখে মুখে। দেশে ফেরা এক পড়ুয়া মোহিত কুমার বলেছেন "এটা অলৌকিক ঘটনা। চোখের সামনে যুদ্ধ দেখেছি। হোস্টেলের জানলা থেকে মিসাইল আছড়ে পড়তে দেখেছি। আজ অবশেষে দেশে ফিরেছি"। গতকাল সুমিতে আটকে থাকা প্রায় ৬০০ ভারতীয় পড়ুয়াকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। জানিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক।
রাজস্থানের বাঁশওয়ারার থেকে ছেলেকে নিতে এসেছিলেন বৈষ্ণব সুন্দরী, পেশায় একজন নার্স। তার একমাত্র ছেলে দীপেশ গৌড় এমবিবিএস-এর চূড়ান্ত বর্ষের ছাত্র। অবশেষে দেশে ফিরেছেন। সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাতকারে বৈষ্ণব বলেন, এই কদিন কীভাবে কেটেছে বলে বোঝাতে পারবো না, দুচোখের পাতা এক করতে পারিনি। ছেলে মেয়েরাও কীভাবে ওদেশে যুদ্ধের মধ্যে আটকে রয়েছে তা ভাবলেও গায়ে কাটা দিত। ওদের কাছে জল, খাবার কিচ্ছু ছিল না’। তবে আমি আশা ছাড়িনি। ভারত সরকারকে ধন্যবাদ”।
সেই সঙ্গে তিনি বলেন 'চোখের সামনে তারা একের পর এক ভবন ধ্বংস হয়ে যেতে দেখেছে। এগুলি পড়ুয়াদের মানসিক স্বাস্থ্যকে আঘাত করেছে। অনেকেই সেই স্মৃতি এখনও মনে রেখেছে'। তার কথায়, 'আমি একটি সরকারি হাসপাতালে নার্সের চাকরী করি আমি আমার সন্তান, সেই সঙ্গে সকল পড়ুয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। আশা করি সরকার একটা ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। পড়ুয়াদের ডিগ্রি শেষ করার সুযোগ দেবে'। মহেশ কুমার তার ভাইকে আনতে এসেছেন, তার কথায়, 'সারা জীবনে সঞ্চয় দিয়ে ভাইকে ডাক্তারী পড়তে ইউক্রেনে পাঠিয়েছি।
এখন ভবিষ্যৎ কী হবে তা ভেবেই রাতের ঘুম উড়েছে। তিনি বলেন, ইউক্রেনে ডাক্তারি পড়তে ৩০ থেকে ৪০ লাখের মধ্যে খরচ হয়, ভারতে এই খরচ প্রায় দেড় গুন'। 'আমরা সবসময় সন্তানদের ভাল ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। সরকারকেও এই বিষয়টি মানবিকতার সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে'। পেশকার সিং ছোট ছেলের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য ইউক্রেনে পাঠিয়েছিলেন, তিনি বলেন, 'যুদ্ধ সব কিছু শেষ করে দিল, এখন ওদের ভবিষ্যৎ কী জানিনা। প্রবল উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছি। আমাদের সন্তানদের ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা সরকারের কাছে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। তবে আমরা আশা করি সরকার তাদের ভবিষ্যৎ এবং শিক্ষার ব্যাপারে বিবেচনা করবে'।
আরো পড়ুন: ইউক্রেনের পরীক্ষাগার থেকে ছড়িয়ে পড়তে পারে প্রাণঘাতী ভাইরাস, সতর্ক করল বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা
কেরালার জিসনা জেজি বলেন, "আমরা প্রত্যেককে ধন্যবাদ জানাতে চাই যারা আমাদের জন্য প্রার্থনা করেছেন। আমরা ভারত সরকার, দূতাবাস, কর্তৃপক্ষকে আমাদের উদ্ধার করার জন্য ধন্যবাদ জানাতে চাই’। "আপনারা সকলেই জানেন যে আমরা কী ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যে ছিলাম" বলেন কেরলের মোহাম্মদ আলী, ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র, সেই সঙ্গে তিনি জানান ‘অন্তত ৭০০ জন পড়ুয়া দু দিন ধরে পানীয় জল হিসাবে বরফ ব্যবহার করেছিল কারণ সেখানে জলের কোন ব্যবস্থা ছিল না। বিদ্যুৎ ছিল না। ইউক্রেন একটি সুন্দর দেশ! কিন্তু সেটি আজ শশ্মানে পরিণত হয়ে গিয়েছে”। অপর এক পড়ুয়া শ্বেতা জানান, ‘যুদ্ধ থামলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমি আবার ইউক্রেনে যাব কারণ ওটাই আমার দ্বিতীয় বাড়ি’। শুক্রবার বেলা ১২ টা ১৫ মিনিটে IAF C17 ফ্লাইটটি অবতরণ করার সঙ্গে সঙ্গে চোখে মুখে খুশি ধরা পড়ে পড়ুয়া অভিভাবকদের। এই বিমানেই ২১৩ জন পড়ুয়া সুমি থেকে দেশে ফেরেন। তাদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কেপি গুর্জার।
Read full story in English