scorecardresearch

বড় খবর

হিজাব বিতর্ক ফের মাথাচাড়া দেওয়ায় ভবিষ্যৎ নিয়ে সংকটের মুখে পড়ুয়ারা

সিএফআই-এর রাজ্য সভাপতি আথাভুল্লা পুঞ্জালকাত্তে বলেছেন, “হিজাব আর ধর্মীয় ইস্যু নয় বরং একটি রাজনৈতিক ইস্যু যা বিজেপি জিইয়ে রাখতে চায়”।

HIJAB_ROW
হিজাব পরে চলছে বিক্ষোভ।

হিজাব বিতর্ক, বিক্ষোভের জেরে একদিকে যখন উত্তাল মেঙ্গালুরু বিশ্ববিদ্যালয়, তখন পড়ুয়াদের আগামী নিয়ে চিন্তায় তাদের অভিভাবকরা। নতুন করে হিজাব বিতর্ক শুরু হওয়ায় চিন্তিত, পড়ুয়া থেকে অভিভাবকরা। বৃহস্পতিবার মেঙ্গালুরু বিশ্ববিদ্যালয়ে আচমকাই হিন্দু কট্টরপন্থীরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। তাদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে গেলে মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব খুলে ঢুকতে হবে। যারা খুলে আসবে না, তাদের ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে হবে। ক্যাম্পাসেই তারা তাদের দাবিতে স্লোগান দিতে শুরু করে। পরিস্থিতি রীতিমতো অগ্নিগর্ভ। জানা গিয়েছে আন্দোলনরত পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলছেন বিশ্ববিদ্যাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এখনও অচলাবস্থা কাটেনি।

হিজাব ইস্যুতে, ৪০ থেকে ৫০ জন ছাত্র আচমকাই ‘হিজাব পরিধানের’ প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। তারা তাদের দাবিপ স্বপক্ষে কর্নাটক হাইকোর্টের একটি রায়ের উল্লেখ করে। আন্দোলনরত পড়ুয়াদের হাতে ছিল পোস্টার-ব্যানার। সেখানে লেখা হিজাব বিরোধী স্লোগান। আন্দোলনরতদের দাবি, কলেজ ডেভেলপমেন্ট অথরিটি অবিলম্বে মুসলিম পড়ুয়াদের জানিয়ে দিক, ‘ক্যাম্পাসে কোনওভাবেই হিজাব পরে আসা যাবে না। অঘোষিত এই কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি হয় অচলাবস্থা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শ্রেণীকক্ষের মধ্যে হিজাব পরা যাবে না। আদালতের নির্দেশ তুলে ধরে পড়ুয়াদের তা ফের স্মরণ করিয়ে দিয়েছে ম্যাঙ্গালুরু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু মানতে রাজি নয় ছাত্রীদের একাংশ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পরামর্শের পরদিনই হিজাব পরে একদল মেয়ে শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উপস্থিত হয়েছিল। যা ঘিরে ফের বিতর্ক তৈরি হয়। উপাচার্য সুব্রহ্মণ্য ইয়াদাপাদিথায়ের মতে, তাদের অন্যান্য কলেজে স্থানান্তরের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা করা হবে যেখানে ইউনিফর্ম বাধ্যতামূলক নয় এবং হিজাব অনুমোদিত।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব নিষিদ্ধ করার বিষয়টি ঘিরে বিগত বেশ কয়েক মাস ধরেই উত্তাল হয়ে আছে কর্নাটক। মামলাটি কর্নাটকে হাইকোর্টে গড়িয়েছিল। হিজাব নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যে পিটিশনগুলি দায়ের করা হয়েছিল, তা খারিজ করে দিয়েছে কর্নাটক হাইকোর্ট।

উচ্চতর আদালত জানিয়েছে, হিজাব পরা অপরিহার্য ধর্মীয় রীতি নয়। আবেদনকারীরা দাবি করেছিলেন, হিজাব নিষিদ্ধ করে তাদের ধর্ম পালনে বাধা দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের দাবি ছিল, হিজাব পরা ইসলাম ধর্মে বাধ্যতামূলক। তবে আবেদনকারীদের সেই দাবিকে নাকচ করে দিয়েছে হাইকোর্টের বেঞ্চ।

গত বছরের ডিসেম্বরে হিজাব নিয়ে বিতর্ক শুরু হয় যখন উদুপি জেলার উদুপি সরকারি প্রি-ইউনিভার্সিটি গার্লস কলেজের ৬ প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী তাদের হিজাব পরে ক্লাসে যোগদানের অনুমতি দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ দেখায়

ইসলামে হিজাব বাধ্যতামূলক নয়। ফলে এক্ষেত্রে সংবিধানের ২৫ নং ধারার রক্ষাকবজ পাওয়া যাবে না। হিজাব বিতর্কে মঙ্গলবার এমনটাই রায় দিয়েছে কর্ণাটক হাইকোর্ট। অর্থাৎ স্কুলে কোনও ধর্মীয় পোশাক পরে আসা যাবে না। কর্ণাটক হাইকোর্টের ওই রায়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেলেও রায় নিয়ে সন্তুষ্ট নয় পড়ুয়ারা।

রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছে এক পড়ুয়া। ফলে আপাতত হাইকোর্টের রায়েও জট কাটেনি হিজাব বিতর্কের। এদিনের বিক্ষোভের জেরে ফের মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো হিজাব বিতর্ক। এদিকে এই বিক্ষোভ প্রসঙ্গে ম্যাঙ্গালুরুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতার প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফাতিমা শাজমা বলেন, “অনেক স্বপ্ন নিয়ে সাংবাদিকতা নিয়ে ভর্তি হয়েছি, জানিনা আমি আমার কোর্স শেষ করতে পারব কিনা। একটুকরো কাপড়কে কেন্দ্র করে রাজ্যজুড়ে বিঘ্নিত হতে চলেছে সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থা”। অপর এক ছাত্রী দাবি করেন “হিজাব ইস্যু নিয়ে অনেক মুসলিম পরিবারের অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের আর কলেজে পাঠাবেন না ফলে নষ্ট হবে তাদের ভবিষ্যৎ”।

হিজাব প্রসঙ্গে অপর এক ছাত্রী বলেন, “ম্যাঙ্গালুরুতে অনেক কলেজই সাংবাদিকতার কোর্স পড়ানো হয় না। এখানে ফি খুব কম। কলেজ আমাদের মাথায় স্কার্ফ পরার অনুমতি দিত, কিন্তু হঠাৎ করে কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাদের হিজাব পরে কলেজে প্রবেশ করতে বারণ করছে। আমার পরিবার আমাকে কলেজে না পাঠালে কি হবে?”তিনি আরও বলেন আমরা যখন এব্যাপারে কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার জন্য যাই, কথা বলি সেখানে রাজনৈতিক বিভাজন স্পস্ট।

আরও পড়ুন: নেপালে ভেঙে পড়া বিমানের খোঁজ মিলল, শুরু উদ্ধারকাজ

এদিকে হিজাব প্রসঙ্গে মন্তব্য করার সময়ে ম্যাঙ্গালোর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর পি সুব্রহ্মণ্য ইয়াদাপাদিথায়া ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস.কমকে বলেছেন, গত কয়েক বছর ধরে আমাদের বিশ্ববিধ্যালয়ে মুসলিম ছাত্রীদের ভর্তির হার তুলনামূলকভাবে অনেকটাই বেড়েছে। হিজাব প্রসঙ্গে হাইকোর্টের আদেশের বিষয়ে আমাদের কাছে নির্দিষ্ট কোন গাইডলাইন নেই”। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তের প্রসঙ্গে তিনি বলেন , “শিক্ষাবিদ হিসেবে এটা সত্যিই একটি বেদনাদায়ক সিদ্ধান্ত”। হিজাব ইস্যু নিয়ে রীতিমত অস্বস্তিতে রাজ্যের শিক্ষা দফতর। এব্যাপারে রাজ্যের শিক্ষা কর্মকর্তারা মুখে কুলুপ এঁটেছেন।

এদিকে হিজাব প্রসঙ্গে সিএফআই-এর রাজ্য সভাপতি আথাভুল্লা পুঞ্জালকাত্তে বলেছেন, “হিজাব আর ধর্মীয় ইস্যু নয় বরং একটি রাজনৈতিক ইস্যু যা বিজেপি বাঁচিয়ে রাখতে চায়৷ বিজেপি তাদের একাধিক কেলেঙ্কারি চাপা দিতে হিজাব ইস্যুকে জিইয়ে রেখেছে”। এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী বাসভরাজ বোমাই বলেছেন, ‘বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে সিন্ডিকেট সভায় সমাধান করা হয়েছে। হিজাব ইস্যুতে আদালত তার আদেশ দিয়েছেন এবং সবাইকে আদালতের আদেশ মানতে হবে। ছাত্রছাত্রীদের কলেজ প্রশাসনিক বোর্ড বা যে সমস্ত কলেজে CDC নেই সেখানে অধ্যক্ষের নির্দেশ মেনে চলতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত মেনে চলতে হবে। এইসব বিতর্কের চেয়ে পড়ালেখায় মনোনিবেশ করা শিক্ষার্থীদের পক্ষে ভালো।’

Read full story in English

Stay updated with the latest news headlines and all the latest General news download Indian Express Bengali App.

Web Title: Students worried about their furute on going hijab row