সম্প্রতি পুনের একদল জলবায়ু বিজ্ঞানীদের গবেষণায় উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। দ্রুত হারে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বিশ্ব জুড়েই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হয়েছে। দ্রুতহারে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য আগামী বছরগুলিতে ভারতে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব বাড়বে। বন্যার প্রকোপ আরও ভয়ঙ্কর আকার নেবে। সেই সঙ্গে প্রভাবিত করবে বর্ষা এবং সামুদ্রিক জনজীবনকে।
ক্রমবর্ধ্বমান উত্তাপ বৃদ্ধি সমুদ্রপৃষ্ঠের জলস্তরের উচ্চতা বাড়বে। যা নিচু এলাকাগুলির জন্য বিপদ ডেকে আনবে বলেও আশঙ্কা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তা প্রত্যক্ষভাবে প্রভাব ফেলতে পারে সামুদ্রিক জনজীবনকে। অন্যান্য মহাসাগরগুলির তুলনায় ভারত মহাসাগর দ্রুতহারে উষ্ণ হচ্ছে। যা আগামী দিনে ভারতের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেবে আর বন্যার পক্ষে অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ভারতের উপকূলবর্তী এলাকা আর নিচু এলাকায় ভয়ঙ্কর বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। ভারত মহাসাগরের মধ্যে রয়েছে আরব সাগর আর বঙ্গোপসাগর। ভারত মহাসাগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় এটি সমুদ্রেরও তাপমাত্রা বাড়ছে। সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তাই আগামী দিনে বিশ্বের উষ্ণতাও ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাবে বলেও আশঙ্কা করা হয়েছে। ক্রমাগত উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে মৎস শিল্প। সতর্ক করে বলেছেন গবেষকরা। সামুদ্রিক তাপপ্রবাহের সময় সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা সর্বোচ্চ বৃদ্ধি পায়। এবং তা স্বাভাবিকের থেকে প্রায় ২ ডিগ্রি বেশি থাকতে পারেন জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
সামুদ্রিক তাপপ্রবাহের নির্দিষ্ট কোন সীমারেখা থাকে না। তা এক দিন থেকে শুরু করে এক মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। সম্প্রতি তামিলনাড়ুর কাছে মান্নার উপসাগরে এক মাসব্যাপী সামুদ্রিক তাপপ্রবাহের ঘটনা সামনে এসেছে।
ভারত মহাসাগরের এই উষ্ণতা বৃদ্ধির উচ্চ হারের কারণে এ অঞ্চলে বর্ষাকাল দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। এটি বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তন ও সাগরের জীববৈচিত্র্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। গবেষকেরা দেখতে পান, পুরো পৃথিবীরই সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলছে ভারত মহাসাগর। এ কারণে বিশ্বের জলবায়ু ও সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। আর দুর্বল হয়ে পড়তে পারে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বর্ষা।
পৃথিবীর সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা বৃদ্ধি ভূ-পৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধির চেয়ে দীর্ঘস্থায়ী হয়। এ কারণে এর নেতিবাচক প্রভাবও হয় দীর্ঘমেয়াদি। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মেটিওরোলজির (আইআইটিএম) প্রধাণ গবেষক, কোল রক্সি জানিয়েছেন গত অর্ধশতাব্দীতে সাগরের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা অনেক বেড়েছে। তবে এর কারণ সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কয়েক দশক ধরে এল নিনো ঘটনা বেড়েছে, যা ভারত মহাসাগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির একটি কারণ বলে মনে করেন গবেষকেরা। কোল রক্সি বলেন, তাঁদের গবেষণার ফলাফল দীর্ঘ মেয়াদে বর্ষায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হ্রাস বুঝতে সহায়তা করবে।
গবেষকরা দেখেছেন ১৯৮২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ক্রমাগত বেড়েছে উত্তর বঙ্গোপসাগরের উত্তাপ। গবেষকেরা পশ্চিম ভারত মহাসাগরের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে ‘এল নিনো’ পরিস্থিতির সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন। প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্য ও পূর্ব ভাগের সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে সেটিকে এল নিনো বলা হয়।
সাধারণত প্রতি চার থেকে ১২ বছরে একবার করে এল নিনো দেখা দেয়। প্রশান্ত মহাসাগরের এই পরিবর্তন সারা বিশ্বের জলবায়ুর ওপর প্রভাব ফেলছে। একই কারণে পশ্চিম ভারত মহাসাগরে বায়ুপ্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। আর ‘লা নিনা’ও ভারত মহাসাগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির হারের পরিবর্তনে কোনো উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলছে না। এল নিনো পরিস্থিতি হলো প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্য ও পূর্ব ভাগের সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে তিন থেকে পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস। তবে এই হারে সমুদ্রপৃষ্ঠের উত্তাপ বৃদ্ধি আগামি দিনে ভয়ঙ্কর বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে মনে করছেন গবেষকরা।