দিল্লির পথ দুর্ঘটনাযর অন্যতম সাক্ষী অঞ্জলির বান্ধবী নিধিকে এর আগে মাদক মামলায় গ্রেফতার করে পুলিশ। অঞ্জলির মা দুর্ঘটনাটিকে “সুচিন্তিত ষড়যন্ত্র”বলে দাবি করার পাশাপাশি নিধির সেদিনে আচরণ নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন। দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে নারকোটিক ড্রাগস অ্যান্ড সাইকোট্রপিক সাবস্টেন্স অ্যাক্ট, (১৯৮৫) এর অধীনে আগ্রা ক্যান্টে নথিভুক্ত একটি মামলায় ২০২০ সালের ডিসেম্বরে নিধিকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
এদিকে, পুলিশ রিপোর্ট বলছে নিধিকে গ্রেফতার করা হয়নি তাকে শুধু তদন্তের জন্য ডাকা হয়েছিল। ডেপুটি কমিশনার অফ পুলিশ হরেন্দ্র কুমার সিং বলেছেন, "মাদক পাচার মামলায় পুলিশ নিধিকে গ্রেফতার করেছে বলে খবর রয়েছে। নিধিকে মাদক মামলায় তদন্তে যোগ দিতে বলা হয়।" অঞ্জলির মা রেখা বুধবার বলেন যে তিনি নিধিকে কখনও দেখেননি বা তার কথাও শোনেননি। তিনি অঞ্জলির মদ্যপ থাকার অভিযোগও অস্বীকার করে বলেন, মেয়ে কখনই মদ্যপান করত না। নিধি মিথ্যা বলছেন।
দিল্লির পথ দুর্ঘটনায় তরুণীর মৃত্যু গোটা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে। এই বিষয়ে তদন্ত চালাচ্ছে দিল্লি পুলিশ। প্রতিদিনই সামনে আসছে নতুন তথ্য। এই বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক দিল্লি পুলিশের কাছে রিপোর্ট তলব করেছে। এর মধ্যেই সামনে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। সংবাদ সংস্থা এএনআই সুত্রে খবর, অঞ্জলির এক বন্ধু জানিয়েছে যে সে, নিধি এবং নবীন অঞ্জলির অপর এক বন্ধু, দুর্ঘটনার আগে নববর্ষের প্রাক্কালে হোটেল ছেড়ে যাওয়ার সময় কিছু বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন।
দিল্লি পুলিশ ইতিমধ্যেই সিসিটিভি ফুটেজ ট্র্যাক করে নিধির বয়ান রেকর্ড করেছে। অদন্তে দিল্লি পুলিশ জানতে পেরেছে নিধি অঞ্জলি এবং আরও বেশ কয়েকজন বন্ধু নিউইয়ার সেলিব্রেশনে মেতে উঠেছিলেন, একটি হোটেলে পার্টি করছিলেন। সেই সময় অঞ্জলির সঙ্গে নিধির টাকা পয়সা কিছু বচসাও হয় বলে নবীন দিল্লি পুলিশকে জানিয়েছে। এদিকে, অঞ্জলির মা দুর্ঘটনাটিকে “সুচিন্তিত ষড়যন্ত্র” বলে অভিহিত করেছেন এবং অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। “নিধি সব ভুল কথা বলছে। নিধি যদি আমার মেয়ের বন্ধু হয়, তাহলে কীভাবে তাকে ছেড়ে গেল, একা? এটি একটি ‘সুচিন্তিত ষড়য’ন্ত্র। নিধি ঘটনায় যুক্ত থাকতে পারে। তদন্তে সবদিক খতিয়ে দেখা উচিৎ পুলিশের এমনটাই দাবি অঞ্জলির মায়ের।
দিল্লির ঘটনায়, মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজে অনুসারে জানা গেছে ঘটনার সময় অঞ্জলি তার বন্ধু নিধির সঙ্গে ছিলেন। একই সময়ে, হোটেল কর্মচারী্র দাবি ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় অঞ্জলি হোটেলে এসেছিলেন এবং দুজনেই রুম বুক করেছিলেন। নিধি জানিয়েছিল যে অঞ্জলির বন্ধুরাও এবং তার বয়ফ্রেন্ডও সেদিন ওই হোটেলেই আসেন। হোটেলের কর্মীরা দাবি করেন, অঞ্জলি ও নিধি দুজনেই মদ্যপ ছিলেন এবং গভীর রাতে দুজনের মধ্যে টাকা নিয়ে বচসাও হয়। এর পর দুজনেই স্কুটি নিয়ে চলে যায়।
শুক্রবার দিল্লি পুলিশ দুর্ঘটনায় জড়িত গাড়ির মালিক আশুতোষ সহ আরও দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে। এর আগে এই ঘটনায় দীপক খান্না, অমিত খান্না, কৃষাণ, মিঠুন এবং মনোজ মিত্তাল- পাঁচজনকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। এই মামলায় অভিযুক্ত সপ্তম ব্যক্তি – অঙ্কুশ খান্না। যিনি অমিত খান্নার খুড়তুতো ভাই। তিনি ঘটনার সময় গাড়ি চালাচ্ছিলেন বলে দাবি পুলিশের।
পুলিশ বলছে, পাঁচজনের মধ্যে একমাত্র তার ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল। সেই কারণেই তার নাম সামনে এনে অভিযোগটি হালকা করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও দাবি। দুর্ঘটনাস্থল থেকে দূরে তার টাওয়ার লোকেশান খুঁজে পেয়েছে পুলিশ। টাওয়ার লোকেশান অনুসারে জানা গিয়েছে সেই সময় অভিযুক্ত নিজের বাড়িতেই ছিলেন। পাশাপাশি তদন্তে পুলিশ জেনেছে দুর্ঘটনার সময় লাইসেন্স ছিল না চালকের। রাজপথে তরুণী খুনে সামনে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে এই ঘটনায় আরও ২ ব্যক্তির যোগ রয়েছে। তারা হলেন, গাড়ির মালিক আশুতোষ এবং এক অভিভুক্তের ভাই অঙ্কুশ খান্না যিনি প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করেছিলেন। ইতিমধ্যেই আশুতোষকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করছে পুলিশ।
ময়নাতদন্তে নিহত তরুণীর মাথায় গুরুতর আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। অভিযোগ, স্কুটির সঙ্গে ধাক্কা লাগার পরেও ওই তরুণীকে কোনও রকম সাহায্য না করেই প্রায় চার কিলোমিটার গাড়ি চালিয়ে দিয়ে যায় অভিযুক্তরা। দুর্ঘটনার কারণ নিয়েও উঠছে একাধিক প্রশ্ন। কানঝাওয়ালা-সুলতানপুরীর অই ঘটনায় তোলপাড় রাজধানী। দিল্লির এল জিভি কে সাক্সেনা টুইটে তিনি লিখেছেন, “কানঝাওলা-সুলতানপুরীর অমানবিক অপরাধের ঘটনায় লজ্জায় মাথা ঝুঁকে গিয়েছে। অভিযুক্তদের অসংবেদনশীল ব্যবহারে মর্মাহত। দিল্লির পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়েছে। সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”