Advertisment

দুর্বল হচ্ছে নদীবাঁধ, বানভাসির আশঙ্কা সুন্দরবনে

আয়লার ৯ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর এখনও সারানো হয়নি নদীবাঁধ। ফি বছরের মতো এ বারও বানভাসি হওয়ার ভয়কে সঙ্গী করে দিন গুজরান করছেন সুন্দরবনের মানুষ।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Sundarban dam condition (photo Feroz Ahmed)

বৃষ্টির পাশাপাশি জোয়ারের জল বাঁধ টপকে ঢুকে পড়েছে নামখানা, সাগর, পাথরপ্রতিমা ও কাকদ্বীপ ব্লকের বেশ কয়েকটি এলাকায়। (ফোটো- ফিরোজ আহমেদ)

ফিরোজ আহমেদ: ন বছর আগের কথা বটে, তবু দুর্যোগ আর বৃষ্টি হলেই এখনও শিরদাঁড়ায় ভয়ের স্রোত নামে সুন্দরবনের মানুষদের। এবারও তার ব্যতিক্রম নেই। বরং আয়লার বানভাসি স্মৃতি এবার আরও চেপে বসেছে, তার কারণ নদীবাঁধের হাল।

Advertisment

টানা  বৃষ্টিতে  নদীতে  জল বাড়ায় বাঁধ ভেঙে  গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কায় ভুগছেন  সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ। ইতিমধ্যে  প্লাবিত হয়েছে  উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় সুন্দরবনের বহু  এলাকা।

বিপদের আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকার  মানুষ। বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত প্রশাসনও।জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পরিস্থিতি মোকাবিলায় ২৪ ঘণ্টা কন্ট্রোল রুম খোলা রাখা হয়েছে।

একটানা  বৃষ্টির ফলে  সুন্দরবন এলাকার বেশ কয়েকটি  জায়গায় ইতিমধ্যেই বাঁধ, স্ল্যুইস গেট ভেঙে  নোনা  জল গ্রামে  ঢুকছে। প্লাবিত হয়েছে  সুন্দরবনের উপকূল অঞ্চলও।  বৃষ্টির পাশাপাশি  জোয়ারের জল বাঁধ টপকে  ঢুকে  পড়েছে  নামখানা, সাগর, পাথরপ্রতিমা , কাকদ্বীপের বেশ কয়েকটি  এলাকায়। সোমবার নামখানার মৌসুনি  দ্বীপের বালিয়াড়ি  কুসুমতলায় নদীবাঁধে ধস নেমে ৫০০ মিটার প্লাবিত হয়।   শতাধিক মানুষ এই প্লাবনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। পুকুরে  জল ঢোকায় ভেসে  গিয়েছে মাছ। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সেচ দফতরের গাফিলতির জেরে মৌশুনির বালিয়াড়ায় বাঁধ মেরামতির কাজ শুরু হয়নি, যার ফলে বাঁধ ভেঙ্গে গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। মৌসুনি দ্বীপের এক বাসিন্দা জানালেন, ‘আয়লার পর এতগুলো বছর কাটার পরেও থেকে আর মেরামতি হয়নি বাঁধের। প্রতি বছর এই সময় আতঙ্কে থাকতে হয়।‘

sundarban dam condition (photo Feroz Ahmed) ভরা কোটাল ও বর্ষার সময়ে কোথাও কোথাও বাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হয়। (ফোটো- ফিরোজ আহমেদ)

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কাকদ্বীপ মহকুমার নামখানা ব্লকের আয়লা বিধ্বস্ত মৌশুনি কুসুমতলায় সেচ দফতর বাঁধের কাজ শুরু করেছে। কিন্তু বালিয়াড়ির পশ্চিমাংশ নদী উপকূল অঞ্চল হওয়ার জন্য আয়লা বাঁধের ৫০০ মিটার কাজ শুরু করতে পারেনি সেচ দফতরের আধিকারিকেরা। বাঁধ মেরামতির জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়ার কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পরেও  হঠাৎ প্রবল বৃষ্টির ফলে বাঁধ মেরামতির কাজ সম্পূর্ণ করা সম্ভব হয়নি। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় বাঁধ মেরামতির কাজ চলছে। এর পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা তৈরি করে ত্রিপল ও খাবার দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। এ বিষয়ে সাগরের বিধায়ক বঙ্কিম হাজরা বলেন, ‘মৌশুনি দ্বীপের বাঁধ মেরামতি নিয়ে অনেক আগেই সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু ঠিকমতো কাজ হয়নি, এ বিষয়ে সেচ মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র কে বিষয়টি জানিয়েছি।‘

এদিকে, একটানা বৃষ্টির জেরে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে কাকদ্বীপ সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল। সমস্যায় পড়েন চিকিৎসা করাতে আসা মানুষজন থেকে শুরু করে চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্মীরা। জমা জল পেরিয়ে হাসপাতালে আসতে হচ্ছে রোগী, রোগীর আত্মীয় ও চিকিৎসকদের।

স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, আয়লা পরবর্তীকালে সুন্দরবনের বিভিন্ন নদীত নতুন করে বাঁধ তৈরি হয়নি। জোড়াতালি দিয়ে কোনও রকমে বাঁধ মেরামত করা হয়েছে মাত্র। ভরা কোটাল ও বর্ষার সময়ে কোথাও কোথাও বাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হয়। এ বারও টানা বৃষ্টিতে সুন্দরবনের গোসাবা ও বাসন্তী ব্লক এলাকায় বিদ্যা, দুর্গাদোয়ানি, মাতলা, হানা, হোগল, হাতাখালি নদীর জল বেড়ে যাওয়া বিভিন্ন জায়গায় নদী বাঁধে ধস নেমে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক জায়গায় আবার স্ল্যুইস গেট খারাপ হয়ে গিয়ে বর্ষার জল বেরোতে না পেরে এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

২০০৯ সালের ২৫ মে আয়লায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ। তার পরের বছর যোজনা কমিশন আয়লা বিধ্বস্ত ৭৭৮ কিলোমিটার বাঁধ কংক্রিটের করার জন্য ৫০৩২ কোটি টাকার প্যাকেজ অনুমোদন করে। কিন্তু বাঁধ তৈরির ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায় জমি জট। যার ফলে বাঁধ তৈরিতে প্রথম থেকেই সমস্যা দেখা দেয়। কেন্দ্র রাজ্যের যৌথ আর্থিক সহযোগিতায় বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরুর পরে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে পুরো প্রকল্পের কাজ ২০১২ সালে শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। জমি জটে কাজ আটক যাওয়ার পরে ওই সময়সীমা বাড়ানো হয় ২০১৫ সাল পর্যন্ত।

২০১৮ সালেও সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকায় বাঁধের কাজ শেষ হয়নি । যদিও প্রশাসনের দাবি, জমি জট কাটিয়ে জমি নিয়ে কংক্রিটের বাঁধ তৈরি করতে হচ্ছে, পাশাপাশি বহু জায়গায় সরাতে হচ্ছে স্লুইস গেটও। এ ছাড়াও প্রায়ই সুন্দরবনের নদী ফুলে ফেঁপে ওঠার ফলে কাজ থমকে যাচ্ছে। যদিও ক্যানিং মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকায় এবং গোসাবার দ্বীপ এলাকায় কংক্রিটের বাঁধ নির্মাণের কাজ বেশীরভাগটাই শেষ হয়ে গিয়েছে বলে প্রশাসনের দাবি।

Sundarban River Dam
Advertisment