প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈকে যৌন হেনস্থার মামলায় ক্লিন চিট দেওয়ার প্রতিবাদে সংগঠিত সমাজকর্মীদের আটক করা হল। মঙ্গলবার সকালে এই সমাজকর্মীরা সুপ্রিম কোর্টের বাইরে জড়ো হয়েছিলেন। বিক্ষোভকারীদের পক্ষ থেকে টুইট করে জানানো হয়েছে তাঁদের মাণ্ডি মার্গ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
প্রবীণ আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ জানিয়েছেন মোট ৫২জন মহিলা এবং তিনজন পুরুষকে সকাল পৌনে এগারোটা নাগাদ আটক করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, উঁচুতলার নির্দেশ পেলে এঁদের ছাড়া হবে।
প্রশান্ত ভূষণ টুইট করে বলেছেন, প্রধান বিচারপতিকে তাঁর সহকর্মীদের নিয়ে গঠিত ইন হাউস কমিটি একতরফা ভাবে তাঁকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্ল্যাকার্ড হাতে মহিলারা বিক্ষোভ দেখালে তাঁদের গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সাংবিধানিক অধিকার কি সুপ্রিম কোর্টের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়?
সোমবার সুপ্রিম কোর্টের আভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি প্রধান বিচারপতিকে যৌন হেনস্থার ঘটনায় একতরফা রিপোর্ট দেয়। ওই রিপোর্টে ক্লিন চিট দেওয়া হয় প্রধান বিচারপতিকে। একই সঙ্গে জানানো হয়, এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনা হবে না। এই প্রক্রিয়া এবং সিদ্ধান্তের জেরে বিভিন্ন স্তর থেকে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
বিচারপতি এস এ বোবডে, ইন্দিরা ব্যানার্জি এবং ইন্দু মালহোত্রাকে নিয়ে গঠিত কমিটি চারদিনে তদন্ত শেষ করে ফেলেছে। এর মধ্যে তিন দিন ব্যয় করা হয়েছে অভিযোগকারিণীকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তাঁর বয়ান রেকর্ড করার জন্য। তৃতীয় দিনে অভিযোগকারিণী এই প্রক্রিয়া থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, তাঁকে কোনও আইনজীবী দেওয়া হচ্ছে না এবং এই কমিটির কাছ থেকে ন্যায়বিচার পাবেন না বলেই মনে করছেন তিনি। চতুর্থ দিনে দেশের প্রধান বিচারপতি প্যানেলের সামনে হাজির হয়েছিলেন।
আভ্যন্তরীণ কমিটি জানিয়েছে, অভিযোগের কোনও সারবত্তা নেই
প্য়ানেল তাঁর অভিযোগের কোনও সারবত্তা খুঁজে পায়নি- একথা জানার পর তাঁর প্রথম প্রতিক্রিয়ায় অভিযোগকারিণী এক বিবৃতিতে বলেছেন, আমার আশঙ্কা সত্যি হয়েছে। এবং আভ্যন্তরীণ কমিটি আমার অভিযোগের কোনও সারবত্তা খুঁজে না পাওয়ায় আমি অত্যন্ত হতাশ এবং দেশের এক মহিলা নাগরিক হিসেবে আমি সুবিচারের তীব্র অভাব বোধ করছি। আমি ভয়ংকর ভীত ও শঙ্কিত কারণ আভ্যন্তরীণ কমিটির সামনে সমস্ত বিষয় পেশ করা সত্ত্বেও ওঁরা আমার চাকরি যাওয়া, সাসপেনশন এবং আমার ও আমার পরিবারের অপমান ও অসম্মানের ব্যাপারে কোনও রকম সুরক্ষা বা সুবিচার দেননি বলেই মনে হচ্ছে। আমি ও আমার পরিবার ভয় পাচ্ছি যে আমরা প্রতিহিংসা ও আক্রমণের শিকার হব।
এ ব্যাপারে রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পরে পরেই প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ ও আরও দুই বিচারপতি গোটা বিষয়টি যে একটি ষড়যন্ত্র সে কথা উল্লেখ করে একটি নির্দেশে স্বাক্ষর করেন।
আইনজীবী উৎসব বৈনস একটি হলফনামা দাখিল করে অভিযোগ করেছেন, শীর্ষ আদালতের কিছু হতাশ কর্মী প্রধান বিচারপতিকে যৌন হেনস্থার ভুয়ো মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন। সুপ্রিম কোর্টের এক বেঞ্চ এই ষড়যন্ত্রের তদন্তের জন্য অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি একে পট্টনায়ককে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেছে। তাঁকে এ তদন্তে সহযোগিতা করবেন সিবিআই ডিরেক্টর, আইবি ডিরেক্টর এবং দিল্লি পুলিশের কমিশনার।
বৈনস দাবি করেছেন, যিনি প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের সেই জুনিয়র কোর্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট, গোটা বিষয়টি জনসমক্ষে নিয়ে আসার জন্য সাংবাদিক সম্মেলন করতে বলেছিলেন। এ জন্য তাঁকে অর্থ দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছেন বৈনস।
Read the Story in English