"এই প্রতিষ্ঠান সরকারের পণবন্দী নয়", এই মন্তব্য করে সোমবার সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে, এক সপ্তাহের মধ্যে দেশের নানা জায়গায় আটক পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরার অনুমোদন সংক্রান্ত একটি মামলায় জবাবদিহি করতে।
মামলায় দুই আবেদনকারী হলেন আইআইএম আহমেদাবাদের প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত অধিকর্তা জগদীপ এস ছোকার, এবং উকিল গৌরব জৈন। তাঁদের হয়ে সওয়াল করতে গিয়ে অ্যাডভোকেট প্রশান্ত ভূষণ বলেন, পরিযায়ী শ্রমিকদের দুরবস্থা দেখেও দেখছে না সরকার, এবং তাঁদের সাংবিধানিক অধিকার কার্যকর করা হচ্ছে না।
এর উত্তরে বিচারপতি এনভি রমণ, সঞ্জয় কিষণ কাউল এবং বিআর গভাই ভূষণের কাছে জানতে চান, তাঁর যদি দেশের বিচার ব্যবস্থার ওপর ভরসাই না থাকে, তবে তাঁর মামলা আদালত শুনবে কেন? আদালতের বক্তব্য, "বিচার ব্যবস্থার ওপর আপনার ভরসা নেই। এই প্রতিষ্ঠান তো সরকারের পণবন্দী নয়।"
কেন্দ্রের তরফে সওয়াল করতে গিয়ে দেশের সলিসিটর-জেনারেল তুষার মেহতা বলেন সরকার এ বিষয়ে যথেষ্ট চিন্তিত, এবং পরিযায়ী শ্রমিকদের সবরকম সাহায্য করার চেষ্টা করা হচ্ছে। মেহতা এও বলেন যে ভূষণের ধরে নেওয়া উচিত নয় যে একমাত্র তিনিই সাংবিধানিক অধিকার রক্ষা বলবৎ করা নিয়ে চিন্তিত। মেহতার কথায়, "এটা সরকারের সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত... মিঃ ভূষণ তো প্রতিবার হেরে যাওয়ার পর আদালত প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে বলেন, এটি একটি কালা দিবস। জনস্বার্থ মামলার আবেদনকারী হয়ে তো সরকার চালানো যায় না।"
লকডাউন চলাকালীন পরিযায়ী শ্রমিকদের চরম দুরবস্থার বর্ণনা দিয়ে ভূষণ বলেন, এঁদের মধ্যে ৯০ শতাংশের কাছেই রেশন বা বেতন, কোনোটাই পৌঁছয় নি। "মরিয়া অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা, তাঁদের নিজেদের জায়গায় ফিরে যেতে দেওয়া উচিত," বলেন তিনি।
তবে মেহতা এই তথ্যকে ভুল আখ্যা দিয়ে আবেদনকারীদের জমা দেওয়া তথ্যের ভিত্তি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, কতজন পরিযায়ী শ্রমিককে স্থানান্তরিত করতে হবে, সে বিষয়ে বিভিন্ন রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করছে কেন্দ্র।
আদালতের কাছে ভূষণ আবেদন জানান যেন পরিযায়ী শ্রমিকদের আন্তঃরাজ্য যাতায়াতের অনুমতি দেওয়া হয়, যার বিরোধিতা করে মেহতা বলেন যে এই বিষয়ে বৃহত্তর স্বার্থের কথা মাথায় রেখে সব দিক খতিয়ে দেখার দায়িত্ব সরকারের।
ইতিমধ্যে উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, এবং রাজস্থানের মতো রাজ্য অন্যান্য রাজ্যে আটক তাদের বাসিন্দাদের ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু করে দিয়েছে, এবং এই উদ্দেশ্যে একটি সমন্বিত প্রক্রিয়া চালু হয়ে গিয়েছে।
উল্লেখযোগ্য ভাবে, গত ১৯ এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে জারি করা একটি বিস্তারিত নির্দেশিকায় রাজ্যের অন্দরে পরিযায়ী শ্রমিকদের যাতায়াতের অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রত্যেক রাজ্যকে নির্দেশ দেওয়া হয় এই শ্রমিকদের খবার, পানীয় জল, এবং যাতায়াতের জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা করতে। তবে এই নির্দেশিকায় শ্রমিকদের আন্তঃরাজ্য যাতায়াতের ওপর নিষেধাজ্ঞা বজায় থাকে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন