অন্তঃসত্ত্বা অবিবাহিত মহিলার গর্ভপাতে সম্মতি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ২৪ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভপাতের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ২৫ বছর বয়সি এক মহিলার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই রায় দিয়েছে শীর্ষ আদালত। বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি সূর্য কান্ত, বিচারপতি এএস বোপান্নার বেঞ্চ দিল্লি এইমসের এক বিশেষ মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে আলোচনার পর এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে, এই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনও ঝুঁকি ছাড়াই গর্ভপাত করা যেতে পারে।
এতে বিশেষভাবে অবিবাহিত মহিলাদের ওপর জোর দিয়েছে আদালত। লিভ-ইন সম্পর্কের ক্ষেত্রে অন্তঃসত্তা মহিলারা ২৪ সপ্তাহ হলেও গর্ভপাত করাতে পারেন। দিল্লি হাইকোর্টের এক রায় খারিজ করে ঐতিহাসিক রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। এজলাসে দাঁড়িয়ে মহিলার আইনজীবী জানান, বর্তমানে প্রবল মানসিক অশান্তির মধ্যে দিয়ে দিন কাটছে তার মক্কেলের। সব দিক বিবেচনা করে ঐতিহাসিক রায় সুপ্রিম কোর্টের। রায়দানে ১৯৭১ সালের প্রেগনেন্সি অ্যাক্টকে মান্যতা দিয়ে গর্ভপাতের অধিকার সংক্রান্ত এই বার্তা দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
উল্লেখ্য দেশের আইন অনুসারে ধর্ষণ অথবা অন্যান্য বিশেষ ক্ষেত্রে অন্তঃসত্তা মহিলাদের গর্ভপাতের সর্বোচ্চ মেয়াদ ২৪ সপ্তাহ। শুক্রবার, বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এবং জে বি পার্দিওয়ালার একটি বেঞ্চ বলেছে একজন অবিবাহিত মহিলা যিনি ২০ সপ্তাহের বেশি গর্ভধারণ করেন তিনি বিবাহিত মহিলার মতো একই মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করতে পারেন। চারপাশের এত অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে আইনকেও এগিয়ে যেতে হবে।
আরও পড়ুন: < ছাত্র আন্দোলনে উত্তপ্ত মণিপুর, পাঁচদিনের জন্য বন্ধ ইন্টারনেট পরিষেবা >
১৯৭১ সালের 'মেডিক্যাল টার্মিনেশন অফ প্রেগন্যান্সি আইন' অনুযায়ী ভ্রূণের বয়স ২০ সপ্তাহ পেরোলেই গর্ভপাত নিষিদ্ধ ছিল। এছাড়া ১২ সপ্তাহের পর গর্ভপাত করাতে চাইলে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিলেই চলত। ২০ সপ্তাহের পর গর্ভপাতের অনুমোদন নিতে হলে বিশেষ মেডিক্যাল বোর্ডের অনুমতির প্রয়োজন। ১২ থেকে ২০ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভপাত করাতে হলে দুই চিকিৎসকের অনুমতির প্রয়োজন। গর্ভবতী অবস্থায় বিবাহ বিচ্ছেদ হলে বা স্বামীর মৃত্যু হলেও ২৪ সপ্তাহ পর্যন্ত গর্ভপাতের আর্জি বিবেচনা করা হয়ে থাকে। দেশের আইন অনুসারে ধর্ষণ অথবা অন্যান্য বিশেষ ক্ষেত্রে অন্তঃসত্তা মহিলাদের গর্ভপাতের সর্বোচ্চ মেয়াদ ২৪ সপ্তাহ।
এই সংশোধনী বিল মহিলাদের নিরাপত্তা এবং সুস্বাস্থ্যের দিকে কয়েক ধাপ এগিয়ে দেবে। মহিলাদের সম্মান, স্বাধীনতা, গোপনীয়তা এবং ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকারকে সম্মান দিতেই গর্ভপাতের সময়সীমা বৃদ্ধি বলেও উল্লেখ করা হয়েছিল। ২৫ বছর বয়সি এক অবিবাহিত মহিলা তাঁর ২৩ সপ্তাহ ৫ দিনের গর্ভাবস্থা থেকে মুক্তি পেতে গর্ভপাতের আবেদন জানিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টে যদিও এ বিষয়ে শীর্ষ আদালত জানিয়ে দিয়েছে, মহিলার যদি প্রাণের কোনও ঝুঁকি না থাকে তবে তিনি চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়ে গর্ভপাত করাতে পারবেন এবং তাঁর রিপোর্ট আদালতে পেশ করতে হবে।
২৫ বছর বয়সি এক মহিলার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৪ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভপাতের অনুমতি সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত সমস্ত অবিবাহিত মহিলাদের জন্য নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে। এদিন আদালতে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল ঐশ্বরিয়া ভাটি, যিনি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পক্ষে হাজির হয়েছিলেন, বলেছিলেন যে প্রশ্নটি বিবাহিত বা অবিবাহিত হওয়া নিয়ে নয় বরং এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে মহিলার স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়। এবিষয়ে আদালত অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেলকে পরামর্শ পেশেরও অনুরোধ করেন। আগামী সপ্তাহেই এই মামলার শুনানি হওয়ার কথা।