সুপ্রিম কোর্ট 'নোট ফর ভোট মামলায়' তার পুরনো সিদ্ধান্তকে বাতিল করেছে। যদি কোনও বিধায়ক বা সাংসদ টাকা নিয়ে হাউসে বক্তৃতা বা ভোট দেন, তবে তিনি কী ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার আওতায় পড়বে? এনিয়ে বড় নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। জন প্রতিনিধি হিসাবে অর্জিত বিশেষাধিকারের অধীনে এই জাতীয় ঘুষের মামলায় আইনি পদক্ষেপ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে? এ বিষয়ে শুনানি করে সুপ্রিম কোর্ট।
নোটের বদলে ভোট ইস্যুতে রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। বেঞ্চ তার ২৬ বছরের আগের সিদ্ধান্ত বাতিল করেছে। এখন সাংসদ বা বিধায়করা ঘুষের বিনিময়ে হাউসে ভোট দেন বা ভাষণ দেন তাহলে সংশ্লিষ্ট সাংসদ বা বিধায়কের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কোন আইনি রক্ষাকবচ মিলবে না। আজ এক গুরুত্বপূর্ণ রায়ে সুপ্রিম কোর্টের সাত বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। এখন সাংসদ বা বিধায়করা টাকা নিয়ে ভাষণ দিলে বা ভোট দিলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপে কোন বাধা থাকবে না।
এই প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের ১০৫ নং ধারার উল্লেখ করেছে। আদালত বলেছেন, ঘুষের মামলায় কোন সাংসদ বা বিধায়কদের ছাড় দেওয়া হবে না। সিজেআই ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেছেন, "আমরা পিভি নরসিমা মামলার সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত নই। একই সঙ্গে আদালতের আগের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে । সুপ্রিম কোর্ট বিশ্বাস করে যে বিধায়কদের দুর্নীতি এবং ঘুষ নেওয়া ভারতীয় সংসদীয় গণতন্ত্রের কার্যকারিতাকে ধ্বংস করে।
তার ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তে, সুপ্রিম কোর্ট যে সকল সাংসদ বা বিধানসভায় ভোটের জন্য ঘুষ নিয়েছে তাদের বিচার ব্যবস্থা থেকে কোনরমকের ত্রাণ দিতে অস্বীকার করেছে। সুপ্রিম কোর্ট পিভি নরসিমা রাও মামলায় ১৯৯৮ সালে দেওয়া তার আগের রায়কে বাতিল করেছে। সাত বিচারপতির একটি সাংবিধানিক বেঞ্চ বলেছে যে সংসদীয় বিশেষাধিকারের অধীনে ঘুষকে ছাড় দেওয়া যাবে না।
রায় দেওয়ার সময় প্রধান বিচারপতি বলেন 'বেঞ্চের সমস্ত বিচারপতি এই বিষয়ে একমত যে আমরা পিভি নরসিমা রাও মামলায় দেওয়া সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত নই।' ঘটনার সূত্রপাত ১৯৯৮ সালে। পিভি নরসিংহ রাও বনাম রাষ্ট্রের একটি মামলায় সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল সাংসদ ও বিধায়করা বক্তৃতা এবং ভোটের সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যাপারে ঘুষের জন্য ফৌজদারি মামলার আওতায় পড়বেন না। নরসিমা রাও মামলায় তার সিদ্ধান্তে, ভোটের বিনিময়ে নোট নেওয়ার ক্ষেত্রে সাংসদ এবং বিধায়কদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি বলেন, 'সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১০৫ এবং ১৯৪ ঘুষ থেকে অব্যাহতি প্রদান করে না কারণ ঘুষ একটি অপরাধমূলক কাজ এবং সংসদে বক্তৃতা বা ভোট দেওয়ার জন্য এটি কোনভাবেই প্রয়োজনীয় নয়।
প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, আমরা বিশ্বাস করি ঘুষ দেওয়া কোনো সংসদীয় সুবিধা নয়। সম্মানিত ব্যক্তিদের দুর্নীতি ও ঘুষ ভারতের সংসদীয় গণতন্ত্রকে ধ্বংস করছে। আদালত বলেছে যে রাজ্যসভা নির্বাচনের জন্য ঘুষ নেওয়ার জন্য বিধায়কদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি বিরোধী আইনে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের বিষয়ে, আইনজীবী অশ্বিনী উপাধ্যায় বলেছেন যে আজ সাত বিচারপতির বেঞ্চ বলেছে যে সাংসদরা যদি টাকা নিয়ে প্রশ্ন করেন বা হাউসে ভোট দেন, তাহলে তারা বিশেষাধিকারের যুক্তি দিয়ে মামলা থেকে তার দায় এড়াতে পারবে না। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে যে ভোট বা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করার জন্য টাকা নেওয়া ভারতের সংসদীয় গণতন্ত্রকে ধ্বংস করবে।
সুপ্রিম কোর্ট নরসিমা রাওয়ের ১৯৯৮ সালের সিদ্ধান্ত বাতিল করেছে। সংসদ বা বিধানসভায় নির্বাচনে ঘুষ নিয়ে ভোট দিলে তা ফৌজদারি মামলার আওতায় আসবে বলে এদিন সাফ জানিয়ে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সোমবার এক মামলায় উল্লেখযোগ্য রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এর আগে ঘুষ সংক্রান্ত মামলায় সাংসদ বা বিধায়কদের বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে না বলে জানিয়েছিল শীর্ষ আদলত। পুরনো সেই রায়কে বাতিল করে দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ।
ঘটনার সূত্রপাত ১৯৯৮ সালে। পিভি নরসিংহ রাও বনাম রাষ্ট্রের একটি মামলায় সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল সাংসদ ও বিধায়করা বক্তৃতা এবং ভোটের সঙ্গে সম্পর্কিত কোন ব্যাপারে ঘুষের জন্য ফৌজদারি মামলার অধীনে পড়বেন না। ২০১২ সালে রাজ্যসভা নির্বাচনের সময় ঝাড়খণ্ড মুক্তি বিধায়ক সীতা সোরেনের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এরপর ঘটনার তদন্তে নামে সিবিআই। ২০১৪ সালে মামলাটির শুনানি হয়েছিল ঝাড়খণ্ড হাইকোর্টে। কিন্তু সেই সময় মামলাটি খারিজ করতে রাজি হয়নি উচ্চ আদালত। পরে তা গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট। ২০১৯ সালে তার শুনানি হয়।
কিন্তু, ১৯৯৮ সালে ঘুষ সংক্রান্ত সুপ্রিম নির্দেশের জেরে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ-এর নেত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ তা বৃহত্তর বেঞ্চে পাঠিয়েছিল। সেই মামলায় শুনানি হয় বর্তমান প্রধান বিচারতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন সাংবিধানিক বেঞ্চে। আগের সুপ্রিম নির্দেশকে বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। ঘুষ সংক্রান্ত অভিযোগ উঠলে ফৌজদারি মামলা করা যাবে বলে জানিয়েছে শীর্ষ আদালত। লোকসভা নির্বাচনের আগে এটি ফের এক উল্লেখযোগ্য রায় বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।