Advertisment

ব্যভিচার আইন সেকেলে, অসাংবিধানিক: সুপ্রিম কোর্ট

"ব্যভিচার বিবাহিত জীবনে অশান্তির কারণ অথবা ফল হতে পারে, কিন্তু স্রেফ ব্যভিচার কোনও অপরাধ হতে পারে না, যদি না তা ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারায় আত্মহত্যার প্ররোচনা যোগানোর আওতায় আসে।"

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে একটি আবেদনের ওপর আজ রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট। ব্যভিচার সংক্রান্ত এই ধারা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল, এটি আদৌ সাংবিধানিক কী না। দেশের শীর্ষ আদালত আজ সর্বসম্মতভাবে জানাল, ৪৯৭ ধারা অসাংবিধানিক, এবং ব্যভিচার আইনত শাস্তিযোগ্য অপরাধ নয়।

Advertisment

অগাস্ট মাসে এই মামলায় রায়দান মুলতুবি রাখে পাঁচ বিচারপতির একটি বেঞ্চ, যার নেতৃত্বে ছিলেন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র, সঙ্গে বিচারপতি আর এফ নরিমান, এ এম খানউইলকর, ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, এবং ইন্দু মালহোত্রা। আজ চারটি রায় দেওয়া হয়েছে, যেহেতু বিচারপতি মিশ্র তাঁর এবং বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের তরফ থেকে যৌথ রায় জারি করেছেন।


বর্তমান ব্যভিচার আইন অনুযায়ী, কোনও পুরুষ কোনও বিবাহিতা নারীর সঙ্গে তাঁর স্বামীর অনুমতি ছাড়া সম্পর্ক স্থাপন করলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এই মামলায় আবেদনকারীদের বক্তব্য ছিল, ৪৯৭ ধারা লিঙ্গ নিরপেক্ষ হওয়া উচিৎ। ভারতে ব্যভিচারের শাস্তি বর্তমানে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড, অথবা জরিমানা, বা দুইই।

আইনি কচকচি বাদ দিলে যা দাঁড়ায় তা হলো, কোনও পুরুষ যদি পরস্ত্রীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হন, সেই নারীর স্বামীর অনুমতি ছাড়া, তবে তাঁর শাস্তি হবে। কিন্তু আইন এতদিন কোনও নারীকে এই অধিকার দেয় নি যে তিনি অনুরূপ পরিস্থিতিতে তাঁর স্বামীকে আইনের আওতায় আনতে পারেন। যে বিবাহিতা স্ত্রীর সঙ্গে ওই পুরুষের সম্পর্ক তৈরি হয়, তাঁরও শাস্তির বিধান ছিল না। সোজা কথায়, এক্ষেত্রে একমাত্র বিবাহিতা মহিলার স্বামীর অধিকার ছিল আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার।


আজ রায়দান পর্বের শুরুতেই বিচারপতি মিশ্র বলেন, স্বামী অর্থে প্রভু, এই ধারণা পাল্টানোর সময় এসেছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না, যে কোনও একটি লিঙ্গের সার্বভৌম ক্ষমতা থাকবে অপর একটি লিঙ্গের ওপর। এর পর বিচারপতি মিশ্র এবং খানউইলকর বলেন, "ব্যভিচারকে কিছু সামাজিক পরিস্থিতিতে কারণ হিসেবে ধরা যেতে পারে, যেমন বিবাহ বিচ্ছেদ, কিন্তু তা কখনওই অপরাধমূলক বলে গণ্য হতে পারে না। ব্যভিচার নারীর নিজস্ব সত্তাকে আঘাত করে।"

বিচারপতি মিশ্র আরও বলেন, ৪৯৭ ধারা ভারতীয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২১, যাতে স্বাধীনভাবে জীবনযাপনের অধিকারের কথা বলা হয়েছে, এর বিরোধী। একজন নারীকে সমাজের ইচ্ছানুযায়ী জীবনযাপন করতে বলা যায় না। "আমরা আদর্শ পরিস্থিতির কথা বলছি না, স্রেফ ব্যভিচারকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে কী না, তাই খতিয়ে দেখছি," তাঁদের রায়ে বলেন মিশ্র এবং খানউইলকর।

"ব্যভিচার বিবাহিত জীবনে অশান্তির কারণ অথবা ফল হতে পারে, কিন্তু স্রেফ ব্যভিচার কোনও অপরাধ হতে পারে না, যদি না তা দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারায় আত্মহত্যার প্ররোচনা যোগানোর আওতায় আসে," বলেন মিশ্র, এবং ব্যভিচারকে অপরাধ হিসেবে দেখাকে অসাংবিধানিক আখ্যা দেন।


অন্যদিকে, বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেন যে ৪৯৭ ধারা নারীর সম্মানহানি করে, এবং বিচারপতি নরিমান বলেন, যুক্তি বহির্ভূত যে কোনও আইনের অবসান ঘটা উচিৎ। বিচারপতি চন্দ্রচূড় আরও বলেন, এই আইন বিবাহিত মহিলাদের অনুমতির অধিকার থেকে বঞ্চিত করে, এবং বিবাহ বন্ধনে প্রবেশ করার পর নারীর নিজস্ব সত্তা হারিয়ে যায়। এটি নারীর যৌন স্বাধীনতার পরিপন্থী। সবশেষে বিচারপতি মালহোত্রা বলেন, ৪৯৭ ধারা বজায় রাখার স্বপক্ষে কোনরকম যুক্তিই নেই।

আজকের রায়ের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় মহিলা কমিশনের সভানেত্রী রেখা শর্মা সংবাদ সংস্থা এ এন আই কে বলেন, "আমরা এই রায়কে স্বাগত জানাই। এই আইন অনেক আগেই বাতিল হওয়া উচিৎ ছিল। এটি ব্রিটিশ যুগের আইন, এবং তারা অনেক আগেই এটি বর্জন করা সত্ত্বেও আমরা আজও ধরে বসেছিলাম।"

supreme court
Advertisment