আগামী ২ অক্টোবর অবসর নিতে চলেছেন ভারতের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র। তাঁর অবসরের আগে, এ সপ্তাহেই বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায় দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের। এর মধ্যে রয়েছে আধার মামলা, অযোধ্যা মামলা এবং ব্যাভিচারের অপরাধ লিঙ্গ নিরপেক্ষ হবে কি না সেই বিষয়ক মামলা।
আজ শীর্ষ আদালতে রায় দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মামলারও। চার্জশিট পাওয়া অসামীরা সাংসদ বা বিধায়ক পদের জন্য নির্বাচনে লড়ার অধিকার পাবেন কি না এবং যেসব সাংসদ-বিধায়করা আইনজীবী হিসেবে কাজ করেন, তাঁরা দ্বৈত ভুমিকা পালন করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে রায় দেওয়া হতে পারে আজ। প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ এ নিয়ে তাঁদের রায় জানাবেন। এ ব্যাপারে বেশ কয়েকটি পক্ষের তরফে আবেদন জমা পড়েছিল আদালতে, যার মধ্যে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও রয়েছে।
আরও পড়ুন, সুপ্রিম কোর্টের পরবর্তী প্রধান বিচারপতি হচ্ছেন রঞ্জন গগৈ
অন্য যে সমস্ত মামলার রায় দেওয়া হতে পারে সেগুলি হল:
আধার
চার মাসের বেশি সময় ধরে মোট ৩৮ দিন ম্যারাথন শুনানি হয়েছে আধার মামলার। মামলা শুনেছেন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ। ২০১৭ আধার আইন সংবিধান সম্মত নয় বলে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে একাধিক পিটিশন জমা পড়েছিল শীর্ষ আদালতে। শুনানি শেষ হওয়ার পর রায়দান স্থগিত রেখেছিল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালত স্থির করবে আধার সাংবিধানিক কী না এবং বিভিন্ন কল্যাণমূলক প্রকল্পে আধার বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত সরকার নিতে পারে কী না। নাগরিকদের বায়োমেট্রিক তথ্যাদি অন্যতম উপাদান হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন মহল থেকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে আধার।
অযোধ্যা
রাম মন্দির-বাবরি মসজিদ মামলার শুনানি শুরু হবে ২৮ সেপ্টেম্বর। দীর্ঘদিনের বকেয়া অযোধ্যা মামলা এখন শুনানি হচ্ছে প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র, বিচারপতি অশোক ভূষণ এবং বিচারপতি এস আব্দুল নাজিরের বেঞ্চে। ২০১০ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্ট রায় দিয়েছিল বিতর্কিত জমিকে তিন ভাগে ভাগ করে দেওয়ার। সেই রায়কে চ্যলেঞ্জ জানিয়ে শীর্ষ আদালতে বেশ কিছু আবেদন জমা পড়ে। আইনজীবীদের একাংশ মনে করছেন এই মামলা বৃহত্তর বেঞ্চে শুনানি হওয়া উচিত এবং বিষয়টি সাংবিধানিক কিনা তাও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
শবরীমালা
শবরীমালা আয়াপ্পা মন্দিরে ১০ থেক ৫০ বছর বয়সী মহিলাদের প্রবেশাধিকার নিয়ে যে নিষেধ জারি রয়েছে, তাকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা মামলার রায় দেবে শীর্ষ আদালত। এ বছরের অগাস্টে কেরালা সরকার শীর্ষ আদালতে জানিয়ে দেয়, শবরীমালা মন্দিরে মহিলাদের প্রবেশাধিকার নিয়ে তাদের কোনও আপত্তি নেই। প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র, বিচারপতি আর এফ নরিম্যান, বিচারপতি এ এম খানউইলকর, বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি ইন্দু মালহোত্রাকে নিয়ে গঠিত বেঞ্চ এই মামলার রায় দেবে।
পদোন্নতিতে সংরক্ষণ
পদোন্নতিতে সংরক্ষণ সম্পর্কে ২০০৬ সালে এম নাগরাজ মামলায় আদালত রায় দিয়েছিল, "পদোন্নতির ক্ষেত্রে তফশিলি জাতি ও তফশিলি উপজাতিদের সংরক্ষণ দিতে বাধ্য নয় সরকার। তবে সরকার যদি এ ধরনের কোনও সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে ওই শ্রেণির পশ্চাৎপদতা এবং সরকারি ক্ষেত্রে এই শ্রেণির অপর্যাপ্ত প্রতিনিধিত্ব সম্পর্কিত নির্দিষ্ট তথ্য দিতে হবে।"
আদালতের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলে আবেদন করেছে কেন্দ্র। 'নির্দিষ্ট তথ্য' কীভাবে নির্ধারিত হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে কেন্দ্রের তরফে। কেন্দ্রের আবেদনে এম নাগরাজ মামলার বিষয়টি সাত সদস্যের বেঞ্চে পরীক্ষা করার আবেদন জানানো হয়। গত জুলাই মাসে এ নিয়ে সিদ্ধান্ত মুলতুবি রাখে সুপ্রিম কোর্ট।
আরও পড়ুন, ৪৯৮ এ ধারায় অভিযোগের ক্ষেত্রে গ্রেফতারের অধিকার পুলিশের ওপর ছাড়ল সুপ্রিম কোর্ট
ব্যাভিচার
ব্যাভিচারে শাস্তিমূলক আইন সংবিধান সম্মত নয় বলে শীর্ষ আদালতে যে আবেদন করা হয়েছিল, গত অগাস্ট মাসে তা নিয়ে সিদ্ধান্ত দান মুলতুবি রাখা হয়। ব্যভিচার আইনে কোনও বিবাহিতা মহিলা স্বামীর অসম্মতিতে কোনও পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হলে তার জন্য শাস্তি দেওয়া হয় পুরুষকে, মহিলাকে নয়। মামলার শুনানির পর সুপ্রিম কোর্ট এ ব্যাপারে সরকারের কাছে তার অবস্থান জানতে চেয়েছিল। আবেদনকারীরা চান, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারায় কেবলমাত্র পুরুষরা যে শাস্তি ভোগ করে থাকেন, তা বদলে লিঙ্গ নিরপেক্ষ করা হোক।