Pegasus Row: বিতর্কিত পেগাসাস-কাণ্ডে বুধবার রায় দেবে সুপ্রিম কোর্ট। ১৩ সেপ্টেম্বর এই মামলার শুনানি শেষ হয়েছে। তারপর থেকেই স্থগিত রায়দান। নজরদারি-কাণ্ডে সরকারি ভূমিকার সমালোচনা করে শীর্ষ আদালতে একাধিক জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছিল। প্রধান বিচারপতি এনভি রামান্নার বেঞ্চে সেই মামলাগুলির শুনানি চলে। যদিও সেই সময় শীর্ষ আদালত বলেছিল, ‘বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়ে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ করতে চায় আদালত। কিন্তু অনেক বিশেষজ্ঞই রাজনৈতিক কারণে কমিটির সদস্য হতে চাইছেন না। তাই এই কমিটি গড়া সময়সাপেক্ষ।‘
এবার দেখার বুধবার রায়ে কী পদক্ষেপ নেয় শীর্ষ আদালত। যদিও ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে বলেছে, উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে বিষয়টির রাজনীতিকরণ করা হয়েছে। বিরোধী শিবির কিংবা কোনও স্বাধীন প্রতিষ্ঠানের উপর নজরদারি করার উদ্দেশ্য সরকারের নেই। তবে সেই হলফনামায় কোথাও উল্লেখ ছিল না, কেন্দ্র ইজরায়েলি সংস্থা এনএসও থেকে আদৌ পেগাসাস সফটওয়ার কিনেছিল কি না। মামলাকারীদের তরফে সেই বিষয়ে আলোকপাত করতে শীর্ষ আদালতকে অনুরোধ করা হয়েছিল।
তবে আদৌ সেই সফটওয়ার দেশের তাবড় ব্যক্তিত্বের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে তাঁদের ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হয়েছে কিনা? সেটা জানতেই বেশি আগ্রহী শীর্ষ আদালত। মামলাকারী এবং সরকারপক্ষ, দুই তরফকে এই অবস্থান জানিয়ে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট।
এদিকে পেগাসাস বিতর্ক কী? ইজরায়েলের এনএসও সংস্থার তৈরি পেগাসাস স্পাইওয়্যারকে কাজে লাগিয়ে মোদী সরকারের দুই মন্ত্রী, বিরোধী নেতা-নেত্রী, সাংবিধানিক পদে কর্তব্যরত ব্যক্তি, একাধিক সাংবাদিক ও ব্যবসায়ী সহ প্রায় ৩০০ জন ভারতীয়র মোবাইল ফোনে আড়ি পাতা হয়েছে বলে অভিযোগ। বাদল অধিবেশনের আগে যাকে কেন্দ্র করে ঝড় উঠেছে দেশের রাজনীতিতে। ফোনে আড়িপাতার অভিযোগ ঘিরে সোমবার সংসদে শাসক-বিরোধী ঝড় উঠতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
ইজরায়েলি সংস্থা এনএসও যেসব দেশকে পেগাসাস বেচেছিল, তাদের তথ্যভাণ্ডার থেকেই প্রায় ৫০ হাজার ফোন নম্বর ফাঁস হয়ে যায়। তার মধ্যেই এ দেশের ৩০০-র বেশি নম্বর রয়েছে। প্যারিসের অলাভজনক সংবাদ সংস্থা ‘ফরবিডেন স্টোরিজ’ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই তথ্যভাণ্ডার প্রথমে হাতেপায়। তারপর তারা এই তথ্যভাণ্ডার বিভিন্ন দেশের ১৬টি সংবাদমাধ্যমের হাতে তুলে দেয়। ভারতে ‘দ্য ওয়্যার’ নামের ওয়েব পোর্টাল এই তথ্যভাণ্ডার হাতে পেয়েছিল। এই ১৬টি সংবাদমাধ্যম মিলে ‘পেগাসাস প্রোজেক্ট’ নামের তদন্ত চালায়। ফোননম্বরগুলোর ফরেন্সিক পরীক্ষা হয়। তাতেই ৩৭টি ফোনে পেগাসাস স্পাইওয়্যার থাকার স্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে। যার মধ্যে ১০টি ভারতের।
আড়ি পাতার নির্দেশ কে দিয়েছিল? বিরোধীদের অভিযোগের তির মোদী সরকারের দিকে। ইজরায়েলি সংস্থা এনএসও আগেই জানিয়েছিল, বিভিন্ন দেশের সরকারকেই শুধু পেগাসাস স্পাইওয়্যার বিক্রি করা হয়েছিল। উল্লেখ্য, বিভিন্ন দেশের নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাই এই স্পাইওয়্যার কাজে লাগিয়ে ফোনে আড়ি পেতে থাকে। কিন্তু একক্ষেত্রে কেন্দ্রের অনুমতি বাধ্যতামূলক। তাহলে কি মোদী সরকারই নিজের মন্ত্রীদের ফোন আড়ি পাতার আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছিল? এই প্রশ্ন তুলছে বিরোধিরা।
যদিও আড়িপাতার অভিযোগ নস্যাৎ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রের তরফে বলা হয়েছে যে, ‘আড়ি পাতা নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ ভিত্তিহীন। আগেও হোয়াটসঅ্যাপ এদেশে পেগাসাস স্পাইওয়্যারকে কাজে লাগিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। তবে তার সারবক্তব্য ছিল না, সুপ্রিম কোর্টে হোয়াটসঅ্যাপ সহ মামলার সব পক্ষ অভইযোগ খারিজ করেছে। এই সংবাদ প্রতিবেদনটিও ভারতীয় গণতন্ত্র এবং তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে কলুষিত করার চেষ্টা এবং সম্পূর্ণটাই অতিরঞ্জিত তথ্যের উপর ভিত্তি করে ঘোলা জলে মাছ ধরার চেষ্টা বলে মনে হয়।’
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন