আদালতের নির্দেশের পর ৩১ বছর পর খুলে গিয়েছে জ্ঞানব্যাপী মসজিদের নীচের তল। সরানো হয়েছে ব্যারিকেডও । পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের উপস্থিতিতে, কড়া নিরাপত্তায় পুজো-পাঠ পর্ব অনুষ্ঠিত হয় মসজিদের বেসমেন্টে। বারাণসী আদালতের তরফে জ্ঞানব্যাপী মসজিদের বেসমেন্ট বা নীচের তলে ‘ব্যাস কা তেহখানা’য় হিন্দু পক্ষকে পুজো করার অনুমতি দেওয়া হয়। নির্দেশ পাওয়ার পর কাশী বিশ্বনাথ মন্দির ট্রাস্টের সদস্য গনেশ্বর শাস্ত্রী দ্রাবিড় পুজোপাঠ করে। মঙ্গলারতিও করা হয়। পুজোর সময় উপস্থিত ছিলেন মন্দির কর্তৃপক্ষের প্রাক্তন ও বর্তমান কর্তারা। গোটা প্রক্রিয়াটাই করা হয় অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গেই।
আদালতের নির্দেশের পরপরই জেলা শাসক এস রাজালিঙ্গম তাঁর কার্যালয়ে একটি জরুরি বৈঠক ডাকেন। তারপরে পূজার জন্য নির্ধারিত স্থানে রাতে একটি দ্বিতীয় দফায় আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেন তিনি। এসময় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন বলেই জানা গিয়েছে। এরপরই পূজার প্রস্তুতি শুরু করেন কর্মকর্তারা।
পুরো প্রক্রিয়াটি এতটাই চটজলদি করা হয় যে স্থানীয় বাসিন্দারাও কিছু আভাস পান নি। কর্মকর্তাদের উপস্থিতি সম্পর্কে সচেতন থাকার পরও তারা সেখানে কী করছেন সে সম্পর্কে কেউই অবগত ছিলেন না। এলাকারই এক দোকান মালিক বিনোদ মিশ্র বলেন, “আমরা বুঝতে পারছিলাম কিছু একটা ঘটছে, কিন্তু এত তাড়াহুড়ো করে আদালতের আদেশ কার্যকর করা হচ্ছে তা কখনই অনুমান করতে পারিনি। ৩১ শে জানুয়ারি সারা রাত দোকান খোলা ছিল,”।
প্রস্তুতির ব্যাখ্যা করে একজন প্রবীণ আধিকারিক বলেছেন, “আদেশের নির্দেশ মেনেই আমরা প্রতিমা, পূজা এবং লোহার ব্যারিকেডিংয়ের উপযুক্ত ব্যবস্থা করি"। পুজো শেষ হওয়ার পরে, সমস্ত উত্তরপ্রদেশকে সতর্ক করা হয়েছিল এবং জেলা পুলিশ অফিসার এবং প্রশাসনিক আধিকারিকদের নিয়মিত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। প্রস্তুতি চলাকালীন সাংবাদিকদের প্রবেশে সেখানে নিষিদ্ধ করা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুর ২টো নাগাদ যখন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং বারাণসীর পুলিশ কমিশনার ঘটনাস্থল থেকে বেরিয়ে আসেন, তখনই মিডিয়া জানতে পারে পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। "আদালতের আদেশ মেনে করা হয়েছে," এমনটাই মিডিয়াকে জানিয়েছিলেন জেলাশাসক।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে কথা বলার সময় সরকারী কর্মকর্তা এবং কাশী বিশ্বনাথ ট্রাস্টের সদস্যরা জানিয়েছেন, "আদালত আদেশ দেওয়ার পরপরই, সরকারি কৌঁসুলি সঞ্জয় গৌর ঊর্ধ্বতন সরকারি আধিকারিকদের কাছে আদেশের কপি প্রেরণ করেন। পুরো প্রক্রিয়া আদালতের নির্দেশ মেনেই করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তারা। এমনকী আদালত মূর্তির জন্য রাজভোগের যে ব্যবস্থার কথা বলেছে তাও যথাযথভাবে মানা হয়েছে বলেই দাবি করেন তারা। আবেদনকারী শৈলেন্দ্র কুমার পাঠক আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের জন্য ডিএম-এর কাছে একটি আবেদনও করেন। অন্য একটি আবেদনে, আবেদনকারী দেবতার জন্য রাজভোগের অনুরোধ করেন।
এরপরই ডিএম রাজালিঙ্গম আধিকারিকদের নিয়ে এক বৈঠক করেন। তারপরে তিনি এবং বারাণসীর পুলিশ কমিশনার মুথা অশোক জৈন এবং অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার শিবাসিম্পি চন্নাপ্পা সহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মসজিদ প্রাঙ্গন পরিদর্শন করেন। এরপর ওই স্থানে আরেকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার পর, ডিএম অতিরিক্ত জেলা শাসক(প্রটোকল) শ্রী প্রকাশকে আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের জন্য একটি লিখিত আদেশ জারি করেন। কাশী বিশ্বনাথ ট্রাস্টের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সুনীল ভার্মা) কে তাকে সাহায্যের নির্দেশ দেওয়া হয়।
এডিএম-এর কাছে মূর্তিগুলি হস্তান্তরের জন্য ট্রেজারি অফিসারকে নির্দেশও পাঠানো হয়েছিল। ৩১ জানুয়ারি তখন রাত সাড়ে আটটা এডিএম নিজে ছুটে আসেন মূর্তিগুলি উদ্ধার করতে। ট্রাস্টের সদস্যদের সাইটে তলব করা হয়। রাত ১১টা নাগাদ রাজকোষ থেকে প্রতিমা আনা হয়। পুরোহিত ওম প্রকাশ মিশ্রকে পূজা করার জন্য ট্রাস্ট দ্বারা নিযুক্ত করা হয় এবং ধর্মীয় পণ্ডিত বীরেশ্বর শাস্ত্রী দ্রাবিড়কে পুরোহিতকে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য তলব করা হয়েছিল। রাত দেড়টার দিকে অনুষ্ঠান শেষ হয়। একজন আধিকারিক বলেন, “আবেদনকারী শৈলেন্দ্র কুমার পাঠক বা তার পরিবারের সদস্যদেরকেও ঘটনাস্থলে ডাকা হয়নি যখন পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছিল"।
অন্য একজন কর্মকর্তার মতে, নির্দেশাবলী মেনে দিনে পাঁচবার প্রার্থনা করা হয়েছে। “ছয়জন পুরোহিতকে আচার অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য নিযুক্ত করা হয়েছে, প্রতি চার ঘণ্টায় তাদের শিফট পরিবর্তন করা হচ্ছে,”। কর্মকর্তারা পুজোর স্থানে স্যাঁতসেঁতেতার পরিবেশ এবং ভগ্নদশার কথা উল্লেখ করে মেরামতের জন্য জরুরি প্রয়োজনের কথাও তুলে ধরেছেন। প্রতিমার ওপরের ছাদের দেয়ালের যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে বলেও তারা উল্লেখ করেন। “আদালত থেকে অনুমতি পাওয়ার পর আমরা সেলারের ভিতরে মেরামত করা হবে" বলেই জানিয়েছেন এক আধিকারিক।